রাতের ভাড়া বাড়লেও দুর্ভোগ যে তাতে বিন্দুমাত্র কমেনি, ফের তার প্রমাণ পেল শহর কলকাতা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা এক কলেজছাত্রী চাহিদা মতো অতিরিক্ত ভাড়া না দেওয়ায় ট্যাক্সিচালক তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। ‘মেরে মুখ ভেঙে দেব’ থেকে শুরু করে ‘মুখটা মনে রাখলাম, পরে দেখে নেব’ রাত ন’টার সময়ে তারাতলার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘অকুতোভয়’ সেই ট্যাক্সিচালক এই ভাষাতেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। এর ঠিক দু’দিনের মাথায় প্রায় একই সময়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্যাক্সিচালকের ধাক্কায় জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দমদমের বাসিন্দা এক প্রৌঢ়।
জলধর রাহা নামে ওই প্রৌঢ়ের অভিযোগ, শনিবার রাত ন’টা নাগাদ ডাক্তার দেখিয়ে মেয়ে এবং স্ত্রীর সঙ্গে সেভেন ট্যাঙ্কসের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। হাতিবাগানের উত্তরা মার্কেটের সামনে বেশ কয়েকটি খালি ট্যাক্সিকে হাত দেখালেও তারা থামেনি। কিছুক্ষণ পরে একটি ট্যাক্সি থামে (গাড়ির নম্বর ডব্লিউবি ০৪ ডি ৯১৪২)। জলধরবাবু তাতে উঠতে যাচ্ছিলেন। গন্তব্য জানতে পেরেই চালক তাঁকে ধাক্কা মেরে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। অসুস্থ জলধরবাবুর তখন হতভম্ব অবস্থা। এর পরেও ওই রাস্তা দিয়ে আরও কয়েকটি খালি ট্যাক্সি তাঁদের প্রত্যাখ্যান করে চলে যায়।
প্রায় আধ ঘণ্টা রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকার পরে হেদুয়াগামী একটি ট্যাক্সিকে (ডব্লিউবি ০৪ টিএ ০০০৮) দাঁড় করান জলধরবাবুরা। তাঁদের অভিযোগ, অসহায় অবস্থা দেখে ওই ট্যাক্সিচালক মিটারের ভাড়ার থেকে ৩০ টাকা অতিরিক্ত চান। নৈশ ভাড়ার সময় না হওয়া সত্ত্বেও কেন অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে? জবাবে ওই ট্যাক্সিচালক সাফ বলেন, “টাকা দিতে পারলে উঠুন, নয়তো অন্য জায়গায় যান।” বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি হয়েই গাড়িতে ওঠেন তাঁরা।
জলধরবাবুদের অভিযোগ, চিড়িয়ামোড়ের কাছে পৌঁছে ওই ট্যাক্সিচালক দমদম রোডে না-ঢুকে গাড়ি নিয়ে সিঁথির দিকে চলে যান। পরে ঘুরে এসে দমদম রোডে পৌঁছন। জলধরবাবুর পরিবারের লোকেরা জানান, হাতিবাগান থেকে সেভেন ট্যাঙ্কসে যেতে মিটারে ৭৫-৭৬ টাকা ভাড়া ওঠে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০ টাকা যোগ করে মোট ১০৬ টাকা দিতে হয়েছে। বিষয়টি সবিস্তার ভাবে জানিয়ে রবিবার কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অভিযোগ জানানো হয় জলধরবাবুদের তরফে।
অনেকটা একই রকম অভিজ্ঞতা বাইপাস সংলগ্ন ভি আই পি বাজারের বাসিন্দা কৌশিক মাল ও তাঁর স্ত্রী কাজলের। বন্ডেল গেটের কাছে নিমন্ত্রণ সেরে বাড়ি ফেরার জন্য ট্যাক্সি খুঁজছিলেন তাঁরা। কোনও ট্যাক্সিই রাজি হয়নি। শেষে এক ট্যাক্সিচালক রাজি হলেন দ্বিগুণ ভাড়ার বিনিময়ে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কৌশিক বলেন, “তখন সবে রাত সাড়ে দশটা পেরিয়েছে। আমি আর আমার স্ত্রী বন্ডেল গেট থেকে ভি আই পি বাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি খুঁজছিলাম। পরপর আট-দশটা ট্যাক্সি সটান ‘না’ বলে দিল। তার পরে একটি ট্যাক্সি যেতে রাজি হল। কিন্তু চালক দাবি করেন, তাঁকে যাওয়া-আসা দুই খেপের ভাড়া দিতে হবে। নিরুপায় হয়ে আমরা শেষমেশ ওই ট্যাক্সিতেই উঠলাম।”
রাতে ট্যাক্সিচালকদের একাংশের এই যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে কী করছে প্রশাসন? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের জবাব, “স্নেহা দত্ত নামের কলেজছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী ওই ট্যাক্সিচালককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও যাত্রী ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে। আমরা ট্যাক্সিচালকদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। পাশপাশি ওঁদেরও দেখতে হবে, পরিষেবার ব্যাপারে যাত্রীদের যেন কোনও ক্ষোভ না থাকে।” বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পাবলিক ভেহিক্লস ডিপার্টমেন্টে জানালে ব্যবস্থা নিতে পারি।” |