গুরুত্ব অ্যানিমেশন, গেম-এ,
আসছে নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নীতি
অ্যানিমেশন এবং গেমিং শিল্পের পাশাপাশি হার্ডঅয়্যারে গুরুত্ব দিয়ে নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতি চূড়ান্ত করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। চলতি তথা বর্ষপূর্তির মাসেই এই নীতি চূড়ান্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাম সরকার এই শিল্পে বাঙালির বাড়বাড়ন্ত দেখে উন্নয়নের অস্ত্র হিসাবে জোর দিতে চেয়েছিল সফটঅয়্যার ও সংশ্লিষ্ট শাখার উপরে। বাম আমলের শেষ দিকে তৈরি হয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিও। নতুন সরকার মনে করে, তা ছিল অসম্পূর্ণ। তাই সফটঅয়্যার, হার্ডঅয়্যার শিল্প ও ই-পরিষেবার ক্ষেত্রে সুসংহত নীতি নিয়ে এগোতে চাইছে তারা। ক্ষমতায় এসে এন নারায়ণমূর্তি এবং শ্যাম পিত্রোদার মতো আইটি বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে একটি কমিটি তৈরি করে রাজ্য। তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করেই নতুন খসড়া নীতি তৈরি করা হয়েছে।
এই নীতিতে অন্যতম প্রধান গুরুত্ব থাকবে অ্যানিমেশন ও গেমিং শিল্পে। কম্পিউটারের জন্য তৈরি নানা খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাড়ছে অ্যানিমেশন-এর ব্যবসাও। এই দু’টি ক্ষেত্রে বাঙালিদের দাপট থাকলেও রাজ্যে তা সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। সরকার চায়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে অ্যানিমেশন ও গেমিং শিল্পের প্রসার ঘটাতে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, লক্ষ্য পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা, কারিগরি ও ফাইন আর্টস-এর কিছু পাঠ্যক্রমে ওই দু’টি বিষয় আনার কথা ভাবা হয়েছে। রয়েছে স্থায়ী ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ তৈরির পরিকল্পনাও ।
নতুন খসড়া নীতির আরও একটি লক্ষ্য হল তুলনামূলক ভাবে কম দক্ষতার কাজে (লো এন্ড জব) দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওই মুখপাত্র জানান, অনেক বিদেশি ব্যাঙ্ক রয়েছে, যাদের ‘ব্যাক অফিস’ চলে ভারত থেকে। এই ‘ব্যাক অফিস’-এর কাজকে তুলনামূলক ভাবে কম দক্ষতার কাজের ক্ষেত্র বলে, যা এ দেশ থেকে ফিলিপিন্সে চলে যাচ্ছে। রাজ্য চায়, এই ‘ব্যাক অফিসের’ কাজগুলো রাজ্য থেকে হোক, যাতে কম মেধার মানবসম্পদের আরও বেশি সংখ্যায় কর্মসংস্থান হয়। নতুন নীতিতে তাই বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র, ব্যাঙ্ক, বিমা, খুচরো ব্যবসা ও তার বণ্টন, ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি শিল্পের ‘ব্যাক এন্ড’ ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হবে।
জমির সমস্যাহীন শিল্প বলতে এই মুহূর্তে তথ্যপ্রযুক্তি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ভুবন জুড়ে বাঙালি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাম সরকার তাই পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের মুখ বদলাতে আইটি-কে আঁকড়ে ধরেছিল। তাই উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো সংস্থা এই রাজ্যে পা রাখতে শুরু করে। তবে তা ছিল মূলত কলকাতা ভিত্তিক। ফলে যে লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে জোর দেওয়া হয়েছিল, তার প্রসার ঘটেনি। আসানসোল-দুর্গাপুর-শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে আইটি শিল্প তৈরির কথা ভাবা হলেও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। নতুন সরকার চাইছে, ওই জায়গাগুলির সঙ্গে পুরুলিয়া, বড়জোড়া, বোলপুরেও আইটি-র পরিকাঠামো গড়তে।
তথ্যপ্রযুক্তির সংশ্লিষ্ট যন্ত্রশিল্পের (হার্ডঅয়্যার) প্রসার চাইছে রাজ্য। এই লক্ষ্যে জোর দেওয়া হচ্ছে হার্ডঅয়্যার শিল্পের পরিকাঠামো তৈরিতে। সরকারের ওই মুখপাত্র জানান, এখন হার্ডঅয়্যার সামগ্রীর বেশিটাই আমদানি হয়। খরচ হয় প্রচুর। তা থেকে সরে আসতে গত বছর হার্ডঅয়্যার নীতি তৈরি করেছে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, এই শিল্পে বিনিয়োগকারীদের অনুদান দেওয়া হবে। রাজ্য-ও হার্ডঅয়্যার শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিভাষায় যাকে বলে ‘ফ্যাব সেক্টর’ (সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্টস), সেই ক্ষেত্রে ডিজিটাল ও অ্যানালগ-মিক্সড সিগন্যাল২ খাতে বিনিয়োগকারীদের রাজ্য পরিকাঠামোগত সুবিধা দেবে।
অভিজ্ঞতা থেকে প্রশাসনিক সংস্কারের কথাও বলছে রাজ্য। তার মধ্যে অন্যতম ই-পরিষেবার পরিসর বাড়ানো। যেমন, সরকারের সব বণ্টন ও নিলাম হবে অনলাইনে। সব সরকারি নথি ও তথ্য ডিজিটাইজড করা হবে। নতুন নীতি প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন দফতরের অচল হার্ডঅয়্যার ও সফটঅয়্যার বিক্রি করার জন্য নীতি তৈরি করা হবে। নেপালি, উর্দু লেখার ক্ষেত্রে ‘ইউনিকোড’ ব্যবহার করা হবে। নতুন নীতি রূপায়ণে কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে। যেমন, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের নাম হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক্স দফতর। দফতরের অধীনে ডাইরেক্টরেটও তৈরি হবে। লগ্নিকারীদের জন্য থাকবে ‘এক জানলা’ ব্যবস্থা। ওয়েবেল পুনর্গঠিত হচ্ছে। ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টারের পশ্চিমবঙ্গ শাখাকে ব্যবহার করা হবে। এ জন্য রাজ্য ‘রুলস অব বিজনেস’ সংশোধন করে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতর থেকে বিষয়টিকে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের হাতে নিয়ে আসা হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে অন্য দফতরগুলি, জেলা ও এনআইসি-র সমন্বয় তৈরি হতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.