বিচারক রায় জানাতে শুরু করার পরই চোখ বুজে জপ শুরু করেছিলেন। জামিন পেতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে সমর্থকদের দিকে চুমু ছুড়তে লাগলেন আন্দিমুথু রাজা। টু জি মামলায় ১৫ মাস জেলে থাকার পরে আজ জামিন পেলেন তিনি। তবে প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী তামিলনাড়ু বা টেলিকম মন্ত্রকে যেতে পারবেন না। রাজা যাতে সাক্ষীদের প্রভাবিত না করতে পারেন, সেজন্যই এই শর্ত দিয়েছে বিচারক ও পি সাইনির বিশেষ আদালত।
টুজি কেলেঙ্কারি মামলায় সর্বপ্রথমে গ্রেফতার হন রাজা। জামিনে মুক্তি পেলেন সবার শেষে। দলে রাজার সতীর্থ তথা ডিএমকে প্রধান করুণানিধি-কন্যা কানিমোজিও জামিন পান ছ’মাস আগে। তিনি সংসদেও আসছেন, তামিলনাড়ুতেও থাকছেন। কিন্তু আদালত আজ জানিয়ে দিয়েছে, নিজের রাজ্য তামিলনাড়ুতে যেতেও বিশেষ অনুমতি নিতে হবে রাজাকে।
রাজার আইনজীবীরা এ দিন আদালতে বলেন, বাকি অভিযুক্তরা জামিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে রাজার কোনও তফাত নেই। তাই তাঁকেও জামিন দেওয়া উচিত। যদিও রাজার জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাক্ষীদের উপরে প্রভাব বিস্তার এবং প্রমাণ লোপের চেষ্টা করতে পারেন। তবে উভয় পক্ষের মত শোনার পর বিচারক ও পি সাইনি জানান, মামলার সব প্রমাণই এখন আদালতের হেফাজতে। তাই রাজাকে আর জেলে আটকে রেখে বিশেষ লাভ হবে না। শুনানির সময়ে রাজা সাক্ষীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন এমন অভিযোগও কেউ করেননি। তাই তাঁকে এ বার জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।
আজ যে রাজার জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা কিছুটা আন্দাজ করেন ডিএমকে নেতৃত্ব। আদালতে ছিলেন রাজার স্ত্রী এম এ পরমেশ্বরী এবং অন্তত ১৫০ জন ডিএমকে সমর্থক। বিচারপতি আদালত কক্ষে ঢোকার আগে রাজা এবং কানিমোজিকে গল্প করতেও দেখা যায়। জামিনের ঘোষণার পরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সমর্থকেরা। |
মুক্তি পেয়ে নিজের বাড়িতে। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার। ছবি: এ এফ পি। |
চোখে জল এসে যায় পরমেশ্বরীর। পরে অবশ্য তিনি বলেন, “এখনও অনেক লড়াই বাকি।”
আদালত থেকে দুপুরে তিহাড় জেলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজাকে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ একটি গাড়িতে বেরিয়ে আসেন ডিএমকে-র এই দলিত নেতা। তাঁকে দেখেই তিহাড় জেলের সামনে ডিএমকে সমর্থকরা দলের লাল পতাকা উড়িয়ে, স্লোগান দিয়ে, বাজি ফাটিয়ে ‘উৎসব উদ্যাপন’ শুরু করে দেন। মতিলাল নেহরু রোডে সরকারি বাসভবনে রাজা পৌঁছলে অনেক রাত পর্যন্ত সেখানেও ভিড় করেন ডিএমকে সমর্থকরা। ২০০ লোকের নৈশভোজের আয়োজন হয় রাজার তরফে। বাড়ির বাইরে রাজার গ্রাম থেকে আসা লোকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের একপ্রস্ত ধাক্কাধাক্কিও হয়।
পরে ডিএমকে-র এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, দল যে রাজার থেকে দূরত্ব তৈরি করেনি, আজকের উৎসব তার প্রমাণ। তাঁর কথায়, রাজা দলের দলিত নায়ক। কানিমোজি জামিন পাওয়ার পর তাই রাজার মুক্তি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন করুণানিধি। এ বার তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন তিনি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় দু’টি ক্যাবিনেট পদও ফিরে পেতে চাইছেন কালাইনার। সেই বার্তা ইতিমধ্যেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ দিন করুণানিধি বলেন, দলের প্রতিটি লোক রাজাকে সমর্থন করেন।
স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির দায় রাজার উপর আগেই চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজ দলের মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “এটা আইনি প্রক্রিয়া। আদালতের সিদ্ধান্ত সম্মান করি। আর কিছু বলার নেই।” যদিও রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজার মুক্তির পর অনেকটা ভারমুক্ত কংগ্রেসও। কারণ, কেন্দ্রে ডিএমকে এখনও শরিক। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির ঘটনায় রাজা ও কানিমোজি গ্রেফতার হলেও করুণানিধি কোনও অশান্তি করেননি। তাঁর একটাই দাবি ছিল, কানিমোজি ও রাজাকে যত শীঘ্র সম্ভব জামিনে মুক্ত করতে কংগ্রেস সাহায্য করুক। যদিও আদালতে আজও সিবিআই রাজার জামিনে আপত্তি করে। কিন্তু মন্ত্রিসভায় এক কংগ্রেসের বর্ষীয়ান মন্ত্রীর কথায়, সিবিআই তা না করলে বিরোধীরা সমালোচনা করত। ফলে জামিনের বিরোধিতা সিবিআইকে করতেই হত। তবে জামিন না হওয়ার আর কোনও কারণ ছিল না।
বিজেপি নেতৃত্ব সহজে স্পেকট্রাম-অস্ত্র ছাড়তে নারাজ। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, “আদালত রাজাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে মাত্র। তার মানেই বেকসুর খালাস নয়। টুজি কেলেঙ্কারিতে এক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা লুঠের কৈফিয়ত সরকারকে দিতে হবে।” চিদম্বরম এই কেলেঙ্কারির মাথা বলে বরাবরই অভিযোগ জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর। আজ তাঁর কটাক্ষ, “রাজা ষড়যন্ত্রকারী নন। তাই জামিনের পর তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে।”
|
হেফাজতে ১৫ মাস |
• ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১১: টুজি মামলায় গ্রেফতার প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজা।
• ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১১: তিহাড় জেলে পাঠানো হল রাজাকে।
• ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১১: প্রাণনাশের সম্ভাবনার কথা বললেন রাজা। জেল থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে আদালতে হাজিরা দেওয়ার আর্জি পেশ।
• ১৪ মার্চ, ২০১১: টুজি মামলার জন্য বিশেষ আদালত তৈরির নির্দেশ।
• ২ এপ্রিল, ২০১১: মামলায় প্রথম চার্জশিট পেশ।
• ২৫ জুলাই, ২০১১: চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু। মনমোহন সিংহ ও পি চিদম্বরমকে সাক্ষী করতে চাইলেন রাজা।
• ২২ অক্টোবর, ২০১১: রাজার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন। • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১২: রাজার আমলে দেওয়া ১২২টি টুজি লাইসেন্স বাতিল সুপ্রিম কোর্টে।
• ৯ মে, ২০১২: জামিনের আর্জি জানালেন রাজা।
• ১৫ মে, ২০১২: জামিন পেলেন রাজা। |
|