গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের (জিটিএ) প্রথম নির্বাচনে সিপিএম যোগ দেবে কি না, তা ঠিক করতে পাহাড়ের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার জন্য দার্জিলিং জেলা কমিটিকে পরামর্শ দিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এখন দার্জিলিং পাহাড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক ভাবে কী করতে হবে, বেঁধে দিলেন তার রূপরেখাও।
বিমানবাবুর উপস্থিতিতে মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে দলের নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয়। বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে কোনও আন্দোলন বা কর্মসূচি ঠিক হয়নি। তবে সাংগঠনিক কাজকর্ম চলবে। জিটিএ নির্বাচন-সহ পাহাড়ের পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখব। জিটিএ নির্বাচনে যোগ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
সিপিএম সূত্রের খবর, এ দিন সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের শুরুতেই জিটিএ গঠনের প্রক্রিয়া, তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তি এবং সেই ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির প্রসঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়। রাজ্য সরকার জুন মাসের মধ্যে জিটিএ-এলাকায় তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলেছে। তার পরে জিটিএ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তার দিনক্ষণ স্থির হয়নি। তাই প্রাথমিক ভাবে জিটিএ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এখনই না-ভেবে পাহাড়ে সাংগঠনিক কাজকর্ম বাড়ানো এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখার পরামর্শ দেন বিমানবাবু। এই বিষয়ে দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকারকেই বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের জেলা কমিটিকে আপাতত পাহাড়ে সভা-সমিতি-মিছিলের সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। বতর্মানে পাহাড়ের তিন মহকুমায় কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে-পড়া দলের শাখা কমিটিগুলিকে নতুন করে সাজাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিওয়াইএফআই-কে আরও ‘সক্রিয়’ ভাবে কাজ করতে হবে বলে বৈঠকে ঠিক হয়েছে। শাখা সংগঠনগুলিকে ‘চাঙ্গা’ করার কাজে পাহাড়ের নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক, কৃষ্ণ বাহাদুর ওয়াতারদেরও বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। চা-বাগানগুলিতে সংগঠনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া, নেপালিতে প্রচারপত্রের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন বক্তব্য আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতেও বলা হয়েছে। পাহাড়ে দলের সাংগঠনিক কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট নিয়মিত রাজ্য কমিটিকে পাঠাতেও বিমানবাবু নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
গোর্খা পার্বত্য পরিষদের প্রথম নির্বাচন থেকেই বামফ্রন্ট লড়েছে। প্রথম বার দার্জিলিং সদরের দু’টি আসনে জিতেওছিল সিপিএম। কিন্তু তার পরে আর ওই নির্বাচনে জেতেননি বাম-প্রার্থীরা। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ‘প্রতাপশালী’ হওয়ার অনেক আগেই সাংগঠনিক ভাবে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ে সিপিএম। সম্প্রতি দার্জিলিং শহরে মে দিবসের অনুষ্ঠান এবং অন্য একটি কর্মিসভায় জনসমাগম দেখে জেলা সিপিএম নেতাদের একাংশ অবশ্য উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর কিছু সদস্যের দাবি, পাহাড়ের রাস্তা, পানীয় জল, কর্মসংস্থানের মতো স্থানীয় বিষয়গুলিকে সামনে রেখে টানা প্রচার-কর্মসূচি চালিয়ে গেলে জিটিএ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ‘অনুকূল’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেই পরিস্থিতিতে দলের রাজ্য সম্পাদকের তরফ থেকে সংগঠনে জোর দেওয়ার পরামর্শ পাহাড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটা সাহায্য করবে বলে ধারণা ওই সিপিএম নেতাদের। |