নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
পুনর্বহালের দাবিতে ব্রিজ কোর্সের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি সংগঠন আচমকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ চলে। ওই সময়ে আন্দোলনকারীরা হুমকি দেন, তাঁরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে ঢুকতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দু-দফায় গৌতমবাবুর কাছে আবেদন করেও কোনও সাড়া মেলেনি। এদিন মন্ত্রী অবশ্য আন্দোলনকারীদের আচরণে ‘বিরক্ত’ হলেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও কথাও বলতে রাজি হননি। পরে অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের কড়া মনোভাব দেখানোয় বিক্ষোভকারীরা পিছু হটেন। দফতরের এক অফিসার জানান, আগে মন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। বিষয়টি সরাসরি মন্ত্রীর দফতরের অধীনও নয়। তার পরেও এমন ঘেরাও, হুমকি দেওয়ায় মন্ত্রী ‘বিরক্ত’ বলে ওই সরকারি অফিসার জানিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা চুক্তির ভিত্তি সিপিএম পরিচালিত মহকুমা পরিষদের সর্বশিক্ষা প্রকল্পে যুক্ত হন। সে জন্য চুক্তির পরে তাঁদের পুনর্নিয়োগের দাবির বিষয়টি নিয়ে মহকুমা পরিষদের সভাধিপতির বিবেচনাধীন বলে ওই সরকারি সূত্রটি দাবি করেছে। তা হলে পরিষদের না-গিয়ে মন্ত্রীকে ঘেরাও করার পিছনে রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কি না সেই প্রশ্নে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শিলিগুড়ি শহর কমিটি। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আমার দফতরের সামনে বসে আমার বিক্ষোভ দেখানোর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিছু লোক সামনে রয়েছেন, কেউ কেউ পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন।” পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এটাও জানান, “আগের রাজ্য সরকারের আমলে এই শহরের মন্ত্রীর দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সাহস কারও ছিল না। আমাদের সরকার আন্দোলনকারীদের এটুকু অধিকার দিয়েছে।” এদিন আন্দোলনকারীরা হিলকার্ট রোডের অনশন মঞ্চে ফেরার পরে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অনশন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক বলেন, “অনশনকারীরা মাওবাদী নয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেমে তাঁরা কোনও ষড়যন্ত্র করেননি। চাকরি ফেরত চেয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর এদিন অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। বিধায়ক হিসাবে বিষয়টি বিধানসভায় তুলব। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারকেও জানাব।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে চলা প্রকল্পে ব্রিজ কোর্সের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। পরে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনকারীরা আগেও আমার কাছে এসেছেন। আমি ওঁদের স্মারকলিপি যথাযথ জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বার আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন।” ব্রিজ কোর্স অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গ শাখার সভাপতি নির্মল সরকার বলেন, “মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়কের আশ্বাসে আপাতত অনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।” কংগ্রেস বিধায়কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়া প্রসঙ্গে নির্মলবাবুর বক্তব্য, “শঙ্করবাবুর মাধ্যমে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। উনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।” |