নলহাটি পুরভোট... মনোনয়ন ও প্রার্থী নিয়ে
শরিকি বিবাদ ফ্রন্টে

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নলহাটি বিধানসভা এলাকায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। গত বছর বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদলের পরে প্রায় এক বছরের মাথায় এখানে পুরসভা নির্বাচন। অথচ ভোটের আগে আসন রফা বা প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বাম শরিকদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনে নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতেই কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক চট্টোপাধ্যায়। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ব্যবধান ছিল যথেষ্ট বেশি। এ হেন পরিস্থিতিতে পুর-নির্বাচনের জন্য শনিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে বামফ্রন্টের মধ্যে শরিকি লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে।
এই দ্বন্দ্ব মূলত সিপিএমের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির। আবার ৮ নংম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দাঁড় করানো নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গেও বাদানুবাদ হয়েছে সমাজবাদী পার্টির। বিবাদ এতটাই গড়িয়েছে যে, ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বামফ্রন্টের তরফে সিপিআই ও সিপিএমের প্রার্থী থাকলেও সেখানে পাল্টা প্রার্থী দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। পাশাপাশি ৮ নম্বরেই প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সিপিএমের একাংশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকও। সব মিলিয়ে শরিকি দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় জেলা সিপিএম নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন।
২০০৭ সালের পুরভোটে আলাদা ভাবে নলহাটির ৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। এ বার বামফ্রন্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। সেই মতো সিপিএম ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি পাঁচটির মধ্যে ৩টিতে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং একটিতে সিপিআই ও একটিতে সমাজবাদী পার্টি প্রার্থী দিয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দু’বারের কাউন্সিলর হলেন সমাজবাদী পার্টির সুব্রত দত্ত।
সমাজবাদী পার্টির জেলা সভাপতি তানসেন আলির অভিযোগ, “এ বার প্রার্থী তালিকা গঠনের জন্য আলোচনায় আমাদের ডাকা হয়নি। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে ডেকে সিপিএম নেতা সুহাস সরকার নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে ফেলেছেন। আমাদের দলের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত দত্তের সঙ্গে উনি আলোচনা করেছেন। অথচ সুব্রতবাবু প্রার্থী হয়েও তাঁকে দলের দায়িত্ব সামাল দিতে হচ্ছে। কেন সুহাসবাবু আমাকে ডাকেননি? আসলে সিপিএম বড় শরিক হিসেবে আমাদের পাত্তা দিতে চান না।”
তানসেন আলি জানান, গত পুরভোটে চারটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে তাঁরা ১টিতে জয়ী এবং একটিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আর সিপিএম ১১টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে ২টিতে জয় পেয়েছিল। অন্য দিকে, ফব ৩টিতে প্রার্থী দিয়ে ১টিতে এবং সিপিআই ১টিতে প্রার্থী দিয়ে জয়ী হয়েছিল। তাঁর দাবি, “ফব এবং সিপিআইয়ের জয়ী প্রার্থীরা পরবর্তীকালে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু আমাদের দলের জয়ী প্রার্থী সুব্রতবাবু দল ছাড়েননি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ ও ২০০৭-এ নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন সুব্রতবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে দু’বারই হেরেছে ফব। এ বারও সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে চায় ফব। আমরা ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে চাইলেও বড় শরিক তা মানেনি।” এ সবেরই প্রতিবাদে দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ওই দুই ওয়ার্ডে তাঁরা প্রার্থী দিয়েছেন বলে তানসেনের দাবি। শনিবার ৭ নম্বরে জাফিরুল ইসলাম ও ১১ নম্বরে পারভেজ আলম সমাজবাদী পার্টির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “ওই ওয়ার্ডে (৮ নম্বর) বরাবরই আমরা দাবিদার। দু’টো নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল দল। এ বারও দেওয়া হবে। এ বার সেখানে প্রার্থী হবেন হিরালাল বন্দ্যোপাধ্যায়।” যদিও হিরালালবাবুকে বর্তমান তৃণমূল পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে দাবি তুলেছে সিপিএম। শনিবার রামপুরহাট প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে হিরালালবাবুর বিরোধিতাও করেন সিপিএম কর্মীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ফবকে তিনটি আসন ছাড়া হয়েছে। কেন তারা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিচ্ছে? ওখানে ফব প্রার্থী দিলে তাঁরা ‘বসে যাবেন’ বলেও ওই সিপিএম কর্মীদের হুঁশিয়ারি।
এই পরিস্থিতিতে মনোনয়ন জমা না দিয়েই হিরালালবাবু চলে আসেন। রবিবার দীপকবাবু বলেন, “আজ, সোমবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না তা ঠিক হবে।”
এই অবস্থায় শরিকি বিবাদ মেটাতে আসরে নামতে হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষকে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য ব্রজ মুখোপাধ্যায় ও সুহাস সরকার। সুহাসবাবু নলহাটির স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় পুরনির্বাচনে তাঁর উপরে বেশি দায়িত্ব রয়েছে। দিলীপবাবু বলেন, “সমাজবাদী পার্টির ক্ষোভের বিষয় নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা হবে।” তাঁর দাবি, “সমাজবাদী পার্টির রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে এবং ওই দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। আলোচনা না করার অভিযোগ ঠিক নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.