সংসদে হইচই, এ বার অশালীন বিজ্ঞাপন বন্ধে সর্বদল বৈঠক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কার্টুন বিতর্কের পর এ বার গণমাধ্যমে ‘অশালীন এবং আপত্তিকর বিজ্ঞাপন’ নিয়ে বিরোধী ও শরিক দলের তোপের মুখে পড়ল সরকার। এমনকী, সেই চাপের মুখে এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করার পথ খুঁজতে সর্বদল বৈঠকেও রাজি হয়ে গেল কেন্দ্র।
লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে আজ শুরুতেই ‘অশালীন বিজ্ঞাপনের’ প্রসঙ্গটি ওঠে। সিপিএম সাংসদ সুস্মিতা বাউরি তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ইদানিং বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মহিলাদের শরীরকে খুবই অশালীন এবং আপত্তিজনক ভাবে বাণিজ্যকরণ করা হচ্ছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনক যে সেগুলির সম্প্রচার বন্ধ করতে এখনও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।” তাঁর কথায়, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আকছার বিভিন্ন সৌন্দর্য-ক্রিমের বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে যে ফর্সা হতে পারলেই কোনও মহিলাকে সুন্দরী হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। এর থেকে বর্ণবিদ্বেষী কথা আর কিছুই হতে পারে না। কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গের অনেক মহিলাই শ্যামলা। তা ছাড়া আদিবাসী ও মেহনতী মহিলা, যাঁরা রোজ রোদে পুড়ে কাজ করছেন তাঁরা কি সুন্দর নন? সরকার এই সব বিজ্ঞাপন বন্ধে কী করছে?
সিপিএমের এই সাংসদ এখানেই থেমে থাকেননি। সুস্মিতা বলেন, টিভিতে একটা কফির বিজ্ঞাপন হয়। সেখানে দেখা যায় এক মহিলা কোমর দুলিয়ে নাচছেন। কিন্তু “কফির সঙ্গে কোমর দোলানোর কী সম্পর্ক”? তাঁকে সমর্থন জানান বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর জোশী। একই সঙ্গে অশালীন বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত পুরনো অভিযোগগুলি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ জয়শ্রী বেন পটেল। আবার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ রত্না দে নাগ বলেন, “সাম্প্রতিক কালে অশালীন বিজ্ঞাপন দেখানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। তা সে সংবাদপত্রে হোক বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। ‘পার্সোনাল কেয়ারের’ কোনও পণ্যের বিজ্ঞাপনের দিকে তাকানো যায় না। অথচ মহিলাদের অশালীন ভাবে তুলে ধরা রুখতে ’৮৬ সালেই আইন পাশ হয়েছে। তার পরেও কেন অসহায় সরকার?”
শরিক এবং বিরোধীদের এই সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি বলেন, গণমাধ্যমে অশালীন ও আপত্তিজনক বিষয়ের সম্প্রচার রুখতে অন্তত ১৫টি আইন রয়েছে। কিন্তু কোনও সংস্থাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলেই তারা আইনি নোটিস ধরাচ্ছে সরকারকে। তবে আপত্তিজনক বিজ্ঞাপন রুখতে সরকার একটি কঠোর আইন এ বার প্রণয়ন করতে চলেছে। খসড়া বিলটি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।
অম্বিকা এ কথা বললেও, সরকারকে ফের চেপে ধরেন বিরোধীরা। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “কেন্দ্র যে এ ব্যাপারে অসহায় তা মন্ত্রীর কথা শুনেই মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে বিরোধীরা সাহায্য করতে পারে। সরকার যদি চায় তা হলে সর্বদল বৈঠকে বিরোধীরা এই বিষয়ে কেন্দ্রকে সৎ পরামর্শ দেবে, যাতে আপত্তিজনক বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুষমার এই মন্তব্যে দৃশ্যতই চটে যান অম্বিকা। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, “সরকার কোনও ভাবেই অসহায় নয়। তবে প্রস্তাবিত বিলটি মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হচ্ছে। তার পর সাংসদদের দাবি মেনে নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হবে। এ ব্যাপারে সবার সম্মতিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার মতো ভালো ব্যবস্থা আর কী হতে পারে!” |