সম্পাদক সমীপেষু...
বিয়ে মানে কিন্তু দু’জনে ফুল কুড়োতে যাওয়া নয়
শিলাদিত্য সেনের ‘প্রেম=দখল’ (১-৪) শীর্ষক রচনায় বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা বিবাহ-বিমুখতার কারণ হিসেবে লেখক মুখ্যত পুরুষের দখলদারির যে-মনস্তত্ত্বটি তুলে ধরেছেন তা সমর্থনযোগ্য। কিন্তু তার বাইরেও কিছু বিষয় রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’-র একটি অংশে কপালকুণ্ডলা তার ননদ শ্যামাসুন্দরীকে বলছে ‘যদি জানিতাম যে স্ত্রীলোকের বিবাহ দাসীত্ব, তবে কদাপি বিবাহ করিতাম না’। কপালকুণ্ডলা কেন বিবাহের প্রতি এমন বিরূপ মনোভাবাপন্ন হল? কারণ, বিবাহপূর্ব মুক্ত জীবনের সঙ্গে বিবাহপরবর্তী বন্ধন-জীবনকে মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি ছিল না তার। লেখক মির্চা এলিয়াদি তাঁর ‘লা নুই বেঙ্গলি’ উপন্যাসে এই জায়গাটিকে খুব চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিয়ে মানে কিন্তু দু’জনে একত্রে ফুল কুড়োতে যাওয়া নয়। বিবাহের ভিত্তি হল স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ আর ভাগ্যের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া। আমাদের সমাজব্যবস্থায় কি মেয়ে, কি ছেলে বিয়ের ক্ষেত্রে এটি মাথায় রাখে না। ফলে, মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে এবং বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবতে থাকে অথবা বিবাহ-বিমুখতায় ভোগে। নান্দীকারের ‘অন্ত আদি অন্ত’ নাটকে যে-মেয়েটির বিবাহ বিচ্ছেদের কথা আলোচিত হয়েছে, সেখানে তার সাবেক প্রেমিক স্বামীটির দখলদারির প্রবণতা হয়তো ডিভোর্সের একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু মূল মনস্তত্ত্বটি লুকিয়ে রয়েছে বিবাহ-পূর্ববর্তী ও বিবাহ-পরবর্তী জীবন সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা না-থাকায়। এখানে আরও একটা বিষয় ভাবা দরকার, বাড়িতে অতিথি এসেছে, তাকে চা দেবে কে? বিলক্ষণ স্ত্রী। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী এটাই পুরুষ-মনস্তত্ত্ব।
নান্দীকারের ‘অন্ত আদি অন্ত’ নাটকের একটি দৃশ্য।
কিন্তু আলোচ্য মেয়েটি উচ্চবিত্ত সমাজভুক্ত। সেখানে এই মানসিকতা থাকলে সংঘাত অনিবার্য। সমাজের যে-শ্রেণিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর, সেখানে ‘দখল’-এর মানসিকতা উভয়ের মধ্যেই থাকে। প্রচলিত বিবাহব্যবস্থা অনুযায়ী সংসার=স্বামীর টাকা+স্ত্রীর রূপ। কিন্তু উচ্চবিত্ত সমাজে সংসার= স্বামীর টাকা+স্ত্রীর (রূপ+টাকা)। ফলে, এখানে মেয়েদের দখলদারির সম্ভাবনাই বেশি। দখলদারি বা আধিপত্যের মানসিকতা সব সমাজেই রয়েছে। এই মানসিকতা কোনও সুস্থ সমাজ তৈরি করতে পারে না। পুরুষ ও নারী উভয়কেই এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দাম্পত্য সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে গেলে আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটি ফুলের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ নজর করতে থাকলে একটা সময় ফুলটাই আর চোখে পড়ে না। বিয়ের পর জীবনের অনিবার্য বাস্তবতার চাপে একই রকম ভাবে দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্যটাই হারিয়ে যায়। প্রথম যে ফুলের সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ হয়েছিল, সেই ফুলটাই হারিয়ে যায়। তখন নাটকের ওই মেয়েটির মতো কিংবা নাটকের বাইরের মেয়েটির মতো ডিভোর্স নিয়ে একা থাকার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে ওঠে। ‘কপালকুণ্ডলা’-য় নবকুমারের প্রথম স্ত্রী পদ্মাবতী ওরফে লুৎফার জীবন দিয়ে দেখিয়ে গেছেন, প্রেমহীন জীবন কতটা ভয়ানক! তাই দাম্পত্য সম্পর্কের ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে, কিন্তু তাকে সরিয়ে প্রেম-মুগ্ধতার প্রথম ফুলটিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই সুন্দর জীবনের শর্ত।
সব চরিত্রেই দক্ষ
অভিনেতা নিরঞ্জন রায় চলে গেলেন। রাজেন তরফদারের ‘গঙ্গা’ খ্যাত সেই দাপুটে অভিনেতা নিরঞ্জন। পরে যাঁকে ঋত্বিক ঘটকের মাইলস্টোন ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় নীতার প্রেমিক ও নীতার বোনের স্বামী হিসাবে দেখা গিয়েছিল। তাঁর দুই নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী এবং মুম্বই প্রবাসী রুমা দেবী এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।
নিরঞ্জন রায়কে আমি চিনি আশুতোষ কলেজ থেকে। আমার থেকে দু’বছরের জুনিয়র। সেখানে বডিবিল্ডার নিরঞ্জন কলেজের ব্যায়ামাগারে সরসী গঙ্গোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে শ্রেষ্ঠ দেহীর পুরস্কার পান আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায়। পরে জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘মাস থিয়েটার্স’-এ যোগদান করে বিভিন্ন নাটকে অংশ নেন। তার মধ্যে মহাশ্বেতা দেবীর সার্কাসের পটভূমিকায় লেখা ‘প্রেমতারা’ উপন্যাসের বিতর্কিত নাট্যরূপ একটি।
ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় নিরঞ্জন রায় ও সুপ্রিয়া চৌধুরী
জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর অভিনয় জীবনের মেন্টর। তাঁর বেশ কিছু সিনেমার অভিনয় তো তাঁকে আরও উজ্জ্বল ও খ্যাতনামা করেছে। ঝকঝকে চেহারায় টাই-স্যুট পরা ভিলেন অথবা চাষাভুষো গ্রাম্য চরিত্রে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। যত দূর জানি, নিরঞ্জন বরাবর বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে বাংলা সিনেমা একজন বিশিষ্ট অভিনেতাকে হারাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.