এয়ার ইন্ডিয়া বেচে দিতে চান অজিত, দাবি বাম-বিজেপির |
এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে বিমানমন্ত্রীর ‘বেফাঁস’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সংসদে সরব হল বিজেপি-সহ বিরোধীরা। অধিবেশন মুলতুবিও হল এক বার। বিরোধীদের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের কাছে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁদের কথায়, সংসদ চলাকালীন কোনও সরকারি নীতি নিয়ে কক্ষের ভিতরে আলোচনা না করে বাইরে মন্তব্য করা যায় না। সেটি করে অজিত সিংহ সংসদের অসম্মান করেছেন। বিমানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাবও এনেছেন বিরোধী দলনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ সুষমা স্বরাজ। স্পিকারের কাছে একই প্রস্তাব দেয় সিপিএম এবং সিপিআই-ও। সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে শরিক দল ডিএমকে-ও জানায়, কেন্দ্রের উচিত ধর্মঘটীদের দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে শোনা।
সংসদে বিরোধীরা অভিযোগ করেন, এয়ার ইন্ডিয়ার অচলাবস্থা কাটাতে কেন্দ্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ। পাইলট ধর্মঘটে পরের পর উড়ান বাতিল হলেও যাত্রীদের সুরাহা করতে পারেনি কেন্দ্র। ধর্মঘটীদের সঙ্গেও বৈঠক হয়নি। বরং, সমস্যা এড়াতে এয়ার ইন্ডিয়াকে বাঁচানোর বদলে সেটি বেচার পরিকল্পনা করছেন বিমানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারও দিল্লি-মুম্বইয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ১০টি উড়ান বাতিল করতে হয়। ৮ দিনে সংস্থার ক্ষতি ১৫০ কোটি ছাড়িয়েছে।
তবে মঙ্গলবার বিকেলে সংসদের আলোচনায় অজিত সিংহ জানান, এয়ার ইন্ডিয়াকে বাঁচতে হলে কাজ করে দেখাতে হবে। সেটাই সংস্থার পুনরুজ্জীবনের শেষ উপায়। ‘অসুস্থ’ চালকদের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টকেও ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দেন অজিত। কারণ বিমান সংস্থার তদন্তে বহু ‘অসুস্থ’ চালককেই তাঁদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রীর বক্তব্য, কেউ মিথ্যে রিপোর্ট দিয়েছেন বলে প্রমাণ হলে সেই চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ডিজিসিএ। একই সঙ্গে জানান, বরখাস্ত করা চালকদের আর ফেরানো হবে না। নয়াদিল্লি সূত্রের খবর, বুধবার সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তর সঙ্গে কথা বলবেন ধর্মঘটী পাইলটেরা। এর পর ওই বৈঠকের নির্যাস নিয়ে বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে পারেন গুরুদাস।
এ দিন শুরু থেকেই এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে উত্তপ্ত ছিল সংসদ। জিরো আওয়ারে প্রসঙ্গটি তুলে সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “অজিত সিংহের মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি বেসরকারিকরণের কথাই বলছেন। বিমানমন্ত্রী এয়ার ইন্ডিয়ার সম্মানহানি করে সংস্থাটিকে বেচে দিতে চান। কারণ কেন্দ্র আর এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব নিতে চাইছে না।” সিপিএম সাংসদকে সমর্থন জানান বিজেপির প্রাক্তন দুই বিমানমন্ত্রী অনন্তকুমার, শাহনওয়াজ হুসেন এবং জেডিইউ সাংসদ তথা প্রাক্তন বিমানমন্ত্রী শরদ যাদব। ডিএমকে সংসদ বাসন্তী স্ট্যানলি বলেন, “ধর্মঘটী চালকেরা কথা বলতে রাজি। তবু তাঁদের বরখাস্ত করা হচ্ছে, এটা বিস্ময়কর!”
বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, বিমানমন্ত্রী বাইরে মন্তব্য করতে পারছেন। অথচ অধিবেশনে এসে সাংসদদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। সুষমা দাবি করেন, বিমানমন্ত্রীকে সংসদে হাজির করাতে সরকারকে নির্দেশ দিন স্পিকার। এই নিয়ে সরব হয় সিপিএম, সিপিআই, জেডিইউ-ও। স্পিকার যদিও বলেন, “সরকারকে আমি কী করে নির্দেশ দেব? তবে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করে দেখব।” তিনি জানান, বিকেলে এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে সংসদে বৈঠক রয়েছে, সেখানেই সব উত্তর দেবেন বিমানমন্ত্রী। তাতে বিরোধীরা ক্ষান্ত হননি। শেষে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির কিছু আগে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। |