নতুন সরকার এসেই রাজ্য আবাসন পর্ষদের ‘চেয়ারম্যান কোটা’ বাতিল করে দিয়েছিল। পর্ষদের পরিচালন বোর্ডের খোলনলচে বদলে সরিয়ে দেওয়া হয় বাম আমলের সব পুরনো সদস্যকে। এ বার নতুন সরকারের গড়া বোর্ডের কাজকর্মেও লাগাম পরানোর ব্যবস্থা হল। বোর্ডের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হল দু’টি বিশেষ কমিটি। একটি কমিটি পর্ষদের আয়ব্যয় এবং কারিগরি বিষয়ের উপরে নজরদারি চালাবে। আর দ্বিতীয় কমিটি তৈরি হয়েছে যৌথ উদ্যোগ ও সহায়ক ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির কাজকর্মের উপরে নজর রাখার জন্য।
• প্রথমটিকে বলা হচ্ছে ‘টেকনিক্যাল-কাম-ওয়ার্ক’ কমিটি। তার শীর্ষে আছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্মাণ সংস্থা হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স বা এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে আছেন ন’জন সদস্য। পর্ষদের আয় ও ব্যয় যাচাই করা ছাড়াও বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে নজর রাখার দায়িত্ব বর্তেছে ওই বিশেষ কমিটির উপরে। • দ্বিতীয়টি বিশেষ ‘মনিটরিং’ কমিটি। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্তা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় তার চেয়ারম্যান। ওই কমিটিতেও ন’জন সদস্য আছেন। সরকারি আবাসন প্রকল্পের মান উন্নয়নে নির্দিষ্ট ছকে বিশেষ নজরদারির প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে বলে মঙ্গলবার মহাকরণে জানান আবাসন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ‘পরিবর্তন’-এর পরে নতুন সরকার তো পর্ষদের পুরো পরিচালন ব্যবস্থাই ঢেলে সেজেছিল। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই ফের সেখানে নজরদারির জন্য বিশেষ কমিটির দরকার হচ্ছে কেন?
আবাসনমন্ত্রী অরূপবাবু বলেন, “অনেক দিন ধরেই পর্ষদের পরিচালনায় বেশ কিছু অসঙ্গতি চলে আসছিল। সেগুলো শুধরে নেওয়ার জন্যই ওই দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পর্ষদের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করছি।” মন্ত্রীর অভিযোগ, আগের সরকারের আমলের অনেক আবাসন প্রকল্পই অত্যন্ত নিম্ন মানের। সেগুলি আদৌ বসবাসের উপযুক্ত নয়। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নত মানের আবাসন প্রকল্প গড়তেই নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে বলে জানান অরূপবাবু।
পর্ষদের কাজে কী ধরনের ‘অসঙ্গতি’ চলে আসছে? পর্ষদ সূত্রের খবর, বাম জমানায় পর্ষদের চেয়ারম্যান (পদাধিকারবলে আবাসনমন্ত্রী) মাসিক বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন না। ফলে ভাইস চেয়ারম্যানই ছিলেন সর্বেসর্বা। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পর্ষদের আয় ও ব্যয়ের হিসেবপত্রে বহু গোলযোগ দেখা দিলেও বোর্ড মিটিংয়ে পাশ করিয়ে নিয়ে সেগুলো চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা হত। এ বার থেকে বোর্ডের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য টেকনিক্যাল কমিটির কাছে পাঠাতে হবে। কমিটি তা পাশ করলে তবেই পর্ষদ কাজ করতে পারবে।
আর দ্বিতীয় বিশেষ কমিটির মূল কাজ যৌথ সংস্থা ও সহায়ক সংস্থাগুলিকে ঘিরে। পর্ষদের ওই সূত্রেই জানানো হয়, দু’ধরনের সংস্থার পরিচালন বোর্ডেই সরকারের প্রতিনিধিরা থাকেন। কিন্তু ওই সব বোর্ডের আলোচ্য, তার সিদ্ধান্ত পর্ষদ বা আবাসন দফতর জানতে পারত না। যেমন, কোন আবাসনে কত শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা হবে, নিম্ন আয়ের লোকেদের জন্য কতগুলি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে, পুরসভার নলবাহিত পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হবে কি না এর কিছুই জানা যেত না। এ বার স্থির হয়েছে, যৌথ ও সহায়ক সংস্থার বোর্ডের বৈঠকের আগে আলোচ্য বিষয়ের তালিকা পাঠাতে হবে পর্ষদের কাছে। মনিটরিং কমিটি তা দেখে সরকারের বক্তব্য জানিয়ে দেবে সংস্থাগুলির পরিচালন বোর্ডের সরকারি প্রতিনিধিদের। পরে সংস্থাগুলির সিদ্ধান্তও কমিটির কাছ থেকে পাশ করিয়ে নিতে হবে।
অর্থাৎ নিছক নজরদারিতেই ওই দু’টি কমিটির দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না। পর্ষদের কাজকর্মে নিয়ন্ত্রকের একটা ভূমিকাও থাকছে তাদের। দু’টি বিশেষ কমিটির এই ‘ছাঁকনি’ থাকায় পর্ষদের কাজে আরও স্বচ্ছতা আসবে বলে মন্ত্রীর আশা। আবাসনমন্ত্রী জানান, এ বার থেকে ভাল ভাবে খোঁজখবর নেওয়ার পরেই কোনও এলাকায় আবাসন প্রকল্প শুরু করবে পর্ষদ।
প্রকল্পের কাজ চলার সময়েও পর্যায়ক্রমে নজরদারি চালানো হবে। আবাসনের জন্য চিহ্নিত জমিতে দখলদার আছে কি না, সীমানা নির্দিষ্ট করা আছে কি না, মালপত্র নিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না সমীক্ষা চালিয়ে সবই দেখে নেওয়া হবে। প্রকল্প শুরু করার আগে পরীক্ষা করা হবে মাটি এবং জলস্তরও। প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্তত পাঁচ বার কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। |