দিন পাঁচেক আগে আসানসোলে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী। তাঁর পরিবারের তরফে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও তাতে নির্দিষ্ট কারও নাম করা হয়নি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হদিসও মেলেনি।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানানো হয়েছে, কৌশিক দাশগুপ্ত নামে ওই ব্যবসায়ী ‘চেন মার্কেটিং’ জাতীয় ব্যবসায় যুক্ত (যদিও তিনি ‘বাজার সমীক্ষা’র কাজ করেন বলে তাঁর স্ত্রীর দাবি)। পৈতৃক বাড়ি কলকাতার গড়িয়া মিলন পার্ক এলাকায়। শুভব্রত দাশগুপ্ত নামে ব্যবসায় তাঁর এক সঙ্গীও আছেন। গত ১০ মে তিনি আসানসোলে যান। পরের দিন, ১১ মে রাত থেকে পরিবারের লোকজন আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
|
কৌশিক দাশগুপ্ত |
আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, ১১ মে সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ কৌশিকবাবু হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রাত থেকে তাঁর দু’টি মোবাইল ফোনই বন্ধ। ১২ মে তাঁর স্ত্রী পিয়ালি দাশগুপ্ত পাটুলি থানায় বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সোমবার আসানসোলে গিয়ে তিনি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এডিসিপি বলেন, “ব্যবসার জন্য উনি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, আমরা তেমন কয়েক জনকে চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।” কৌশিকবাবুর সঙ্গী শুভব্রতবাবুর সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ঢাকুরিয়ায় মহারাজা টেগোর রোডে কৌশিকবাবুদের মূল অফিস। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁরা ‘এজেন্ট’ নিয়োগ করছিলেন। বর্ধমান ও দুর্গাপুরে তাঁরা বেশ কিছু এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। সেই উদ্দেশ্যে আগেও একাধিক বার আসানসোলে গিয়েছেন কৌশিকবাবু (যদিও এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয় বার আসানসোলে গিয়েছিলেন বলে তাঁর স্ত্রীর দাবি)। এ বার তিনি সেন র্যালে রোডে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। ঘটনাচক্রে, ১০ মে ভোরেই আসানসোলে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অর্পণ খুন হন। তাঁর সঙ্গে কৌশিকবাবুর ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল বলে একটি সূত্রে পুলিশের কাছে খবর এসেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, মাসখানেক আগে দু’জনে বৈঠক করেছেন, এ বারও তাঁদের দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই অর্পণবাবু খুন হয়ে যান। তবে এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বলেন, “অর্পণ খুনের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগসূত্র এখনও আমরা পাইনি।” সোমবার রাতেই আসানসোল থেকে ফিরেছেন পিয়ালিদেবী। কয়েক দিনের দুশ্চিন্তা ও ছোটাছুটি সত্ত্বেও ভেঙে পড়েননি। বরং বৃদ্ধা মা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। দক্ষিণ কলকাতার কাঁকুলিয়া রোডে মায়ের ফ্ল্যাটে বসেই তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার (১০ মে) ফোনে কৌশিক জানিয়েছিল, ঠিক মতো আসানসোলে পৌঁছে গিয়েছে। পরের দিন সকালেও কথা হয়।” কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিলেন কৌশিকবাবু। মিলন পার্কের বাড়িতে বসে তাঁর মা মীরাদেবী বলেন, “ওর কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। শুক্রবার আসানসোল থেকেই ফোন করে বলেছিল, ওষুধপত্র ঠিক মতো খেয়েছে।” |