সঙ্কটমুক্তির জন্য রেলভাড়া বাড়াতে বলল সিএজি-ও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য, বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ প্রায় সব ক’টি বিষয়েই আজ প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যকালের কড়া সমালোচনা করল কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। সেই সঙ্গেই রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরাতে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে তাদের রিপোর্টে।
অর্থ মন্ত্রক, যোজনা কমিশন-সহ সকলেই অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকা রেলকে গত কয়েক বছর ধরে এই একই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। আজ রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য (২০১০-১১) নিয়ে সিএজি-র যে রিপোর্ট সংসদে জমা পড়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মন্ত্রক তীব্র অর্থ সঙ্কটে রয়েছে। বিভিন্ন খাতে খরচ মেটাতেই তহবিলের প্রায় ৯৩ শতাংশ ব্যয় হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রেলের আর্থিক হাল ফেরাতে পণ্য মাসুল ও যাত্রী ভাড়া বাস্তবসম্মত করা দরকার। এই সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ‘বাস্তবসম্মত ভাড়া’ কথাটির অর্থই হল গত এক দশক ধরে রাজনৈতিক কারণে যে ভাড়া বৃদ্ধি আটকে রয়েছে, তা বাড়ানো। রেলের এক কর্তার কথায়, “যাত্রী ভাড়া যে বাড়া উচিত, তা মন্ত্রকের সকলেই জানেন। কিন্তু দীনেশ ত্রিবেদী-পর্বের পরে আর কেউ সেই ঝুঁকি নেবেন বলে মনে হয় না।”
রেল মন্ত্রক যে ভাবে গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর চেয়ে কেন্দ্রীয় সাহায্যের উপরে বেশি নির্ভর করেছে, সেই মনোভাবেরও কড়া সমালোচনা করেছে সিএজি। রিপোর্টে রেলকে অন্য উপায়ে আয়ের রাস্তা খুঁজে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আয় বাড়াতে পিপিপি মডেল প্রয়োগ, বিজ্ঞাপন, রেলের জমিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। প্রায় তিন বছরে ওই প্রস্তাবগুলির একটিও রেলকে সে ভাবে আয়ের রাস্তা দেখাতে পারেনি। এমনকী, যে পিপিপি মডেলের মাধ্যমে মমতা রেলের একাধিক প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, সেই মডেলের যৌক্তিকতা নিয়েই এখন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে খোদ রেল-কর্তাদের মধ্যে।
আয়-ব্যয়ের খতিয়ানে স্বচ্ছতা আনতে ২০০৩ সালে আর্থিক দায়বদ্ধতা ও বাজেট ব্যবস্থাপনা নীতি চালু করেছিল রেল মন্ত্রক। কিন্তু কেন এত দিনেও সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না, তা নিয়ে রিপোর্টে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের মাধ্যমে বন্ড ছেড়ে যে টাকা বাজার থেকে তোলা হচ্ছে, তা কী খাতে খরচ হচ্ছে, সেই বিষয়েও বিস্তারিত বক্তব্য সংশ্লিষ্ট বাজেটে নেই বলে মন্তব্য করেছে সিএজি। তাদের বক্তব্য, বাজার থেকে যে টাকা তোলা হচ্ছে, তা কী খাতে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট দিশা থাকা উচিত বাজেটে। তবে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরামর্শ মানতে গিয়ে রেলের উপর যে বিপুল আর্থিক চাপ এসে পড়েছে, তা মেনে নিয়েছে সিএজি। কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব সঠিক পদ্ধতিতে না রাখায় রেলকে কর্মীদের এককালীন কত অর্থ দিতে হয়েছে তার কোনও নির্দিষ্ট হিসাব মন্ত্রকের কাছে নেই বলেও রিপোর্টে জানিয়েছে সিএজি। তাদের বক্তব্য, অভাব রয়েছে নজরদারি ব্যবস্থাতেও।
শুধু রেলের আর্থিক স্বাস্থ্যেরই সমালোচনা নয়, পরোক্ষ ভাবে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, সে সময়ে বাজেটে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার অধিকাংশ এক বছরে করা সম্ভব হয়নি। আর্থিক ক্ষেত্রেরই মতোই এখানেও নজরদারি ব্যবস্থার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে সিএজি। এ ছাড়া গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন জোনের ট্রেনে ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস’ বসানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাস্তবে সে কাজ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি। ওই একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিকে বিশ্বমানের বা আদর্শ স্টেশনে (২০০৯ থেকে ২০১১) উন্নীত করা নিয়েও। এর পাশাপাশি বড় মাপের রেল প্রকল্পের মধ্যে বিহারের ছাপরা, মধেপুরা, পশ্চিমবঙ্গের কাঁচরাপাড়া, সাঁকরাইল, নিউ জলপাইগুড়িতে যে কারখানা হওয়ার কথা ছিল সেগুলির কত শতাংশ কাজ বাস্তবে রূপায়ণ হয়েছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সিএজি।
বর্তমান রেলমন্ত্রী মুকুল রায় দাবি করে থাকেন, “মমতার সময়েই রেলের স্বর্ণযুগ ছিল।” বস্তুত তাঁর এই দাবি নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলল সিএজি। |