উদ্বেগের প্রহর বিমানবন্দরে
হিলারি নামার আগেই ফের গর্ত-গেরোয় রানওয়ে
রানওয়ের গর্ত যেন আর পিছু ছাড়ছে না কলকাতা বিমানবন্দরের। এমনকী, খোদ মার্কিন বিদেশ-সচিবের বিমান নামার আগেও গর্তের গোরায় রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হল বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে। তবে শেষ মুহূর্তে গর্ত বুজিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে। নির্বিঘ্নে কলকাতায় নেমেছে ভিভিআইপি বিমান।
মার্কিন বিদেশ-সচিব হিলারি ক্লিন্টনের বিশেষ বিমানের কলকাতায় নামার কথা ছিল রবিবার দুপুরে। অথচ এ দিন সাতসকালে ধরা পড়ে, প্রধান রানওয়ের উত্তর প্রান্তে আবার একটা গর্ত তৈরি হয়েছে! ২৫ এপ্রিলের মতো তার আকার অত বড় না-হলেও বিপদ ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট। তা ছাড়া ওই মুহূর্তে মূল রানওয়ে বন্ধ রেখে গর্ত বোজানোর কাজ শুরু করাও সম্ভব ছিল না, কারণ দৃশ্যমানতা কম থাকায় দ্বিতীয় রানওয়ে তখন ব্যবহারের বাইরে। উপরন্তু মার্কিন বিদেশ-সচিব যাতে চড়ে আসছেন, সেই অতিকায় বোয়িং ৭৫৭-২০০ বিমানটি এমনিতেও দ্বিতীয় রানওয়েতে নামতে পারবে না।
চরম উদ্বেগে পড়ে যান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া একটু পরিষ্কার হতেই তড়িঘড়ি মূল রানওয়ে বন্ধ রেখে গর্ত মেরামতি শুরু হয়। ক্ষত সারিয়ে রানওয়ে যখন ফের চালু হয়, তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরে ঢাকা থেকে হিলারির কলকাতার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। স্বস্তির শ্বাস ছাড়েন বিমানবন্দরের কর্তারা। এ দিকে ঢাকায় এ দিন সকাল থেকেই মার্কিন বিদেশ-সচিবের অনুষ্ঠানের সময়সূচি একটু-একটু করে পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা ছেড়ে তাঁর বিমান উড়েছে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধ ঘণ্টা পরে। আর সেই বিলম্বের খবরে স্বস্তির হাসিটা আরও চওড়া হয়েছে বিমানবন্দরের অফিসারদের মুখে।
এপ্রিলের ২৫ তারিখেও রানওয়েতে গর্তের জেরে বেসামাল হয়ে গিয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দর। সে দিনও মূল রানওয়ের উত্তর প্রান্তেই পাঁচ ফুট লম্বা-দেড় ফুট চওড়া বড়সড় একটা গর্ত তৈরি হয়েছিল, যাতে রানওয়ে বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না। বিপদের উপর বিপদ, সে দিন দুপুরে গর্তটি যখন ধরা পড়ে, তখন দ্বিতীয় রানওয়েও মেরামতির কারণে বন্ধ। অগত্যা সেই দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরের দু’-দু’টো রানওয়েই বন্ধ রাখতে হয় পাক্কা ৩৫ মিনিটের জন্য! আর ওই পুরো সময়টা আকাশে চক্কর কাটতে হয় ১০টি বিমানকে।
সে দিন বিমানবন্দরের অফিসারেরা জানিয়েছিলেন, বৃষ্টির পরে বিটুমিন আলগা হয়ে বিমানের চাকার ঘষায় ঘষায় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ দিনও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিমানের চাকার ঘষা খেয়েই ফের গর্ত হয়েছে মূল রানওয়েতে। যদিও আগের দিনের তুলনায় তার আয়তন কিছুটা ছোট তিন ফুট বাই দেড় ফুট। তা হলেও এমন গর্ত থাকা রানওয়েতে বিমান ওঠা-নামা করানো কোনও মতেই উচিত নয়। এ অবস্থায় মূল রানওয়ে বন্ধ রেখে দ্বিতীয় রানওয়ে ব্যবহার করাটাই দস্তুর। কিন্তু এ দিন সেখানেও বাদ সাধে অপরিষ্কার আবহাওয়া। কী রকম?
কারণ, দ্বিতীয় রানওয়েতে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) নেই। তাই সেখানে বিমান অবতরণের জন্য প্রয়োজন ন্যুনতম ২৮০০ মিটার দৃশ্যমানতা, অর্থাৎ অন্তত ২৮০০ মিটার উপর থেকে পাইলট রানওয়েকে পরিষ্কার দেখতে পেলে তবেই নামতে পারবেন। কিন্তু এ দিন সকাল ওই সাতটার সময়ে কলকাতা বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা ছিল তার অনেক কম, দু’হাজার মিটারের মতো।
ফলে দ্বিতীয় রানওয়েও হাতের বাইরে চলে যায়। এ দিকে কলকাতা থেকে এক এক করে সকালের উড়ান ছাড়ার কথা। স্থির হয়, প্রধান রানওয়েরই দক্ষিণ প্রান্ত, অর্থাৎ সল্টলেকের দিক থেকে সেগুলোকে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হবে। সেইমতো উড়ানগুলো ছাড়তে শুরু করে। কলকাতায় আসা কয়েকটি বিমানকেও দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বিমানবন্দরের কর্তাদের মাথায় তখন মস্ত চিন্তা, ভিভিআইপি বিমান এসে পড়লে কী হবে? আবহাওয়ার উন্নতি না-হলে সেটিকেও পুরো রানওয়ে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না ভেবে তাঁরা প্রমাদ গুনতে থাকেন।
অবশেষে সকাল আটটার পরে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে। সকাল ন’টা নাগাদ দৃশ্যমানতা ২৮০০ মিটার ছাড়িয়ে যেতেই নোটাম (নোটিস টু এয়ারমেন) জারি করে মূল রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চালু হয় দ্বিতীয় রানওয়ে। সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে মূল রানওয়ের মেরামতি চলে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ঘোষণা হয়, মূল রানওয়ে আবার পূর্ণ ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠেছে। পূর্ব নির্ধারিত যাত্রা-নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, ঠিক তার পাঁচ মিনিট পরে হিলারির বিমান ঢাকা ছেড়ে ওড়ার কথা।
তবে সেই বিমান এ দিন ঢাকা ছেড়েছে তার আধ ঘণ্টা পরে, বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ। কলকাতা বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “ভিভিআইপি বিমানের দেরিটা কিন্তু আমাদের রানওয়ে বন্ধ থাকার জন্য হয়নি। বস্তুত, আগের সূচি অনুযায়ী ওঁর যখন ঢাকা থেকে ওড়ার কথা ছিল, তার আগেই আমাদের প্রধান রানওয়ে চালু হয়ে গিয়েছে।” হিলারির বিমান কলকাতায় নামে ১২টা ৫২ মিনিটে। দুপুরের এই সময়ে কলকাতায় উড়ান এমনিতেই কম থাকে। ভিভিআইপি বিমান কলকাতায় নামার চার মিনিট আগে ব্যাঙ্কক রওনা হয় তাই-এয়ার এশিয়ার উড়ান। বিমান নামার পাঁচ মিনিট পরে উড়ে যায় ইন্ডিগোর উড়ান। ফলে, হিলারির বিমানের জন্য অন্য বিমানকে আকাশে আটকে থাকতে হয়নি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.