আজ, সোমবার পায়ে হেঁটে মহাকরণে ঢুকতে হবে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব-সহ রাজ্যের সব আমলা-মন্ত্রীকে।
‘ভিভিআইপি’ অতিথি, মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকে ঘিরে যে ‘নিশ্ছিদ্র’ নিরাপত্তা-বলয় তৈরি করা হয়েছে, তাতে আপাতত এমনই নির্দেশিকার উল্লেখ রয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র সামনে (মহাকরণের ৬ নম্বর গেটে) গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হবে ওই আমলা-মন্ত্রীদের। এর পরে কয়েক পা হেঁটে মূল প্রবেশপথ পর্যন্ত এসে মহাকরণে ঢুকতে হবে তাঁদের। আর যে গাড়িগুলিতে চেপে তাঁরা ছয় নম্বর গেটে এসে নামবেন, পার্কিংয়ের জন্য সেগুলি চলে যাবে লায়ন্স রেঞ্জ এবং সংলগ্ন জায়গায়। নিরাপত্তার কারণে মহাকরণের উল্টো দিকের পার্কোম্যাটেও কোনও গাড়িকে রাখতে দেওয়া হবে না বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িটিই প্রধান ফটক পর্যন্ত আসতে পারবে। হিলারির জন্য ১৭টি গাড়ির কনভয় ও মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি ছাড়া আর কোনও গাড়িকেই আজ মহাকরণের সামনে বিবাদী বাগ (নর্থ)-এ পার্ক করতে দেওয়া হবে না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সকাল সাতটা থেকেই ‘প্রিজম্যাটিক গার্ডরেল’ বসিয়ে বিবাদী বাগ (নর্থ)-এ যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
|
শহরের পথে মার্কিন বিদেশসচিব
হিলারি ক্লিন্টনের কনভয়।
রবিবার। ছবি: দেবাশিস রায় |
শহরে এটি হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টনের দ্বিতীয় সফর। প্রথম বার মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে এসেছিলেন মাদার টেরিজার অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে। এ বার এসেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিসেবে। সোমবার তাঁর সফরসূচিকে কেন্দ্র করে মূলত শহরের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যস্থলের যান চলাচলে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কলকাতা পুলিশ। দিনের একটা দীর্ঘ সময় ওই এলাকার বিভিন্ন রাস্তা কার্যত মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনীর দখলে চলে যাবে বলেই মত অভিজ্ঞ পুলিশকর্মীদের। এর ফলে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই এলাকায় কাজে-আসা অগুনতি মানুষকে সমস্যায় পড়তে হবে বলে ধারণা পুলিশের।
কী সে সব বিধিনিষেধ? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ছ’টা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ, মধ্য, পূর্ব ও বৃহত্তর কলকাতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচলই প্রয়োজন মতো নিয়ন্ত্রিত হবে। যে সব রাস্তা এই নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়েছে, সেগুলি হল: বেলভেডিয়ার রোড, জিরাট আইল্যান্ড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, পার্ক স্ট্রিট, হসপিটাল রোড (ওয়েস্ট), হসপিটাল রোড, লাভার্স লেন, খিদিরপুর রোড, জেনসন অ্যান্ড নিকলসন আইল্যান্ড, মেয়ো রোড, রেড রোড, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, গভর্নমেন্ট প্লেস (ওয়েস্ট), কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট, নেতাজি সুভাষ রোড, বিবাদী বাগ (নর্থ), ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট), এসপ্ল্যানেড রো (ইস্ট), এসপ্ল্যানেড মোড়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, গিরিশ পার্ক, বিবেকানন্দ রোড, মানিকতলা মেন রোড, সিআইটি রোড, ই এম বাইপাস ও চিংড়িঘাটা মোড়।
|
নিয়ন্ত্রণ অন্য দিকেও |
আপনার জন্য পথ |
সাড়ে ৮টা থেকে
এলগিন রোড, শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোড,
ডি এল খান রোড, হসপিটাল রোড, স্ট্র্যান্ড রোড
সাড়ে ১০টা থেকে
রডন স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, মেয়ো রোড,
বি বা দী বাগ এলাকা
১১টা থেকে
স্ট্র্যান্ড রোড, কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, নারকেলডাঙা মেন রোড,
বেলেঘাটা মেন রোড, উল্টোডাঙা মেন রোড |
সূত্র: কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ |
|
এ সব বিধিনিষেধের জেরে মূলত অফিসের ব্যস্ত সময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে যানবাহনের চাপ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা পুলিশকর্মীদের। আপাতত পাওয়া খবর অনুযায়ী, লা’ মার্টিনিয়ার ফর গালর্স স্কুল থেকে হিলারি যখন মহাকরণের দিকে যাবেন, তখন তাঁর যাত্রাপথ ও সংলগ্ন রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ থাকবে সব থেকে বেশি। ঘটনাচক্রে ওই সময়েই প্রচুর অফিসযাত্রী শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে যাবেন। স্বভাবতই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে একের পর এক গাড়িকে আটকে দেওয়ায় চাপ সামাল দিতে পুলিশকে বেগ পেতে হবে। হিলারি যখন মহাকরণ ছাড়বেন, তখনও বিভিন্ন রাস্তা একই চেহারা নেবে বলে ধারণা পুলিশের। তবে মহাকরণে পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হিলারি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেও চাপ হাল্কা করতে যথেষ্ট সময় লেগে যাবে বলেই মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
রবিবারও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হিলারির গোটা যাত্রাপথকে কেন্দ্র করে ছিল অভূতপূর্ব পুলিশি নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু ছুটির দিন বলে তুলনামূলক ভাবে কম সমস্যায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। আজ শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটাই এখন দেখার! |