দাবার বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের চারটে গেমই এখনও পর্যন্ত ড্র থাকল। আনন্দ আর গেলফাঁ দু’জনেরই ২ পয়েন্ট। কিন্তু মঙ্গলবারই সবচেয়ে ম্যাড়মেড়ে, বিরক্তিকর গেম হল। দর্শকদের কাছে মোটেও উপভোগ্য নয়। ৩৪ চালের পর চতুর্থ গেম ড্র মেনে নিল দুই সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারই। বোর্ডে ওই সময় সাদা ঘুটি নিয়ে খেলা গেলফাঁর হাতে নৌকা আর গজ। কালোতে আনন্দের নৌকা আর ঘোড়া। সঙ্গে দু’জনেরই হাতে পাঁচটা করে বোড়ে। টেকনিক্যালি গেলফাঁ সামান্য সুবিধেজনক জায়গায় থাকলেও এ রকম সর্বোচ্চ পর্যায়ের দাবা-যুদ্ধে সেটা দারুণ কিছু নয়। ড্র-ই স্বাভাবিক পরিণতি এ রকম এন্ড গেম পজিশনের।
আনন্দের চ্যালেঞ্জারের একটা জিনিস আমার বেশ আশ্চর্যের লাগছে। পাড়ার রকে পেতে বসা দাবা বোর্ডেও সাধারণত সাদা ঘুটিতে লোকে আক্রমণাত্মক আর কালো ঘুটিতে ডিফেন্সিভ খেলে। গেলফাঁকে কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও সম্পূর্ণ উলটো স্ট্র্যাটেজি নিতে দেখলাম এখনও পর্যন্ত। কালো নিয়ে খেলা দুটো গেমেই বরং ওকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক দেখাল। সাদাতে কেমন যেন জড়োসড়ো। হতে পারে, এটাই ওর বৈশিষ্ট্য। কিংবা কালোতে ওর হোমওয়ার্ক, আগাম চালের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা, পরিকল্পনা সাদার তুলনায় বেশি।
যদিও এ দিন সাদা নিয়ে খেলে কুইন্স পন ওপেনিংয়ের পরে ১০ নম্বর চালে দ্বিতীয় গেমের মতো নৌকার চাল না দিয়ে মন্ত্রীর চাল দিয়ে আনন্দকে ঘাবড়ে দিয়ে চেয়েছিল। কিন্তু আনন্দও তৈরি ছিল। ১৬ নম্বর চালে একটা নতুন চাল দেয় ও-ও। তা ছাড়া ওপেনিংয়ে খুব দ্রুত চালগুলো দিচ্ছিল এ দিন আনন্দ। তাতেও খানিকটা গেলফাঁর চমক দেওয়ার চেষ্টা আটকে গেছে। ফলে ওর একটা সময় একটা বোড়ে বেশি থাকলেও তারও সুবিধে নিতে পারেনি। ধীরে ধীরে গেম ড্রয়ের দিকে ঢলে পড়ল। কিন্তু তাতেই দুই চল্লিশোর্ধ্ব প্রতিদ্বন্দ্বীকে যথেষ্ট ক্লান্ত দেখাচ্ছিল কলকাতায় এই ম্যাচ সরাসরি দেখানো জায়ান্ট স্ক্রিনে। বুধবার এক দিনের বিশ্রামের পরে বৃহস্পতিবার হয়তো দু’জনই আবার তাজা অবস্থায় পঞ্চম গেম জিততে ঝাঁপাবে। কিন্তু পরপর দু’দিন খেললেই দু’জনকেই রীতিমতো ধ্বস্ত দেখাচ্ছে। মানসিক এবং শারীরিক দু’দিক দিয়েই।
আসলে যেটা আগে বলেছি সেটাই আবার বলছি যে, এ বার ১২ গেমের খেতাবি লড়াইয়ে দু’জনের মধ্যে যে-ই একটা গেম জিতে এগিয়ে যেতে পারবে, অন্য জনের পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকে ধরা খুব কঠিন। কারণ ওই বেশি বয়স। দাবা যতই বসে-বসে খেলা হোক না কেন, একটা চার বা ছয় ঘণ্টার লড়াই মানসিক ভাবে প্লেয়ারদের চুরচুর করে দেয়। বলা হয়ে থাকে ও রকম একটা দাবার গেম একটা বক্সিং ম্যাচ বা একটা পাঁচ সেটের টেনিস ম্যাচের সমান। সমান পরিমাণ স্ট্যামিনা দাবি করে। আনন্দ বা গেলফাঁ কারোরই ২৪/২৫ বছরের তরুণ দাবাড়ুর মতো ফিটনেস নেই। আমার মতে তাই একটা গেম জিতে দু’জনের মধ্যে যে-ই প্রথম লিড নিতে পারবে, সে-ই সটান বিশ্ব খেতাবের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।
যেটা দেখার অপেক্ষাতেই বিশ্বের সব দাবাপ্রেমী রয়েছে। |