যে কোনও ‘বিগ’ ম্যাচে হেরে গেলে কী করেন নিয়ে উত্তর দিতে গিয়ে নামী টেনিস লিখিয়ে বাড কলিন্সকে অদ্ভুত একটা কথা বলেছিলেন রজার ফেডেরার। “মাঝে মাঝেই সারা রাত ঘুম আসে না। জেগে থাকি। মাঝে মাঝেই মনে হয় কেন খেলছি? না খেললেই তো এ ভাবে রক্তাক্ত হতে হয় না!”
বিনিদ্র রজনী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শনিবার রাতে কাটিয়েছেন কি না বলা যাচ্ছে না। কী হতে পারত আর কী হয়েছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আধুনিক ক্রীড়াবিদের থাকে না। দ্রুত চলে আসে পরের সকাল। চলে আসে পরের ম্যাচ। সেখানে ইডেনের ম্যাচের কাঁটা পেন্ডুলামের মতো কী ভাবে ওঠানামা করেছে, তা স্রেফ অতীত বই কিচ্ছু নয়। তবু হতাশার ঢেউ গ্রাস করেই। রজার ফেডেরারকে করে, সচিন তেন্ডুলকরকে করে, লিওনেল মেসিকে করে। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ছিটকে গিয়ে সারা রাত ঘুমোননি সচিনও। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও করে। না হলে কেনই বা আইপিএল ফাইভে তিনি নেবেন প্রথম ‘ব্রেক’? যিনি এ বারের টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাননি, যিনি কেকেআর ম্যাচের আগের সন্ধেয় বিমানবন্দর থেকে বাড়ি গিয়েই রাতের মধ্যেই ফিরে এসেছেন হোটেলে, তিনিই কি না রবিবার টিমের সঙ্গে পুণেতে এলেন না! টানা ম্যাচ খেলে যাওয়া, হোটেল আর মাঠ করা থেকে একদিনের ছুটি। কেন? বিরক্তি, হতাশা, হয়তো বা অভিমানও।
ধরেই নিয়েছেন এ বারের অভিযান আপাতত শেষ, তা যতই আইপিএলে থাকুক শেষ চার ম্যাচে চারটেই জিতে অলৌকিক ভাবে শেষ চারের দরজা খুলে যাওয়ার উদাহরণ। জীবনে যেখানে সাত নম্বরে ব্যাট করেননি, সেখানে কেকেআর ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে এতটা নেমে আসা মনঃপূত হওয়ার কথা নয়। হয়ওনি। বরাবর মনে করে এসেছেন, তাঁর খেলাটা নীচে নেমে এসে খেলার নয়। সে-ই নীচে খেলতে হয়েছে, কেকেআর ম্যাচও বেরোয়নি। পরের চারটে ম্যাচে কী হবে না হবে, তা নিয়ে বিরক্তিতে আর ভাবতেই চাননি একটা সময়।
রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ যখন আমদাবাদ হয়ে ফের পুণের টিম হোটেলে প্রত্যাবর্তন ওয়ারিয়র্সের, সৌরভ তখন বেহালার বাড়িতেই। সোমবার আসবেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ বোঝানোর পরে একটা সমঝোতাসূত্র অবশ্য বেরিয়েছে। যেখানে কাল সৌরভ পুণেতে আসার পরই ঠিক হবে পরের ম্যাচে কোন টিম খেলবে। টিমে কার কী ব্যাটিং অর্ডার হবে। তাঁরই সব ঠিক করার কথা।
কর্তাদের কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে, ইডেনে কেকেআর ম্যাচে ফিনিশারের রোলে বেশ মানিয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। এ বারের আইপিএলে সেরা ইনিংসটা ইডেনেই খেলছিলেন। বলা হচ্ছে, রজত ভাটিয়ার বলটা মাঠের বাইরে পড়লেই রবিবারের সকালটা গোটা টিম ও সৌরভের কাছে একেবারে অন্য রকম হত। টিম হোটেলে এক ক্রিকেটার বলছিলেন, “মুম্বইয়ের মতো ইডেনেও আমাদের জেতা ম্যাচ ছিল। কপাল খারাপ না হলে দাদির খেলা শটটা ছয়ই হওয়ার কথা। দশটায় সাতটা ছয় হবে। ইডেনেই হল না!”
হাহুতাশকে ব্যাকফুটে পাঠালেও পুণের জন্য কোনও ‘যদি-কিন্তু-হয়তো’-র গল্প আপাতত নেই, বাংলা হিসেব একটাই। চারটেতেই জিততে হবে। সেমিফাইনাল হচ্ছে না ধরে নিয়েই। তার মধ্যে পরশুদিন বেঙ্গালুরু তথা ক্রিস গেইল, ১১ মে ঘরের মাঠে রাজস্থান তথা আজিঙ্ক রাহানে এবং ১৩ মে জয়পুরে ফের রাজস্থান। তার পরেই আবার সেই দ্বৈরথ— সুব্রত রায় স্টেডিয়ামে ১৯ মে কেকেআর ম্যাচে থাকছে ইডেনের বদলা নেওয়ার সুযোগ।
অতলে ডুবে গিয়েও হঠাৎ অতিমানবিক সব পারফম্যান্স-সহ ভেসে ওঠার নজির আইপিএলে নেই, তা নয়। মু্ম্বইয়ের আছে, চেন্নাইয়ের আছে। লিগ টেবিলের চড়াই-উতরাই এখনও যে জায়গায়, দিল্লি বাদে কারওরই শেষ চারে যাওয়ার টিকিট কনফার্মড হয়নি। সে দিক দিয়ে দেখলে অঙ্কের বিচারে সব আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি পুণের। ওলটপালট এখনও হতে পারে, কিন্তু সম্ভাবনা ক্ষীণ।
অধিনায়কহীন পুণে টিমের রবিবারের সন্ধে? টিম হোটেলের কফিশপে বসে সচিনের ব্যাটিং দেখা। ডোয়েন স্মিথের তিন বলে ১৪ তুলে শেষ ওভারে মুম্বইকে জিতিয়ে দেওয়া। স্মিথ-পার্নেল-আলফান্সো টমাসরা টিভিতে দেখছিলেন মু্ম্বই-চেন্নাই ম্যাচ। তামিম ইকবাল এত দিন মুখ শুকনো করে ঘুরেছেন, একটা ম্যাচেও জায়গা হয়নি। শোনা যাচ্ছে, মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু ম্যাচে তামিমকে খেলানো হতে পারে। |