বিদ্যুতের টানাটানি ছিলই। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঝড়বৃষ্টির জেরে বড় রকমের বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে বরাকবাসী। খোদ শিলচরে বিদ্যুৎ সামান্য মিললেও করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি শহর বা উপত্যকার গ্রামাঞ্চলে দুর্ভোগ একেবারে মাত্রাছাড়া। করিমগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ক’দিন টানা অন্ধকারে ডুবে ছিল। কল-কারখানায় মার খাচ্ছে উৎপাদন, ফটো-কপিয়ারের মতো বিদ্যুৎনির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। সঙ্কটে উপত্যকার চা শিল্পও। বিদ্যুৎ-যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্য অসম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুধীর দাশগুপ্ত জানান, ঝড়ের দাপটে অনেক স্থানেই উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, ছিঁড়েছে তার। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে নিজস্ব সমস্যা কিছু ছিলই। ঝড়ের দৌলতে তা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই বিন্নাগুড়ি ও বঙ্গাইগাঁওয়ের মধ্যে ডাবল সার্কিট লাইনের দুটি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই লাইনেই বিদ্যুৎ কিনে আনা হয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে। ফলে এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে শুধু বরাক উপত্যকা নয়, রাজ্য জুড়েই বিদ্যুৎ সমস্যা তীব্রতর হয়েছে। তবে এই বিদ্যুৎকর্তার আশা, চলতি সমস্যা দিন কয়েকের মধ্যেই মিটে যাবে।
সুধীরবাবু জানান, রাজীব গাঁধী বিদ্যুৎ প্রকল্পে বহু নতুন এলাকায় লাইন দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে উপত্যকায় এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা ১০৩ মেগাওয়াট। কিন্তু রাজ্য স্তরের বিতরণ কেন্দ্র (এসএলডিসি) থেকে মেলে মাত্র ৪৫-৪৬ মেগাওয়াট। স্বভাবতই বিদ্যুতের অভাব লেগেই রয়েছে। লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এর মধ্যে ঝড়বৃষ্টি সমস্যা বাড়িয়েছে। করিমগঞ্জে প্রথম ঝড়-তুফানেই ১১ কিলোভোল্টের লাইনে প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। সারা দিনে ঠিকঠাক করা হলে রাতে ফের শুরু হয় প্রকৃতির তাণ্ডবলীলা।
সুধীরবাবুর অবশ্য আশা, বিদ্যুৎ কোম্পানিটি যে ভাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে খুব বেশি দিন বরাকবাসীকে এই সমস্যায় ভুগতে হবে না। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে উপত্যকায় চারটি সাব স্টেশন করা হচ্ছে। কাছাড়ে চিরুকান্দি ও ভাগায় দুটি এবং করিমগঞ্জের লামাজুয়ার ও হাইলাকান্দির সরসপুরে। অন্য প্রকল্পে করিমগঞ্জের মহাকল এবং কাছাড়ের পানপট্টিতেও সাব স্টেশন তৈরির কথা চলছে বলে সুধীরবাবু জানিয়েছেন।
এই বিদ্যুৎকর্তা আরও জানান, করিমগঞ্জের দুল্লভছড়ায় আগে থেকেই একটি সাব স্টেশন রয়েছে। তার ক্ষমতা বাড়াতে ১৬ এমভি-র একটি নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। শীঘ্রই এটি কাজ শুরু করবে। বিদ্যুৎ মিললে তার বিতরণে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য পরিকাঠামো শক্তিশালী করার প্রয়াস চলছে।
তিনি আরও জানান, মাস দুয়েকের মধ্যেই ত্রিপুরার পালাটানা প্রকল্পে উৎপাদন শুরু হলে অসমের বরাদ্দটুকু বরাক উপত্যকা ব্যবহার করতে পারবে। শিলচরের কাছে শ্রীকোণায় এ জন্য গ্রিড সাব স্টেশন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে। |