সমালোচনার সঙ্গে চেষ্টাটাও স্বীকার করুন
ছোট ছোট কিছু ভুলকে আতস কাচে অনেক বড় করে দেখে গত এক বছরে তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা না করার অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির মুখে আজ মহাকরণে মমতা বলেন, “কিছু ভুল যে হয়েছে, সেটা অস্বীকার করি না। কিন্তু এক জন খারাপকে দেখে যেমন সবাইকেই খারাপ বলা যায় না, ঠিক তেমনই এই ছোট ছোট ভুলগুলিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হাতিয়ার করে রাজ্যের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশিকা তৈরি হতে পারে না।” তাঁর বক্তব্য, “যা কিছু করতে চাইছি, সবটাই মা-মাটি-মানুষকে ঘিরে। কৃষি ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। গত এক বছরে ফলন বেড়েছে। চাষিরা যাতে বেশি লাভের মুখ দেখতে পান, সে জন্য বিকল্প চাষে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। ডাল, গম, তৈলবীজ প্রভৃতি নানা ধরনের চাষের সুযোগ বেড়েছে। ৪৩১টা হিমঘর তৈরি হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড তৈরি হচ্ছে। আমার কাছে পারবো না বলে কোনও কথা নেই।”
মহাকরণে এখন সাজো সাজো রব। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি দফতরের কাজকর্মের সমীক্ষায় ব্যস্ত। তারই মাঝে জবাব দিলেন আনন্দবাজারের প্রশ্নের।
প্রশ্ন: ৩৪ বছরের বাম শাসনের পর আমূল পরিবর্তন কোথায়?
মমতা: পরিবর্তন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। গত এক বছরে অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। কিন্তু একটা বীজ বপন করলে এক নিমেষে তা থেকে বড় গাছ তৈরি হতে পারে না। ফুল-ফল পেতে একটু অপেক্ষা করতে হয়। কিছু ছিদ্রান্বেষী আছেন, যাঁরা বীজ বপন করার সঙ্গে সঙ্গে কেন ফুল আর ফল পাওয়া যাচ্ছে না, তার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিতে শুরু করেছেন।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনিই তো বলেছেন, একশো শতাংশ কাজ করে ফেলেছেন?
মমতা: নিশ্চয়ই বলেছি। পাহাড়, জঙ্গলমহল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে একই সঙ্গে একশো ভাগ কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি তা হলে তৃপ্ত?
মমতা: একই সঙ্গে তৃপ্ত এবং অতৃপ্ত। তৃপ্ত, কারণ মাত্র এক বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক, জমির মানচিত্র, কর্মসংস্থান ব্যাঙ্ক এ সবই করা সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘ বাম-শাসনে বিডিও স্তরের আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দেওয়া হয়েছিল। এখন পঞ্চায়েতের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের সংযোগ সাধন করা হয়েছে। শিশু মৃত্যু শতকরা ২ ভাগ কমেছে। এ সবই আমাকে তৃপ্ত করে। কিন্তু তৃপ্তি একটা আপেক্ষিক শব্দ। এখন অনেক পথ চলা বাকি।
প্রশ্ন: যেমন শিল্পায়নে? প্রধান শিল্প সংস্থাগুলির অর্ধেক সিইও-ই তো দেশে শিল্পায়নের পথে আপনাকেই প্রধান বাধা বলে মনে করছেন। তা হলে রাজ্যে শিল্প আসবে কী করে?
মমতা: শিল্প আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর আমাদের গায়ে শিল্প-বিরোধী তকমা লাগিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার হয়েছে। কিন্তু আমি শিল্প-বিরোধী নই। বড় শিল্প না হলে রাজ্যে বিপুল কর্মসংস্থান হবে না, সে কথা আমি জানি। আমি জমি অধিগ্রহণেরও বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা গরিব-কৃষকের পক্ষে। এই দুই চরম অবস্থানের মাঝখানে একটা রাস্তা আমাদের বের করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামন্তবাদী মনোভাব নেওয়ার আমি বিপক্ষে। আবার কোনও বেসরকারি সংস্থা যদি কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করে, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
প্রশ্ন: হিলারি ক্লিন্টনের সফরে রাজ্যে লগ্নি আসবে?
মমতা: একটা বৈঠকেই রাতারাতি সব হয়ে যাবে, এমন ভাবাটা ভুল। একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে। এ বার আমাদের মুখ্যসচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং কনসাল জেনারেলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।
প্রশ্ন: কিন্তু আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট তুলে না নিলে শিল্প হবে কী করে?
মমতা: এ ব্যাপারে আমরা কেস-টু-কেস সমীক্ষা করছি। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা ছাড় দিয়েছি। জমি অধিগ্রহণের নামে আগের সরকার জমির দালালি করত। আমরা মনে করি, সেটা আমাদের কাজ নয়।
প্রশ্ন: একই অভিযোগ তো তৃণমূলের বিরুদ্ধেও উঠছে। সিন্ডিকেটের জুলুম?
মমতা: একটা-দু’টো বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখিয়ে তৃণমূলের চরিত্রহনন করা হচ্ছে। দলীয় সহকর্মীদের আমি ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছি। বলেছি অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্ন: আপনি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না কেন?
মমতা: (হাসি) একদম অসত্য। প্রতিদিন কত কাগজে, কত চ্যানেলে কত অসত্য, অর্ধসত্য প্রচার হয়ে চলেছে। সহিষ্ণুতা না থাকলে সেটা সম্ভব হয় কী করে? আসলে এটাও সিপিএমের প্রচার। এক বছরে সব সমস্যার সমাধান করে দেব, এমন অহঙ্কার আমি করি না। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসত্যকে আমি অপছন্দ করি। বর্ষপূর্তির লগ্নে সকলের কাছে এটাই অনুরোধ, সমালোচনা করুন, কিন্তু ভাল কাজের যে চেষ্টা এই নতুন সরকার করছে, মন্ত্রীরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন, আমি জেলায় জেলায় ঘুরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি, সেগুলোও স্বীকার করুন। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এক বছরে জঙ্গলমহলে হিংসাত্মক ঘটনার সংখ্যা ১৮৩ থেকে ১৩-তে এসে দাঁড়িয়েছে। সংসদে দাঁড়িয়ে চিদম্বরমও জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরে আসার জন্য প্রশংসা করেছেন। রাজ্যে সংখ্যালঘু এবং তফসিলি উপজাতি মানুষের জন্য বহু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.