দুর্ঘটনা নয়, অটোর উপরে গাছের ডাল ভেঙে চার মহিলার মৃত্যুকে ‘খুন’ বলেই মনে করছেন অনেকে। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন বনগাঁর আমলাপাড়ার বাসিন্দা বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়। রবিবার অফিসের কাজেই গাইঘাটায় যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন বৈশাখীদেবী। বনগাঁয় ‘সাংস্কৃতিক কর্মী’ হিসাবে নাম ছিল তাঁর। পরিবার-পরিজন ছাড়াও তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকগ্রস্ত বনগাঁর সাংস্কৃতিক মহল। তাঁরা জানালেন, অভিনয়-আবৃত্তিতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করা বৈশাখী। |
বনগাঁর সাংস্কৃতিক কর্মী বিশ্বজিৎ ঘোষের কথায়, “আমরা খুব ঘনিষ্ঠ এক মানুষকে হারালাম। কিন্তু এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। স্রেফ খুন করা হল ওঁকে!” চোখের সামনে কাঠ চুরি ঘটতে দেখেও কেন পুলিশ-প্রশাসনের কেউ মুখ খোলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বজিৎবাবুর মতো অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এই ঘটনা দিনের পর দিন চলছে। সব জেনে-শুনেও কেউ কোনও প্রতিবাদ করে না। কাঠচোরেদের সঙ্গে গরুপাচারকারীদেরও ‘আঁতাঁত’ আছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
গাইঘাটার লক্ষ্মী বিশ্বাসেরও মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়। তাঁর পরিবারের লোকজনের ক্ষোভের সুর চড়া। বক্তব্য, “এ আবার দুর্ঘটনা নাকি! দিনেদুপুরে খুন করা হল সকলকে।” দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে সদ্যপ্রসূতি এক আত্মীয়াকে দেখতে এসেছিলেন সীমা মজুমদার। ওই অটো ধরেই ফিরছিলেন গাইঘাটার রাজাপুরের বাড়িতে। দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে আনা হয় সেই হাসপাতালেই। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। দুর্ঘটনায় আর এক মৃত আসুরা বিবি থাকেন গাইঘাটার বকচরায়। বনগাঁয় ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন এ দিন। তাঁর দুই আত্মীয়া তারামনি বিবি ও সকুরা বিবি বনগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারামনির কথায়, “ক’দিন আগে ও এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। গলব্লাডার স্টোন অস্ত্রোপচার হয়। কিছু দিন আগেই বাড়ি ফেরে। আবার পেটে ব্যথা হওয়ায় আমরা ডাক্তার দেখাতে এনেছিলাম। কী যে হয়ে গেল!”
বস্তুত, পুলিশ-প্রশাসনের উপরে এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। দেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পরে সকলকে ‘বুঝিয়ে-সুঝিয়ে’ দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ। |