নতুন আর্থিক বছরের বয়স এখন এক মাস সাত দিন। আগের বছরের আয়ের হিসেব-নিকেশ এর মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা। সামনে আসছে হিসেব দাখিলের মরসুম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফর্ম-১৬ সংগ্রহ করতে হবে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে। জুলাই মাসের শেষ দিনের জন্য বসে না-থেকে ভিড় হওয়ার আগেই আয়কর রিটার্ন জমা করে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।
২০১১-’১২ সালে যাঁদের আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হয়েছে তাঁদের এ বার থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে ই-ফাইল করতে হবে আয়করের রিটার্ন। গত বছর পর্যন্ত ই-ফাইল করা ছিল ইচ্ছামূলক। ই-ফাইলিংয়ের অবশ্য কয়েকটি সুবিধা আছে। বাড়ি বা অফিসে বসেই ই-ফাইল করা যায় আয়করের রিটার্ন। এই পদ্ধতিতে কর ফেরতও (রিফান্ড) পাওয়া যায় দ্রুত। রিটার্ন ই-ফাইল করার পর আই টি আর ৫ ফর্ম সই করে পাঠাতে হয় বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে (সেন্ট্রালাইজড প্রসেসিং সেন্টার)। কয়েক দিনের মধ্যে আপনি ই-মেল মারফত পেয়ে যাবেন প্রাপ্তিস্বীকার। একদম শেষ বেলায় ই-ফাইলের চেষ্টা না-করাই ভাল। আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে ভাল রকম চাপ থাকে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। আয় যাঁদের ১০ লক্ষ টাকা বা তার কম, তাঁদের জন্য অনলাইন ফাইলিং বাধ্যতামূলক না-হলেও তাঁরাও ই-ফাইলিংয়ের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
যে সব চাকরিজীবীর আয় ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম, তাঁদের রিটার্ন ফাইল না-করলেও চলবে, যদি তাঁরা কয়েকটি শর্ত পূরণ করেন।
যেমন:
১) মোট আয় ৫ লক্ষ টাকা অতিক্রম না-করা।
২) আয়ের সূত্র শুধুমাত্র বেতন এবং সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনধিক ১০,০০০ টাকা সুদ। সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের তথ্য ফর্ম-১৬ ইস্যু করার আগেই জানাতে হবে নিয়োগকর্তাকে, যাতে উপযুক্ত ক্ষেত্রে উৎসমূলে কর কেটে রাখা যায়।
৩) ফর্ম ১৬-এ প্যান নম্বরের উল্লেখ থাকা চাই।
৪) অন্য কোনও সূত্র থেকে করযোগ্য আয় থাকলে চলবে না।
উপরের শর্তগুলি যাঁরা পূরণ করেন, তাঁরা সময় নষ্ট না-করে সেভিংস ব্যাঙ্ক পাসবুক/স্টেটমেন্ট নিয়োগকর্তার কাছে দাখিল করে দ্রুত ফর্ম-১৬ সংগ্রহ করে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। যাঁদের অবশ্য কর ফেরতের ব্যাপার আছে, তাঁদের কিন্তু রিটার্ন ফাইল করতে হবে। যাঁদের আয় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনও পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ তাঁরা রিটার্ন ই-ফাইল করতে পারেন অথবা সনাতন কাগজ-কলমের রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। যাঁদের বিদেশে সম্পত্তি আছে, তাঁদের ভারতে করযোগ্য আয় না-থাকলেও রিটার্ন দাখিল করতে হবে। বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি-সহ সব রকম সম্পদের তথ্য দিতে হবে রিটার্নে।
দেশে যুগ্ম নামে যদি কোনও গৃহ সম্পত্তি থাকে এবং তা থেকে যদি কোনও আয় অথবা লোকসান হয়, তবে করদাতার অংশ এ বার থেকে রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জানাতে হবে যুগ্ম মালিকের প্যান। কোনও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদান (ডোনেশন) দিয়ে তার উপর করছাড় চাইলে এ বার থেকে আপনাকে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং প্যান নম্বর। যদিও বাজেট বিল এখনও সংসদে পাশ হয়নি, তা সত্ত্বেও উপরের নানা তথ্য জানানোর জন্য আয়কর রিটার্ন ফর্ম আই টি আর ২, ৩ এবং ৪-এ এরই মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাড়তি তথ্য দিলে রিটার্নের স্বচ্ছতা বাড়বে। অধিক কর সংগ্রহে সুবিধা হবে সরকারের পক্ষেও।
আসা যাক বাজারের কথায়। গত দু’বছর ধরে অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষকে বেগ দিয়েছে পণ্য মূল্যবৃদ্ধি। এখন বাজারকে উৎকণ্ঠায় রেখেছে টাকার তুলনায় ডলারের দামের একনাগাড়ে বেড়ে ওঠা। রফতানি তেমন না-বাড়লেও আমদানি বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়নি। অন্য দিকে, ভাল রকম কমেছে বিদেশি বিনিয়োগের হার। অর্থাৎ ডলারের জোগানের তুলনায় চাহিদা এখন অনেক বেশি। একেই তেলের দাম তুঙ্গে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় অবস্থা এখন গুরুতর। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে। সেনসেক্স ১৭ হাজার ভেঙে নীচে নেমেছে গত শুক্রবার। অনিশ্চয়তার বাজারে বাড়ছে সোনার দাম। এই পরিস্থিতিতে কোন পথে যাওয়া উচিত বুঝতে না-পেরে মানুষ এখন বেশ দিশেহারা। ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে ব্যাঙ্ক এখনও ভাল সুদ দিচ্ছে। অন্য দিকে, অনিশ্চয়তার বাজার সুযোগ করে দিয়েছে কম জলে ভাল মাছ ধরার। অর্থাৎ নামী শেয়ার কম দামে কিনে রাখার সময় এটাই। তাই ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতা অনুযায়ী মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। |