পেশায় গুণিন এক বৃদ্ধকে গলা কেটে খুনের পরে হরিহরপাড়ার আদিবাসীপাড়া বাবুপাড়া-শিবপুকুরে পুলিশ ওই গ্রামেরই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। গঙ্গারাম মালপাহাড়িয়া (৭৭) নামে ওই বৃদ্ধ গুণিন ছিলেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নিজের বাড়ির পাশেই পড়েছিল তাঁর দেহ। মাথাটি বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে আদারপাড়ায় পুরনো শ্মশানঘাট লাগোয়া একটি পাট খেত থেকে। ওই শ্মশানে একটি বেদিতে সিঁদুর-জবা ফুল পড়ে ছিল। ছিল রক্তেরও চিহ্ন। হরিহরপাড়ার বিধায়ক সিপিএমের ইনসার আলি বিশ্বাসও বলেন, “ওই বৃদ্ধ পেশায় গুণীন ছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। সেই বিদ্বেষ থেকেই এই খুন কি না, তা পুলিশের উচিত তদন্ত করে দেখা।”
তবে মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে গ্রামবাসী এক মহিলা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, “গঙ্গারামবাবুর পরিবার আগে থাকতেন দৌলতাবাদ থানা এলাকার একটি গ্রামে। বছর ১২ আগে তিনি সপরিবারে এই আদিবাসীপাড়ায় উঠে আসেন। কিন্তু তখন ওই পাড়ার কিছু বাসিন্দা তাঁদের এই চলে আসাটা মেনে নিতে পারেননি। তাই তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন প্রতিবেশীর গ্রাম্য বিবাদ লেগেই থাকত। সেই বিবাদের কারণেই ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গারামবাবুর গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেঁচিয়ে কাটা হয়েছে। তাঁর শরীরে পনেরো থেকে কুড়িটি ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও খুন করা হয়েছে। |
তারপরে তাঁর দেহ ও মুণ্ড আলাদা করে দু’জায়গায় ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় জেলাপরিষদ সদস্য কংগ্রেসের রফিকুল ইসলামও বলেন, “দৌলতাবাদ থেকে এসে ওই পরিবার বসত গড়ায় দীর্ঘ দিন ধরে যারা আদিবাসীপাড়ায় বাস করছেন, তাদের অনেকেই এই পরিবারকে মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিবাদের জেরে ওই পরিবারের সদস্যরা হরিহরপাড়া থানায় এর আগে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সামান্য বিবাদের জেরে ওই খুনের ঘটনা মানা যাচ্ছে না। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে।”
এদিন সন্ধ্যায় ট্যারা মাল, সনাতন মাল ও টুনি মাল নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাঁদের বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান। ধৃত সনাতন মাল ওই বৃদ্ধের খুড়তুতো ভাই। ওই বৃদ্ধের ছোট ছেলে শিবু মালপাহাড়িয়া পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, ‘গ্রাম্য বিবাদের জেরে ধৃত তিন জন এর আগে আমার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ঘটনার দিন আমরা দুই ভাই বাড়ির বাইরে ছিলাম। সেই সুযোগ নিয়ে ওই তিন জন আমার বাবাকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে।’ বছর দু’য়েক আগে গঙ্গারামবাবুর স্ত্রী মারা যান। ঘটনার সময়ে তাঁর দুই ছেলে বাড়ির বাইরে ছিলেন। বড় ছেলে বিশু মালপাহাড়িয়া রাজমিস্ত্রির কাজে বর্ধমানে থাকেন। ছোট শিবু মালপাহাড়িয়া হরিহরপাড়ার একটি ইটভাটায় কাজ করেন। এদিন বিশু বাড়ি ফিরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিবু বলেন, “ঘটনার সময়ে আমরা দুই ভাই বাড়ির বাইরে ছিলাম। বাবা রাত দু’টো নাগাদ শৌচালয়ে যেতে বেরিয়েছিলেন। তারপরে রাতেই তাঁকে খুন করা হয়।” পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রামের বেশ কয়েক জনকে আটক করে। পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আদিবাসীপাড়ার প্রায় ১৫-২০ ঘর মাল সম্প্রদায়ের আদিবাসী বাস করেন। হরিহরপাড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মির আলমগীর বলেন, “কেন ওই বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশের তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” |