নলকূপে নিষেধাজ্ঞা রদ
বিপদ হতে পারে মৃদু ভূমিকম্পেই, মত বিজ্ঞানীদের
শুধু আর্সেনিক-ফ্লুওরাইডের সমস্যা নয়। রাজ্য সরকার ভূগর্ভের জল উত্তোলনের বিধি শিথিল করায় যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মাটি ধসে পড়ার সম্ভাবনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। ভূ-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, মাটির তলা থেকে যত বেশি জল তোলা হবে, মাটির উপরের স্তরের স্থিতাবস্থা তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। ফলে খুব অল্প তীব্রতার ভূমিকম্প কিংবা সামান্য বন্যায় সহজেই মাটি ধসে পড়তে পারে।
যেমন খড়্গপুর আইআইটি’র ভূ-বিজ্ঞানী শঙ্করকুমার নাথ মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা খুবই খারাপ। মাটির একেবারে উপরের স্তর এমনিতেই খুব নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। “উপরের স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগেই মাটি বসে যাওয়ার আশঙ্কা। এর পরে আরও জল তোলা হলে মৃদু ভূমিকম্পেই ঘরবাড়ি-সহ মাটি ধসে পড়তে পারে। বন্যার সময়ে যেখানে-সেখানে ফাটল ধরে জমি বসে যেতে পারে। ভূমিক্ষয়েরও আশঙ্কা প্রভূত।” বলেন শঙ্করবাবু।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভূ-তাত্ত্বিক তারকনাথ পালের মন্তব্য, “ভূগর্ভ থেকে বেশি জল তুলে নিলে মাটির নীচের ভারসাম্যটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আর্সেনিক-ফ্লুওরাইড-লোহার মতো মৌল আরও বেশি বেশি করে জলে মিশবে। ভূগর্ভের জল আরও দূষিত হয়ে পড়বে।”
নলকূপে বলবৎ থাকা নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার মধ্যে অশনি সঙ্কেত দেখছেন রাজ্য আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইড টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথও। যাঁর দাবি, “এ ভাবে ঢালাও পাম্প বসানোর অনুমতি দেওয়াটা কেন্দ্র ও রাজ্যের সংশ্লিষ্ট আইনের সম্পূর্ণ বিরোধী। প্রধানত ভূগর্ভের জল বাঁচাতেই ওই আইন তৈরি হয়েছিল। ভূগর্ভের জল ইতিমধ্যে ব্যাপক ভাবে সেচের কাজে ব্যবহার করায় আমাদের খাদ্য-শৃঙ্খলে আর্সেনিকের ছোঁয়া লেগেছে। এখন চাষিদের ঢালাও জল তোলার অনুমতি দেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হবে।”
কুমারজ্যোতিবাবুর প্রশ্ন, “ভূগর্ভের জল তোলা নিয়ে জেলায় জেলায় তো নিয়ন্ত্রণ কমিটি হয়েছে! তাদের তা হলে রাখার দরকার কী?”
কী ছিল কী হল
• বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেটে নিয়ন্ত্রণ
• অনুমোদনসাপেক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ
• অনুমোদনের জন্য নির্দিষ্ট ফি
• বাড়ি-আবাসনেও এক নিয়ম
• ৩৮টি ব্লক ছাড়া সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ লোপ
• বিদ্যুৎ সংযোগে অনুমোদন লাগবে না
• পাম্প চালাতে চাষির ফি লাগবে না
• ক্যান্টনমেন্ট-শিক্ষা সংস্থা এবং হাসপাতালে ছাড়
ভূ-বিজ্ঞানী কিংবা আর্সেনিক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানের এই সব আশঙ্কাকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না রাজ্যের ক্ষুদ্রসেচ দফতরের কর্তারা। ভূগর্ভের জলস্তর নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি রকমের’ উদ্বেগেরও কোনও কারণ তাঁরা দেখছেন না। দফতরের পদস্থ এক কর্তার বক্তব্য, “ভূগর্ভের জল সংরক্ষণের নামে রাজ্যের কৃষকদের সেচের জল তুলতে দেওয়া না-হলেও সেই জল পশ্চিমবঙ্গের মাটির নীচে আবদ্ধ হয়ে থাকবে না। তা ভূগর্ভ দিয়েই অন্যত্র বয়ে যাবে। অন্য জায়গার কৃষকেরা তা তুলে নিয়ে বাড়তি শস্য ফলাবেন। অথচ এ রাজ্যের চাষিরা জলের অভাবে মার খাবেন।” পশ্চিমবঙ্গে চাষের জমি এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত যে, অধিকাংশ কৃষকের বিদ্যুৎচালিত ছোট পাম্পসেট বসালেই চলবে বলে দাবি করেন ওই ক্ষুদ্রসেচ-কর্তা।
পাশাপাশি দফতরের কর্তাদের এ-ও দাবি: পঞ্জাব-হরিয়ানার মতো রাজ্য ভূগর্ভ থেকে অনেক বেশি জল তোলে। ওঁদের মতে, ভূগর্ভের যে স্তর পর্যন্ত বর্ষার জল নতুন ভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে সঞ্চিত হয়, চাষের কাজে তার পরিকল্পিত ব্যবহার জরুরি। কারণ, বর্ষার আগে জলস্তর নেমে গেলেও বর্ষার পরে তা আবার আগেকার জায়গায় ফিরে আসে। এক কর্তার কথায়, “আমরা গত দশ বছরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বর্ষার আগে-পরের ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবস্থা খতিয়ে দেখেছি। তার ভিত্তিতে নিরাপদ সীমা বজায় রেখে চাষের কাজে জল ব্যবহার করতে দেওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতিরিক্ত সাবধানতা যাতে রাজ্যের কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত না-করে, তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.