চোপড়ায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পরে প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। অথচ পুলিশ গাড়িটি কিংবা তার চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি। ধরা পড়েনি আরও অভিযুক্তও। অভিযোগকারিণীর বাড়িতে গিয়ে এমন নানা অভিযোগ পেয়ে সোমবার রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পুলিশ সূত্রের খবর, মন্ত্রীর ‘বার্তা’ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মঙ্গলবার ওই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধরা হয়েছে তার মালিক তথা চালককেও। দার্জিলিঙ রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমার বলেছেন, “ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত জাহিদুল হক সহ ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনার সময়ে ব্যবহৃত গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধরা হয়েছে চালককেও। বাকিদের খোঁজে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” সরকারি সূত্রের খবর, রবিবার ও সোমবার দুদিন ধরে কয়েক দফায় ওই মামলার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন উদ্বিগ্ন মন্ত্রী। এমনকী, নিজেও গভীর রাতে অভিযোগকারিণী ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তদন্তে গাফিলতির যে অভিযোগ শুনেছেন তাও ডিজিকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তদন্তের কাজ দ্রুত না-হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ঘটনার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও সব দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েনি। বাসিন্দারা বলছেন, অনেকেই লুকিয়ে রয়েছে। গড়িমসির কথা শুনতে চাই না। সে কথা সাফ ডিজিকে জানিয়ে দিয়েছি।” প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার কালাগছ এলাকায় স্কুলের রাস্তা থেকে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের পরে গলা টিপে খুনের চেষ্টা হয়। ছাত্রীটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁকে নগ্ন অবস্থায় হাইড্রেনে ফেলে অভিযুক্তরা চলে যায়। কিন্তু, জ্ঞান ফিরলে ছাত্রীটি চা বাগান ঘেরার জাল গায়ে জড়িয়ে মহিলা চা শ্রমিকদের কাছে আশ্রয় নেন। তার পরেই বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানান। গোটা ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে চোপড়া। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রায় ১০ দিন উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে থাকার পরে সম্প্রতি ছাত্রী বাড়িতে ফেরেন। ওই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত জাহিদুলের বাবা নাসিরুদ্দিনবাবু চোপড়ার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা বলে পরিচিত। সেই কারণেই পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের অনেকেই বিষয়টি জানিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। সম্প্রতি মন্ত্রী কালাগছের ওই গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখেন। মাঝ রাত পর্যন্ত বাসিন্দাদের অভিযোগ শুনে সেখান থেকেই পুলিশের একাধিক কর্তাকে সতর্ক করে দেন মন্ত্রী। নড়েচড়ে বসে পুলিশ।, ছাত্রীটির পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়ার পরে এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি জানেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও। তিনি এ দিন বলেন, “ডিজিকে সবই বলেছি। আশা করি দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।” |