|
|
|
|
আরামবাগে ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ |
মিলছে না উপযুক্ত জমি, সঙ্কটে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
উপভোক্তা নির্বাচনের কাজ দ্রুত গতিতে চললেও আরামবাগ মহকুমায় জমির সমস্যায় রাজ্য সরকারের ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পটি ঘিরে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কেননা, উপযুক্ত জমি মিলছে না বলে অভিমত প্রশাসনের কর্তাদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা হল ১০-১৫টি পরিবারের বসবাসের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনতে হবে বা খাসজমি ব্যবহার করতে হবে। পরিবারপিছু জমি পাবে ৩ কাঠা। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেনার ক্ষেত্রে সহকারী জেলা উপ-নিবন্ধকের ধার্য মূল্যই চূড়ান্ত। জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপভোক্তাদের মতামত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জমিতে বসবাসের জন্য সংযোগকারী রাস্তা, পানীয় জল, পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা, বিদ্যুতের লাইন ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দিষ্ট করতে হবে। জমি চূড়ান্ত করার আগে এ সংক্রান্ত ‘ভূমি ক্রয় ও ভূমি বিতরণ কমিটি’র অনুমোদন বাধ্যতামূলক। সম্পূর্ণ ভূমিহীন এবং বাস্তুজমিহীন খেতমজুর, গ্রামীণ কারিগর বা মৎস্যজীবী পরিবার যাঁদের উত্তরাধিকার সূত্রেও কোনও জমি নেই, তাঁরা এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবেন। ইন্দিরা আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের তালিকাও এই প্রকল্পে বিচার্য।
কিন্তু কোথায় সমস্যা?
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। যদি বা খাসজমি কিছু জমি পাওয়া যাচ্ছে, তা সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মিলছে না। কোথাও আবার জমির মালিক আকাশছোঁয়া দাম চাইছেন। অথবা উপভোক্তাদের পছন্দ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির সার্বিক রূপায়ণে সঙ্কট দেখা দিয়েছে।” হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রবীন্দ্রনাথ জানা বলেন, “জেলায় জমি কেনার সমস্যা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যে জমি পাওয়া যাচ্ছে, তা বসবাসের উপযোগী নয়। খাসজমিকে কেন্দ্র করে প্রকল্প রূপায়ণের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কিন্তু অধিকাংশ খাসজমি আবার বাড়ি নির্মাণের উপযোগী নয়।”
প্রকল্পটি রূপায়ণের দায়িত্ব ‘ভূমি ক্রয় ও ভূমি বিতরণ কমিটি’র। প্রতিটি ব্লক স্তরে ৭ জনের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক। বাকি ৬ সদস্য হলেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সমিতির বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, সংশ্লিষ্ট বিডিও, সংশ্লিষ্ট মহকুমা কৃষি আধিকারিক, জেলার সহকারী উপ-নিবন্ধক এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য জেলা প্রশাসনকে রাজ্য সরকার চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্দেশিকা-সহ চিঠি পাঠায়। কিন্তু তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত জমি সমস্যার কারণে মহকুমার কোথাও প্রকল্পটি সামগ্রিক ভাবে রূপায়ণ করা যায়নি।
জমি পেতে কী রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ‘ভূমি ক্রয় ও ভূমি বিতরণ কমিটি’?
গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “উপযুক্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠ, পতিত খাল, বিল, ডোবা জাতীয় কিছু কিছু জমি পাওয়া গেলেও উপভোক্তাদের আবার তা পছন্দ হচ্ছে না।’’
খানাকুল-১ ব্লকের বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রামনগরে ব্যক্তিমালিকানাধীন দু’টি জমি পাওয়া যাচ্ছে বলে চিহ্নিত করেছিল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কিন্তু জমির মালিক শতক পিছু ১ লক্ষ টাকা দাম হাঁকছেন।” সমস্যার একই কারণ দেখাচ্ছেন অন্য ব্লকগুলির বিডিও-রাও।
এ প্রসঙ্গে জমি-দালালদের ‘দৌরাত্ম্যে’র কথাও তুলেছেন বিভিন্ন ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার উন্নয়ন আধিকারিকেরা। জমি-দালালরাই জমির মালিকদের হয়ে দর হাঁকছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, খাসজমি পাওয়া গেলেও সেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় উপভোক্তাদের পছন্দ হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটাতে কী পরিকল্পনা করছে মহকুমা প্রশাসন?
মহকুমাশাসক বলেন, “প্রতি ১৫ দিন অন্তর ব্লক এবং মহকুমা স্তরে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রচার চালানো হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা আশা কেটে যাবে।” |
|
|
|
|
|