পরিবারের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার বেশি? এ বার থেকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে দ্বিগুণ দাম দিতে হতে পারে। গ্যাসের উপর ভর্তুকি কমাতে এমনই চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্র। তবে তার আগে সাংসদ ও বিধায়কদের ভর্তুকি মূল্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া বন্ধ করা হবে। কম দামে রান্নার গ্যাস পাবেন না প্রথম শ্রেণির সরকারি আমলারাও।
এখন সিলিন্ডার প্রতি রান্নার গ্যাসের দাম ৪০৫ টাকা। সিলিন্ডার পিছু সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় ৪৮০ টাকা। ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরে প্রতি সিলিন্ডারের দাম হবে প্রায় ৯০০ টাকা। ফলে এই অগ্নিমূল্যের বাজারে দ্বিগুণ বাড়বে মধ্যবিত্ত পরিবারের রান্নার গ্যাসের খরচ। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে কেন্দ্র কতটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার উপর। সংসদের অধিবেশনের পর, চলতি মাসের শেষে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক বসবে। সেখানেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তার আগে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকারি সূত্রের খবর, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ানো নিয়েও মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে আলোচনা হবে। দু’টি বিষয়ই রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট স্পর্শকাতর। তাই সংসদের অধিবেশন মেটার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে কেন্দ্র।
গত আর্থিক বছরে রান্নার গ্যাসে কেন্দ্রকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ২০১০-’১১ সালে এই ভর্তুকি ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, দাম বাড়ানো বা ভর্তুকির বোঝা কমানো ছাড়া উপায় নেই। দেশের প্রায় সাড়ে ১২ কোটি পরিবার এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। সেই অর্থে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষই রান্নার জন্য এলপিজি-র উপর নির্ভরশীল। বছরে একটি পরিবার গড়ে ৮টি করে সিলিন্ডার ব্যবহার করে। মনমোহন সিংহও কিছু দিন আগে বলেন, পেট্রোপণ্যের দাম বাস্তবসম্মত করতেই হবে। তবে গরিবদের উপর যাতে আঘাত না আসে, তা-ও দেখা প্রয়োজন। সংসদীয় কমিটিও ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সেই অনুযায়ীই আগে রাজনীতিক ও আমলাদের ভর্তুকিতে কাটছাঁট করতে চায় কেন্দ্র। দ্বিতীয় দফায় মাসেক ৫০ হাজারের বেশি আয়ের পরিবারের জন্য ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। এতে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে ভাবা হচ্ছে।
পেট্রোলিয়াম কর্তাদের অভিযোগ, গৃহস্থ বাড়ির জন্য যে ১৪.২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হয়, সেগুলি রেস্তোঁরা-হোটেলেও ব্যবহার হচ্ছে। অথচ ব্যবসা বা শিল্পে ব্যবহারের জন্য ১৯ কেজির নীল সিলিন্ডার রয়েছে। দাম ১২০০ টাকা। ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পর সাংসদ, বিধায়ক ও আমলাদের এই সিলিন্ডার ব্যবহারে অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রের নীতি, যাদের ‘প্রয়োজন’ নেই, তাদের ভর্তুকি না দিয়ে গরিবদের হাতে সরাসরি নগদ ভর্তুকি তুলে দিতে। আধার-সংখ্যার ভিত্তিতে দু’টি জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক ভাবে। রাজস্থানের আলোয়ারে কেরোসিন এবং কর্নাটকের মহীশূরে রান্নার গ্যাসের উপর ভর্তুকি নগদ মূল্যে গরিবদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। |