আই রেখা গণেশন...সিলসিলা না হোক, উমরাও জান!
কী আসে যায় এই তথ্যে যে, তাঁর বয়স ৫৭ পেরিয়েছে! কী আসে গেল সাংসদদের যে, তিনি ছিলেন মাত্র ১৯ মিনিট! সোনালি-খয়েরি শাড়ি, ক্লিপ আঁটা চুলে সাধারণ খোঁপা আর ‘টানা’ দুল পরা ওই নারীকে দেখার জন্যই উথালপাথাল হয়ে যায় সংসদ ভবন। আর তিনি আরও একবার হেলায় প্রমাণ করে দেন, ইন আঁখোকি মস্তি-কে মস্তানে হাজারোঁ হ্যায়!
২৬ এপ্রিল সচিন তেন্ডুলকর আর শিল্পপতি অনু আগা-র সঙ্গে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হিসেবে ঘোষণা হয়েছিল রেখা-র নাম! অনু আগেই শপথ নিয়েছেন, সচিন এখনও নেননি। আজ ছিল রেখা-র শপথ গ্রহণের দিন।
এ দিন সকালে সংসদ ভবনের করিডর আর সামনের চত্বরটা দেখলে মনে হতে পারত, সিনেমার শু্যটিংই চলছে! পিলপিল মানুষের ভিড়, টিভি ক্যামেরার হুড়োহুড়ি, রাজনীতিকদের ঠেলাঠেলি! রেখার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব ফরজানা তো ছিলেনই, ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী খোদ রাজীব শুক্লও। ভিড়ের চাপে গাড়ি থেকে নামতে পারছিলেন না রেখা। মন্ত্রীমশাইকে বারবার সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে হল, যাতে তাঁরা একটু জায়গা দেন! সংসদ ভবনের সামনে অ্যাম্বাসাডরটা আসামাত্রই ধাওয়া করে সংবাদমাধ্যম। বিশৃঙ্খলা এমন জায়গায় পৌঁছল যে, সাংসদদের জন্য নির্ধারিত গেট দিয়ে ঢুকতেই পারলেন না রেখা। সংবাদমাধ্যমের হাত থেকে প্রায় বাঁচিয়েই তাঁকে ঢোকানো হল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বিশেষ গেট দিয়ে। ঘন ঘন ছবি করেন না, গরমাগরম সাক্ষাৎকার দেন না, রিয়ালিটি শো-এর আসর জমান না তবু আজ সেই রেখার জন্যই খানখান হল সংসদ ভবনের গেরামভারি আবহ! |
শপথগ্রহণের সেই মুহূর্ত। ছবি: পিটিআই। |
সভাকক্ষে প্রবেশের আগে রেখা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন মনমোহন সিংহের সঙ্গে। পরবর্তী গন্তব্য, রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হামিদ আনসারির কার্যালয়। সেখানে সর্বদল বৈঠক চলছিল। তারই মাঝে রনরনিয়ে উঠল গলা, “ম্যায় রেখা হুঁ।” তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলে ফেললেন, ‘‘ম্যায় বহুৎ দিনোঁসে আপকো জানতা হুঁ!” হাসলেন রেখা। সেই হাসি, যা বলতে জানে ‘ক্যায়সি পহেলি জিন্দেগানি!’
রেখা যখন রাজ্যসভার কক্ষে ঢুকছেন, ঘড়িতে ১০টা বেজে ৫৭ মিনিট! সভা শুরু হল কাঁটায় কাঁটায় ১১টায়। তার আগেই এগিয়ে এসে রেখাকে অভিবাদন জানিয়েছেন দক্ষিণী তারকা চিরঞ্জীবী! প্রবীণ সাংবাদিক এইচ কে দুয়া তাঁর র ৯৭ নম্বর আসনটি ছেড়ে দিয়েছেন রেখাকে! পাশে বসে তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্যসভার নিয়মকানুন! তার পর আসন গ্রহণ করলেন চেয়ারপার্সন হামিদ আনসারি। শুরু হল সভার কাজ। শপথ নেওয়ার জন্য রেখার নাম ঘোষণা হতেই গোটা কক্ষ টেবিল চাপড়ে তাঁকে স্বাগত জানাল। নির্ধারিত দিন না হওয়া সত্ত্বেও তখন কক্ষে রয়েছেন মনমোহন সিংহ, রয়েছেন জয়া বচ্চন। আর সবার মতো উদ্বেল হয়ে না উঠেও দূর থেকেই সৌজন্য বজায় রেখেছেন তিনি।
লাল-কালো ফুল ছাপ সাদা শাড়ি জয়ার দিকে ক্যামেরা সটান তাকিয়েছিল বেশ কিছু ক্ষণ। জয়া নির্বিকার। আলোচ্যসূচিতে চোখ বোলাচ্ছেন অভ্যস্ত রাজনীতিকের মতো। ভিতরে কোনও উতরোল? বছর দুয়েক আগে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দু’জনে পাশাপাশি চলে আসেন এক বার। সামান্য বাক্য বিনিময় হয়! সে বারও আপাত ভাবে অনেক বেশি সহজ বা উষ্ণ ছিলেন রেখা-ই। জয়া নন। আজকের পর থেকে জয়া-রেখাকে আবার এক ফ্রেমে ধরার চেষ্টা অবশ্যই চালাবে সংবাদমাধ্যম! সেটা আঁচ করেই কি সম্প্রতি আসন বদল করে নিলেন জয়া? জল্পনা অব্যাহত।
রেখা অবিচল, যথারীতি। নাম ঘোষণা হতে এগিয়ে এলেন। শপথ নিলেন ইংরেজিতে...‘আই রেখা গণেশন...!” করজোড়ে সৌজন্য বিনিময় করলেন আনসারির সঙ্গে। “ওয়েলকাম”, বলে উঠলেন উপরাষ্ট্রপতি। পোডিয়ামে দাঁড়িয়েই আর এক প্রস্ত সৌজন্য বিনিময় হল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকতার পালা চুকল। রেখা এ বার এগিয়ে গেলেন তাঁর জন্য নির্ধারিত ৯৯ নম্বর আসনটির দিকে। পাশেই বসে অনু আগা। সভায় প্রশ্ন নেওয়া শুরু হল। অনু আর রেখা, দু’জনের কানেই তত ক্ষণে উঠে এসেছে হেডফোন। রাজ্যসভার চক্ষু অবশ্য রেখাতেই স্থির! জাভেদ আখতারের সঙ্গে এক বার নোট চালাচালি হল। ১৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের মাথায় উঠে দাঁড়ালেন রেখা! অনু এবং এইচ কে দুয়ার সঙ্গে করমর্দন করে সভা ত্যাগ করলেন ‘উর্বশী’!
সভার ঘোর কাটতে সময় লেগেছে। রামবিলাস পাসোয়ান বলছিলেন, “পর্দার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী!” অরুণ জেটলি আবার ঘরোয়া ভাবে রাজীব শুক্লকে বলেছেন, “যেমন ভেবেছিলাম, তেমন নন!” এক সাংবাদিককে ধমকে দিয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদব, “রেখা নয়, রেখাজি বলুন!” ওঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করবেন নাকি? “নম্বরটা দিন না!” মুলায়মের ঝটিতি উত্তর। সাধে কি আর জয়ার আসন বদল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অমর সিংহ বলে উঠলেন, ‘‘ওটা ওঁর নিজস্ব সিলসিলা!” রেখার পরপরই কক্ষত্যাগ করেন তিনি। |