জঙ্গিপুর পুর এলাকার রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে পানীয় জের ঘোর আকাল দেখা দিয়েছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় শহরের সমস্ত নলকূপই কার্যত অচল। ভরসা শুধুই পুরসভার পাইপ লাইনের জল। কিন্তু পাইপ লাইন থেকে পাম্প লাগিয়ে বহু বাড়িতেই জল সরাসরি নিজস্ব রিজারভারে তুলে নেওয়ার ফলে পাইপ লাইনের জলও অনেকেই পাচ্ছেন না।
রাস্তায় লাগানো পুরসভার পানীয় জলের কল থেকেও জল পড়ছে সরু সুতোর মতো। গত কয়েক দিনে তাই বিশেষ অভিযান চালিয়ে রঘুনাথগঞ্জের বেশ কয়েকটি বাড়ির জলের সংযোগ লাইন কেটে দিয়েছে পুরসভা। সতর্কও করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে। পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “উপায় ছিল না। বাধ্য হয়েই শহরের বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েক জনের জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার এই অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া হবে।” |
মোট ২০টি ওয়ার্ড রয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভায়। ৫.১৮ বর্গকিমি এলাকা নিয়ে জঙ্গিপুর শহরে রয়েছে ১২টি ওয়ার্ড। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি রঘুনাথগঞ্জ শহরের আয়তন ২.৫৯ বর্গ কিমি। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বাস করেন সে শহরে। সরকারি হিসেবে দৈনিক প্রায় ৬০ লক্ষ লিটার জল দরকার। দুটি শহরে পৃথক দুটি জলাধার রয়েছে ৯ লক্ষ লিটারের। বিদ্যুৎ সরবরাহ আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। ভাগীরথী থেকে জল তুলে দুটি শহরে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তাতেও সঙ্কট মিটছে না। পুরপ্রধান জানান, এই মুহূর্তে দুটি শহরে ১৮০০ বাড়িতে জলের পাইপ লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মাসে ৩৫ টাকা করে তাদের কাছ থেকে জল করও নেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে জলস্তর নেমে যাওয়ায় বাড়ির নলকূপগুলিতে জল তোলা যাচ্ছে না। কারণ শহরের মধ্যে বেআইনি ভাবে অন্তত শতাধিক সাবমার্সিবল পাম্প চলছে বিভিন্ন বাড়িতে। অনুমতি ছাড়াই সেগুলি চালানোর ফলে সাধারণ নলকূপ কাজ করছে না।
এগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইছি না আমরা। জলসঙ্কটে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে বালিঘাটা পল্লি। সেখানে পাইপ লাইন থাকলেও জল যাচ্ছে না। ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিকাশ নন্দ বলেন, “এলাকার মানুষ বহু বার পুরসভায় ধর্না দিয়েছেন জলের দাবিতে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। গত দু’দিনে পুরসভার অভিযানেও অবস্থার সে ভাবে বদল ঘটেনি। জল পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। স্থানীয় বাসিন্দা অশনি হালদার বলছেন, “জলের জন্য রোজ মারামারি হচ্ছে পাড়ায়। কল বসেছে কিন্তু তাতে জলের ধারা এমনই যে একটা বালতি ভর্তি হতেই ১৫ মিনিট লাগছে। কোথাও বা জলই পড়ছে না। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সমীর পণ্ডিত বলেন, “জল নিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে পুরসভার বৈঠক করা উচিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কিন্তু পুরবোর্ডকে প্রতি দিন বলেও তারা সক্রিয় হননি।” |