ট্রেভর মর্গ্যানকে ঠান্ডা রাখতে চিডি এডের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিল ইস্টবেঙ্গল। পাশাপাশি স্পনসর ইউ বি-র তরফ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হল, কোচ বিতর্কে তাঁরা মর্গ্যানের পাশেই।
অস্ট্রেলিয়ার পারথে পৌঁছে মঙ্গলবার মর্গ্যান আবার মেল করেন ক্লাবের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যকে। জানতে চান, চিডি এডের ব্যাপারটা কী দাঁড়িয়েছে? মেল পেয়েই চিডির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। এবং জানিয়ে দেওয়া হয় কোচকে। সন্তোষবাবু বললেন, “এক সপ্তাহের মধ্যেই চিডির সঙ্গে কথা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
এর মধ্যে সারা দিন ধরেই ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে না থেকেও মারাত্মক ভাবে হাজির ছিলেন মর্গ্যান। নিয়ম মেনে সকালে ক্লাবতাঁবুতে পতাকা উত্তোলন হল। কিন্তু আনন্দের আবহ আর কোথায়? খুব বেশি ফুটবলার হাজির ছিলেন না।
মঙ্গলবার রাতে ফুটবল সচিবের আশা, মর্গ্যান ফিরে আসবেন ইস্টবেঙ্গলেই। কোচকে ফেরানোর জন্য চিডির সঙ্গে সঙ্গে সন্দীপ নন্দী ও ইসফাক আমেদের সঙ্গেও কথা শুরু করে দিয়েছেন ফুটবল সচিব। তবে মর্গ্যান বিরোধী একটা চোরা স্রোত কর্তাদের মধ্যেই রয়েছে। অনেকেই মর্গ্যানের মনোভাবে ক্ষুব্ধ। ইউ বি মর্গ্যান নিয়ে কথা বললে ক্লাব তা রাখতে বাধ্য? প্রশ্ন করলে প্রধান ফুটবল কর্তা দেবব্রত সরকার বলেই দিলেন, “মর্গ্যান বা টোলগের ব্যাপারে ইউ বি-র পরামর্শ বা অনুরোধ আমরা মানতে বাধ্য নই। এটা ক্লাবের ব্যাপার।” |
ঠিক কী কারণে নাটক করে চলে গেলেন মর্গ্যান? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা চলছে ইস্টবেঙ্গলে।
সোমবার সন্ধ্যায় মর্গ্যান ড্রেসিংরুম ছেড়ে বেরোচ্ছিলেন। বেরোনোর মুখে দেখা হয় এক কর্তার সঙ্গে। ব্রিটিশ কোচ দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “সন্দীপ নন্দীর ব্যাপারে কী ঠিক হল?” কর্তা তখন উত্তর দেন, “আমরা ওকে রাখছি না। প্রয়াগের অভিজিৎ মণ্ডলকে নিচ্ছি।” শুনে মর্গ্যান দ্রুত বেরিয়ে যান, “ভুলে যান” বলে।
এই “ভুলে যান”-এরই মানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অনেকগুলো কারণ উঠে আসছে মর্গ্যান-ক্লাব বিরোধের পিছনে।
১) মর্গ্যান দলে চেয়েছিলেন চিডিকে। কর্তারা চিডিকে নিতে আগ্রহী ছিলেন না।
২) ব্রিটিশ কোচের পছন্দের গোলকিপার ছিলেন সন্দীপ নন্দী। কর্তারা দলে নিয়েছেন অভিজিৎ মণ্ডলকে। একই ব্যাপার ঘটে ইসফাক আমেদকে নিয়ে।
৩) মর্গ্যান খেপে যান বিদেশিদের নিয়ে গোপন খবর বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায়। মর্গ্যানের সঙ্গে ক্লাবের এক কর্তার কথা হয়েছিল অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার শন রুনির সঙ্গে চুক্তি করার। বর্তমানে যিনি ইন্দোনেশিয়ার ডেল্ট্রাস ক্লাবে খেলছেন। ওই খবর বেরোনোর জন্য তিনি খেপে যান।
৪) মর্গ্যানের পছন্দের সহকারী অতনু ভট্টাচার্যকে নিয়ে অনেক কর্তার আপত্তি রয়েছে। আবার কর্তাদের পছন্দের দুই সহকারী রঞ্জন চৌধুরী ও অ্যালভিটো ডিকুনহাকে আবার পছন্দ নয় মর্গ্যানের। তিনি চাইছিলেন আর এক সিনিয়র সহকারী। এ নিয়ে ডামাডোল চলছে অনেক দিনই।
ফুটবল কর্তা দেবব্রত সরকার এ দিন জানালেন কেন মর্গ্যানের তালিকা পুরোপুরি মেনে চলা যায়নি। তাঁর কথায়, “প্রথম কথা হল, প্রথম বার মর্গ্যান যখন এলেন, তাঁর পছন্দ মতো দল ছিল না। তাতেও উনি সফল হয়েছিলেন। দ্বিতীয় কথা, সব ফুটবলারকে কি নেওয়া যায়? কারও অন্য দলের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যায়। কারও আবার আর্থিক দাবি বিশাল থাকে।”
মোহনবাগান এখনও সুব্রত ভট্টাচার্যর বিকল্প কোচ ঘোষণা করেনি। তাই একটা অংশে জল্পনা, মর্গ্যান কি মোহন কোচ হতে পারেন? মোহন কর্তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন প্রশ্ন। এবং ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বলছেন, “ইস্টবেঙ্গল ছাড়লে ভারতের অন্য ক্লাবে কোচিং করাতে পারবেন না। যদি যান, তাহলে তাঁকে জরিমানা দিতে হবে প্রায় সাড়ে তেরো লক্ষ টাকা।”
মর্গ্যান এখনও স্পষ্ট করছেন না অবস্থান। তবে নরম হয়েছেন সন্দেহ নেই। পরিস্থিতি যা তাতে টোলগের মতো মর্গ্যান-ও ‘মেগা সিরিয়াল’ হতে চলেছেন ময়দানে। |