গাছের দায়িত্ব কার, চাপান-উতোর
চোরেদের কাটা ডাল অটোয়, মৃত ৪ মহিলা
নগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত যশোহর রোডের দু’ধারের বেশ কিছু প্রাচীন গাছ ‘অবৈধ’ ভাবে কেটে বিক্রি হচ্ছে, অথচ হুঁশ নেই প্রশাসনের এই অভিযোগ ছিলই স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু ‘প্রাত্যহিক’ এই ঘটনা রবিবার অন্য মাত্রা পেল। এ দিন গাইঘাটার মণ্ডলপাড়ার কাছে একটি শিরীষ গাছের উপরের দিকের ডাল কাটা চলছিল ‘অবাধে’ই। কিন্তু নীচে দিয়ে যাওয়া একটি যাত্রী বোঝাই অটোরিকশার উপরে ওই গাছের একটি কাটা ডাল ভেঙে পড়ায় প্রাণ গেল চার মহিলা যাত্রীর।
এর পরেই ওই কাঠ চুরিতে জড়িত অভিযোগে ভোলা বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করে জনতা। ঘটনাস্থলে মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ভোলাকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য। দুর্ঘটনার জেরে যশোহর রোডে বিশাল যানজটও হয়।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় (৫০), লক্ষ্মী বিশ্বাস (৪২) এবং আসুরা বিবি (৩৬)। বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সীমা মজুমদারকে (৩২) মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। জখম হন অটো-চালক রুদ্র মজুমদার এবং তারামনি বিবি ও সকুরা বিবি নামে আরও দুই যাত্রী। সকলেই ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৈশাখীদেবী বনগাঁর আমলাতলার বাসিন্দা। বাকি হতাহতদের বাড়ি গাইঘাটার বিভিন্ন এলাকায়।
গাইঘাটার রাস্তায় পড়ে দুই যাত্রী।
সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাস্য, একমাত্র প্রাণের বিনিময়েই কি পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ ফেরে? কেননা, ক’দিন আগেও হাবরায় মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে জখম হন কয়েক জন। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনকে তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে ক্ষোভ এলাকাবাসীর। সরকারি বিভিন্ন মহল পরস্পরের উপরে ‘দায়’ চাপাতেই ব্যস্ত ছিল বলে দাবি করেন তাঁরা। প্রশ্ন তুলেছেন, এ দিনের দুর্ঘটনার দায় কার!
বন দফতর ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, রাস্তার ধারের গাছ দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুরসভা, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির। গাছ মারা গেলে বা ভেঙে পড়লে বন দফতরের অনুমোদনসাপেক্ষে তা বিক্রি করে সেই টাকাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পায়। উত্তর ২৪ পরগনার বনাধিকারিক কৌশিক সরকার বলেন, “শুকনো বা ভেঙে পড়া গাছ বিক্রির জন্য আমাদের দফতরের অনুমতি লাগে। একটি গাছ কাটা হলে, বদলে আরও ৬টি চারা পুঁতে দেওয়ার
গাছ কাটার অভিযোগে
ধৃত ভোলা বিশ্বাস।
নিয়ম। কিন্তু যে এলাকা দিয়ে রাস্তা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা পুরসভা গাছগুলি দেখভালের দায়িত্বে থাকে।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (ডিভিশন-৫) নির্বাহী বাস্তুকার জয়ন্ত সেনের কথায়, “গাছ চুরির খবর পেলেই পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু রাস্তার ধারে গাছের দেখভাল আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।” অথচ, সংশ্লিষ্ট চাঁদপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান মণিমালা বিশ্বাস বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ বা গাছ কাটা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এ দিন যে গাছের ডাল কাটা হচ্ছে, তা আমরা জানতামও না।”
যশোহর রোডের ধারে শুধু শিরীষ নয়, বেশ কিছু মেহগনি, শিশু, লম্বু, বট প্রভৃতি গাছও রয়েছে। গাছ মারা গেলে তো বটেই, সুযোগ পেলে জীবন্ত গাছও চোরেরা কেটে পাচার করে দেয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রয়েছে প্রাচীন গাছগুলির দেখভাল নিয়েও। রাস্তার দু’ধারে যে অজস্র ছোটখাটো হোটেল, চায়ের দোকান রয়েছে, তার অনেকগুলি গজিয়ে উঠেছে গাছের আশপাশে। গরম জল, চা-পাতা এবং আরও নানা অবর্জনা ফেলা হয় গাছের গোড়ায়।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান: বনগাঁ-গাইঘাটা রুটের অটোটি দুপুরে দেড়টা নাগাদ গাইঘাটার দিকে যাচ্ছিল। মণ্ডলপাড়ার কাছে রাস্তার ধারে একটি গাছের শুকনো ডাল কাটছিল স্থানীয় দেবীনগর এলাকার কয়েকজন যুবক। সেই সময় হাত পাঁচেক লম্বা এবং আধ হাত চওড়া একটি ডাল ভেঙে পড়ে অটোর উপরে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটোটি।
এ দিনের দুর্ঘটনা পরিবহণের ‘অব্যবস্থা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত অটোটিতে ছিলেন ৭ জন। যদিও পরিবহণ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, চালক-সহ চার জন থাকার কথা অটোতে। জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সরকারি প্রতিনিধি গোপাল শেঠ বলেন, “বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। মৃতদের পরিজনেরা অবশ্য বলছেন, “প্রশাসন আগেই নড়েচড়ে বসলে এতগুলো প্রাণ এ ভাবে বেঘোরে যেত না!”

ছবি: পার্থসারথি নন্দী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.