চিকিৎসার গাফিলতিতে চিকিৎসক-রোগিণী অনুরাধা সাহার মৃত্যু হয় ১৪ বছর আগে। সেই মামলায় জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের নির্দেশ মেনে এত দিনে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিলেন অভিযুক্ত হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এবং দু’জন চিকিৎসক। তবে অভিযুক্ত অন্য এক চিকিৎসক কোনও টাকা জমা দেননি। মঙ্গলবার দিল্লিতে ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়।
জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন সূত্রের খবর, তাদের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এ দিন ৪০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং চিকিৎসক বৈদ্যনাথ হালদার ২৬ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা কমিশনের কাছেই জমা দেন। কমিশন চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে ৪০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এ দিন তিনি জমা দেন ৩৩ লক্ষ টাকা। ওই চিকিৎসক কমিশনকে জানান, আর্থিক সঙ্কটের কারণে বাকি টাকা মেটানোর জন্য তাঁর কিছুটা সময় চাই। চিকিৎসক বলরাম প্রসাদ তাঁর প্রদেয় ক্ষতিপূরণের ২৬ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকার কিছুই এ দিন জমা দেননি। তাঁকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশন বলেছে, অনুরাধাদেবীর চিকিৎসায় গাফিলতির ক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসক-স্বামী কুণাল সাহারও ভূমিকা রয়েছে। তাই তাঁর প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে আমেরিকার ওহিয়ো-প্রবাসী অনুরাধাদেবীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্বামী কুণালবাবুই ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিলেন। ক্ষতিপূরণের টাকা তাঁরই পাওয়ার কথা। ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাকে কত টাকা মেটাতে হবে, সেই ব্যাপারে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান অভিযুক্তেরা। তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওই মামলার রায় না-হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা কমিশনের কাছেই জমা থাকবে।
১৯৯৮ সালে গরমের ছুটিতে কলকাতায় বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাসী শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনুরাধাদেবী। কিছু দিন চিকিৎসা চলার পরে ওই বছরই ২৮ মে তাঁর মৃত্যু হয়। তার পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে চার চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, বৈদ্যনাথ হালদার, অবনী রায়চৌধুরী ও বলরাম প্রসাদ এবং আমরি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাঁর স্বামী কুণালবাবু। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন অবশ্য প্রথমে তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
কমিশনের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান কুণালবাবু। অনুরাধাদেবীর মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে বিষয়টি ফের জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে পাঠিয়ে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। কমিশনকেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ স্থির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে মোট এক কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর নির্দেশ দেয় কমিশন। মামলা চলাকালীন অন্যতম অভিযুক্ত, চিকিৎসক অবনী রায়চৌধুরী মারা যান। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁর যে-টাকা (২৫ লক্ষ ৯৩ হাজার) দেওয়ার কথা ছিল, আবেদনকারী তা পাবেন না। |