প্রতিদিন যেন নদী এগিয়ে আসছে একটু একটু করে। কারও ঘর থেকে ৩০ মিটার আবার কারও ঘর থেকে ৫০ মিটার দূর দিয়ে বইছে ভাগীরথী। শুরু হয়ে গিয়েছে ভাঙন।
রানাঘাটের ন’পাড়া-মুসুন্ডা পঞ্চায়েতের গোঁসাইচর এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেরই ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানান, মাঝেমধ্যেই নেতা, মন্ত্রীরা আসেন। আমাদের কথা শোনেন। কিন্তু অন্তর দিয়ে ভাবেন না। ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করেন না কেউই।
রানাঘাট শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে গোঁসাইচর গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব বিশ্বাসের আফশোষ, “এক সময়ে ৬০ বিঘা চাষের জমি ছিল। এখন আর কিছুই নেই।” তাঁর স্ত্রী দেবী বিশ্বাস বলেন, “গঙ্গা আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। অন্যের জমিতে বাস করছি এখন। নদী যে ভাবে এগিয়ে আসছে আর বেশিদিন থাকতে পারব বলে মনে হয় না।” আরেক গ্রামবাসী জানান, এক সময় আমরা চার ভাই এখানে বাস করতাম। দু’ভাই অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। আমাদের এখনো অন্য ঠাঁই না জোটায় এখানে রয়েছি। জানিনা এরপরে কোথায় যাব। কয়েকদিন আগেই নদীগর্ভে চলে গিয়েছে ধর্ম মণ্ডলের বাড়ি। এখন বাস করছেন ত্রিপলের নীচে। তিনি বলেন, “নদী আমার ভিটে খেয়েছে। আর পারছি না।” |
স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের আবিররঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “সত্যিই ওই এলাকার মানুষেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের কুমার বিশ্বাস বলেন, “মাঝেমধ্যেই ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে পরিবারগুলো। কয়েকদিন আগেও আটটি পরিবারের মাথার উপর থেকে ছাদ চলে গিয়েছে। কোনওরকমে ত্রিপলের নীচে আছেন তাঁরা।” তিনি আরও বলেন, “শুধু বসতবাড়িই নয়, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি চলে যাচ্ছে গঙ্গা গর্ভে। জমি হারিয়ে মানুষ দিন মজুরে পরিণত হচ্ছেন।”
ভাঙনের প্রভাব পড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও। গোঁসাইচর নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত নন্দ বলেন, “ভাঙনের জন্য মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কমে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা। এখন মাত্র ৪৯ জন ছাত্র রয়েছে।” প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হারানচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “একসময় ওই বিদ্যালয়ে ৩৫০ জন পড়ুয়া ছিল। অনেক লড়াই করেছি। সবার কাছে গিয়েছি। ভোট বয়কটও করেছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
এত কিছুর পরে কী বলছে প্রশাসন। সমস্যার কথা তো অজানা নয় তাঁদের। রানাঘাট মহকুমার সেচ আধিকারিক অলোক নাথ বলেন, “অর্থনৈতিক কারণে ওই জায়গার ভাঙন রোধে কিছু করা যাচ্ছে না। এলাকাটি আমাদের নজরে আছে।” |