সম্পাদকীয় ২...
ধ্যানেই মোক্ষ
ত এক বৎসরে মন্ত্রী হিসেবে মদন মিত্র তাঁহার কর্মদক্ষতার প্রমাণ দেন নাই, ঘোর সি পি আই এম-ও এমন অপবাদ দিবে না। তাঁহার প্রধান কৃতিত্ব, তিনি প্রচলিত ছকের বাহিরে ভাবিতে পারেন। কলিকাতার ট্যাক্সিচালকরা অতি অল্পেই যাত্রীদের সহিত দুর্ব্যবহার করিতেছেন, পরিবহণ মন্ত্রী এই সংবাদটি পাওয়ামাত্র তাহার সমাধান পেশ করিলেন। তিনি জানাইলেন, ডিপোয় ডিপোয় ট্যাক্সিচালকদের জন্য ধ্যানের শিবিরের আয়োজন করা হইবে। ট্যাক্সিচালকরা নিয়মিত ধ্যানে বসিবেন। চিত্ত আর চঞ্চল হইবে না, জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইবে, হাসিমুখে যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়াই তখন তাঁহাদের ধ্যানজ্ঞান হইবে। ট্যাক্সিচালক এবং যাত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যে বর্তমানে বিশেষ প্রীতিজনক নহে, অনুমান করা চলে, সংবাদটি মন্ত্রী সম্প্রতি পাইলেন। তাহার বিশেষ কারণও আছে বইকী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলিকাতায় এক ট্যাক্সিচালক এক কলেজছাত্রীর সহিত ‘স্বাভাবিক’ দুর্ব্যবহার করেন। এবং সেই ছাত্রীর পিতা পরিবহণ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। প্রশ্ন হইল, পরিবহণ বা অন্য কোনও দফতরের মন্ত্রীর সহিত বিশেষ ঘনিষ্ঠতা না থাকিলে ট্যাক্সি চড়া যাইবে না, এমন নিয়ম হইলে মুশকিল। মন্ত্রীরাও তো মানুষ তাঁহাদের পক্ষে কত জনের সহিত ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা সম্ভব? পরিবহণ মন্ত্রী সমস্যাটি বুঝিয়াছেন। বুঝিয়া, ট্যাক্সিচালকদের ধ্যানে বসাইবার দাওয়াইটি ভাবিয়া বাহির করিয়াছেন। অতঃপর, শান্তিকল্যাণ। তবে, যাত্রীরাও নিয়মিত ধ্যান করিবেন কি না, সে বিষয়ে মন্ত্রী কিছু বলেন নাই।
সাধারণ বুদ্ধি বলিবে, আধ্যাত্মিক পথে না হাঁটিয়াও এই সমস্যার সমাধান করা যাইত। প্রথম কথা, ট্যাক্সিভাড়া সংশোধন করা প্রয়োজন। গত দুই বৎসরে ডিজেলের দাম অনেকখানি বাড়িয়াছে, কিন্তু ট্যাক্সিভাড়া বাড়ে নাই। ফলে, ট্যাক্সি চালাইয়া লাভের পরিমাণ কমিয়াছে। অন্য দিকে, মূল্যস্ফীতিও কম হয় নাই। ফলে, যাঁহারা ট্যাক্সি চালাইয়া জীবিকানির্বাহ করেন, তাঁহারা ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করিতেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু স্বঘোষিত ভাবেই জেদি, তাই এই রাজ্য হইতে যুক্তিকে কুলার বাতাস দিয়া বিদায় করা হইয়াছে। অতএব, ট্যাক্সিচালকদের দাবি আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য কি না, ট্যাক্সিভাড়া কতখানি বাড়াইলে তাঁহাদের সমস্যার সমাধান হয়, এই প্রশ্নগুলির উত্তর ভাবিবার চেষ্টাই হয় নাই। ক্ষমতাপ্রাপ্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী ভাবিতে পারেন। তবে, ট্যাক্সিচালকদেরও ভাবিতে হইবে। এখন ট্যাক্সির যে ভাড়া স্বীকৃত, সেই ভাড়ায় যদি তাঁহাদের না পোষায়, তবে ভিন্ন পেশা দেখিয়া লউন। ট্যাক্সিই চালাইতে হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। কিন্তু, ট্যাক্সি চালাইলে সভ্য সমাজের দস্তুর মানিয়া চলিতে হইবে, এই বাধ্যবাধকতা আছে। যাত্রীর সহিত অসভ্যতা করিলে যাহাতে শাস্তি হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সেই দায়িত্ব প্রশাসনের। কলিকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করিবার একটি ব্যবস্থা আছে বটে, কিন্তু যে শহরে অতি বিপদে পড়িয়া ১০০-য় ফোন করিলেও পুলিশি সাহায্য মিলে না, সেখানে ট্যাক্সির হয়রানিতে পুলিশ ব্যবস্থা করিবে, এই কথা বিশ্বাস করা শহরবাসীর পক্ষে কঠিন। বিশ্বাস ফিরাইয়া আনিবার দায়িত্ব পুলিশের, প্রশাসনের। বেতমিজ ট্যাক্সিচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হউক। এবং, কেহ অভিযোগ জানাইলে ব্যবস্থা করিবার পূর্বে যেন মন্ত্রীর সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠতার বিচার না করা হয়। ধ্যানশিবির আরম্ভ হউক, কিন্তু প্রশাসনিক তৎপরতাও জরুরি। সাবধানের মার নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.