তিনি সল্টলেকের বাড়ি ছেড়ে উঠে গেছেন গোপন ঠিকানায়। কোথায় তিনি, কেউ বলতে পারছেন না। মোহনবাগান কর্তাদের ঠিক করে দেওয়া আস্তানা থেকে তিনি মাঝে মাঝেই এস এম এস করে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সাংবাদিকদের। কোনও দিনও যা দেখা যায়নি কলকাতা ফুটবলে।
আর টোলগে ওজবেকে নিয়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের চাপান উতোর এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেল। মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করায় তাঁকে শো কজের মেল পাঠানো হল। মোহনবাগানের শাস্তি দাবি করে চিঠি পাঠানো হল আই এফ এতে। এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল বনাম টোলগের বিবৃতির লড়াই। টোলগের ভূমিকা এখন রামায়ণের ইন্দ্রজিতের মতো। মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বসে লাল-হলুদের প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকারের চাঞ্চল্যকর দাবি, “টোলগে আমাদেরই থাকছে। পরের মরসুমে ও আমাদের ক্লাবে খেলবে বলে আগাম টাকা নিয়ে রেখেছে। ১২ মে চেকে টাকা দিয়েছি। আইএফএ-কে আমরা রসিদ আর কাগজপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।” |
টোলগে অবশ্য পাল্টা যুদ্ধং দেহি মেজাজে। পরপর এস এম এসে তাঁর মন্তব্যগুলো এ রকম।
•আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। মোহনবাগানে খেলবই। দরকার পড়লে ফিফা, এআইএফএফ, অস্ট্রেলীয় দূতাবাস এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সাহায্যও নেব।
• ১০০০০০০০০ ভাগ মিথ্যে। ইস্টবেঙ্গল থেকে আমি কোনও অগ্রিম টাকা নিইনি। আমার কাছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খতিয়ান আছে প্রমাণ করার জন্য। যেটা দেখলেই বোঝা যাবে, আমি কোনও টাকা নিইনি। আমার নাম খারাপ করতেই এ সব মিথ্যা ছড়াচ্ছে ইস্টবেঙ্গল।
• এটা খুব লজ্জার ব্যাপার। আমার তো সবচেয়ে বেশি দুঃখ হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কথা ভেবে। ওরা কর্মকর্তাদের উপর অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। বদলে কর্তারা মিথ্যাচারে সিদ্ধহস্ত। এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যেমন খুশি বাবহার করে সমর্থকদের।
• আমি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের এই ব্যবহারে খুব হতাশ। কারণ আমার সঙ্গে কর্তাদের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। সেটা এখন বদলে গিয়েছে।
টোলগের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুললেও ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ফোনে যোগাযোগ করেননি তাঁর সঙ্গে। শুধু এ দিন সকালে ই-মেলের মাধ্যমে শো কজ-এর চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। দেবব্রতবাবু বললেন, “মরসুম শেষ হয়েছে আইএফএ এখনও ঘোষণা করেনি। তার আগেই টোলগে কী করে মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করল?” শো কজের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও টোলগে বলেন, “আমি শো কজের চিঠি পেয়েছি ঠিকই। তবে বাকি সব কথা মিথ্যা।”
এই ডামাডোলের মধ্যে পড়ে কী ভাবছে মোহনবাগান এবং আই এফ এ? আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “একটা চিঠি পেয়েছি। একটা মেল। কিন্তু আমি কোনও ভাউচার পাইনি। এখনও ঠিক করিনি, কী করব।” মোহনবাগানের অর্থ সচিব দেবাশিস দত্তের মন্তব্য, “আমরা কিছু বলব না। আই এফ এ যদি কিছু চিঠি দেয়, তার পরে ভাবব। ইস্টবেঙ্গল কী বলল, তা নিয়ে কেন কিছু বলতে যাব?”
সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, টোলগেকে নিয়ে নাটক এখনও অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। এর মধ্যেই টোলগে যাঁর জার্সি পরতে চলেছেন, সেই হোসে রামিরেজ ব্যারেটো স্বাগত জানালেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকারকে। ব্যারেটোর গলায় টোলগে প্রসঙ্গে সম্ভ্রম, “আমার কাছে ১০ নম্বরটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ মোহনবাগান জার্সির রং আর সম্মান। আমার বিশ্বাস যে জার্সি পরে ১০ বছর খেলেছি, সেই জার্সির মর্যাদা নিশ্চয়ই রক্ষা করবে টোলগে।” |