উলুবেড়িয়ায় বাইপাস রাস্তা ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল রিনিউয়েবল আরবান মিশন’ প্রকল্পের আওতায় হতে পারে বলে আশ্বাস দিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া পুরসভায় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে আলোচনার সময়ে পুরসভার পক্ষ থেকে বাইপাস রাস্তা তৈরির ব্যাপারে আর্থিক সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। সে সময়েই পুরমন্ত্রী রাস্তাটি ‘জেএনএনআরএম’ প্রকল্পে তৈরি করা যেতে পারে পুরসভার প্রতিনিধিদের আশ্বাস দেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পুরসভার চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ বলেন, “রাস্তাটি তৈরির পরিকল্পনা আমাদের করাই রয়েছে। শুধু টাকার অভাব ছিল। পুরমন্ত্রীকে সে কথা জানানোর পরে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন রাস্তাটি তৈরি হবে ‘জেএনএনআরএএম’ প্রকল্পে। পুরমন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হবে।”
উলুবেড়িয়ায় যানজট সমস্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া একমাত্র রাস্তা হল ও টি রোড। কিন্তু শহরে দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই রাস্তার উপরে বেশ চাপ পড়ে। শ্যামপুরগামী বিভিন্ন রুটের বাস, গাদিয়াড়া এবং গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রের অভিমুখে গাড়ি, অটো রিকশা, ট্রেকার প্রভৃতির ভিড়ে এই রাস্তায় যানচলাচল প্রায়ই বিপর্যস্ত হয়। উলুবেড়িয়া স্টেশন রোড থেকে গরুহাটার মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারের কম রাস্তা পৌঁছতে সময় লেগে যায় অনেকটাই। |
এই অবস্থায় উলুবেড়িয়ায় নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে একটি বাইপাস রাস্তার দাবি জানানো হয়। পুরসভা এবং মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাইপাস রাস্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়। ও টি রোডের সমান্তরাল যে মেদিনীপুর ক্যানালটি রয়েছে সেই ক্যানালের পাড় বরাবর বাইপাস রাস্তা তৈরির বিষয়ে পরিকল্পনা করেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে পূর্ত (সড়ক) বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রকল্পও তৈরি করে তারা। এই বাইপাস রাস্তাটি তৈরি হলে ও টি রোডে যানজট অনেকটাই এড়ানো যাবে বলে পুরসভা কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু প্রায় দু’বছর আগে প্রকল্পটি তৈরি করা হলেও পুরসভা কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে আসেন টাকার অভাবে। মঙ্গলবার পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সেই সমস্যাটির কথাই তুলে ধরেন পুরসভার কর্তারা।
এ দিন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী উলুবেড়িয়ার জগদীশপুরে জলপ্রকল্পটিও পরিদর্শন করেন। কেএমডিএ-এর তত্বাবধানে এটিও তৈরি হয়েছে জেএনএনআরইউএম প্রকল্পে। বর্তমানে প্রকল্পটি চালাচ্ছে তৃণমূল পরিচালিত উলুবেড়িয়া পুরসভা। এটি অবশ্য তৈরি হয়েছে এর আগের বামফ্রন্ট-শাসিত পুরবোর্ডের আমলে। প্রকল্পটি থেকে জল দেওয়া শুরু হয়েছে ২০১১ সালের গোড়ায়। কিন্তু প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। পাম্পহাউসের কংক্রিটের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। প্রকল্পটিতে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি হয়নি। সব থেকে বড় অভিযোগ, প্রকল্পটি যেখানে অবস্থিত সেই পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড-এর বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারাই জল পাচ্ছে না।
পুরমন্ত্রী বলেন, “পাম্পহাউসটির নির্মাণকার্যের সময়েই গাফিলতি হয়েছিল বলে মনে হয়। যে ঠিকাদার সংস্থা এটি নির্মাণ করেছিল তারাই যাতে ফের ফাটল মেরামত করে তাদের সেই নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি পুরসভাকে বলেছি।” প্রকল্পে যাতায়াতের রাস্তাঘাট তৈরির নির্দেশও দেন পুরমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যে সব এলাকায় জল যাচ্ছে না তাদের জন্য এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজ-এর কাজ চলছে। এই পর্যায়ে সকলকে জল দেওয়া সম্ভব হবে।” অন্য দিকে, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পরে প্রতিমাসে বিপুল টাকার বিদ্যুতের বিল মেটাতে হচ্ছে পুরসভাকে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী, তা পুরমন্ত্রীর কাছে জানতে চান চেয়ারম্যান। পুরমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, এই প্রকল্প থেকে ঠান্ডা পানীয় বা মিনারাল ওয়াটার তৈরি করে তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করে বিদ্যুতের খরচ তোলা যায়। এ দিন পুরমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি। |