কঙ্কাল বা হাড় চুরির ক্ষেত্রে আইন অভিযুক্তকে দোষী নাও ঠাওরাতে পারে, ফলে পুলিশ ধরলেও অভিযুক্তরা আদৌ সাজা পাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পূর্বস্থলী থেকে ফের দু’জন গ্রেফতার হওয়ার পরে আইনজীবীরা অন্তত এ রকমই মনে করছেন।
গত মাসে পূর্বস্থলী থেকে মনোজ পাল ওরফে গপসা ও কুশ বিশ্বাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাদের সাজা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা, তা অনেকটাই অনিশ্চিত। গত ২০০৭ সালে পূর্বস্থলীরই যজ্ঞেশ্বরপুর থেকে কঙ্কাল পাচারের দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন মুক্তি বিশ্বাস-সহ কয়েক জন। কিন্তু সিআইডি তদন্তে নেমেও তাঁদের বিরুদ্ধে চাজর্র্শিট দিতে পারেনি। বর্ধমান জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার সুব্রত হাটি বলেন, “চুরি যাওয়া বস্তুর মধ্যে কঙ্কাল বা হাড় পড়ে না। তাই মুক্তি বিশ্বাস ও তার সাঙ্গোপাঙ্গের মতই গপসাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ চার্জশিট জমা দেতে পারবে বলে মনে হয় না। দিলেও, সেটা সম্ভবত আইনের বিচারে টিঁকবে না।”
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য বলেন, “জেরা করে কঙ্কাল পাচার চক্রের সন্ধান করার জন্য আমরা ওই দু’জনকে হেফাজতে নিয়েছি। যথা সময়ে চার্জশিটও দিতে পারব।”
কঙ্কালকাণ্ডে ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯,২০১ ও ১২০(খ) ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। অর্থাৎ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চুরি, প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল পূর্বস্থলীর সিংহের বাঁধ এলাকা থেকে ধৃত মুক্তি বিশ্বাসদের বিরুদ্ধেও একই রকম ধারা দেওয়া হয়েছিল। পরে বর্ধমানের গোদার এক বাসিন্দার অভিযোগের ভিত্তিতে রুজু হওয়া ওই মামলায় তদন্ত ভার নেয় সিআইডি। গপসাদের বিরুদ্ধে অবশ্য পুলিশই নিজেই মামলা রুজু করেছে।
সিআইডি-র বর্ধমান শহর শাখার এক অফিসারের দাবি, চুরি যাওয়া জিনিসের তালিকায় কঙ্কাল না পরায় আগের মামলায় চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার বদলে সিজেএম আদালতে ‘চূড়ান্ত রিপোর্ট’ জমা দেওয়া হয়। মুক্তি বিশ্বাসের আইনজীবী কমলকৃষ্ণ তা বলেন, “কঙ্কাল যে চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্য পড়ে না, সে ব্যাপারে আমি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তার পরেই মুক্তিরা জামিন পায়। তবে এখন বেকসুর খালাস পায়নি। কারণ তদন্তকারী সংস্থা চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার পরে মামলার নিষ্পত্তি করতে অভিযোগকারীর সম্মতি লাগে। বেশ কয়েক বছর কেটে গেলেও গোদার অভিযোগকারীকে এখনও নোটিস পাঠিয়ে আদালতে ডাকা হয়নি। তাই ওরা এখনও খালাস পায়নি।”
বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “মুক্তির মামলা কেন নিষ্পত্তি হয়নি, সে ব্যপারে আমরা পাবলিক প্রসিকিউটারকে খোঁজ নিতে অনুরোধ করব। আইনের চোখে যা অন্যায় নয়, সেই মামলায় কাউকে দোষী করাও উচিত নয়।” পাবলিক প্রসিকিউটার বলেন “জোর করে এমন কোনও মামলা পুলিশের দায়ের করা উচিত নয়, যাতে চার্জশিট জমা দিতে পারা যায় না।”
গপসারা আপাতত জেল হাজতে। তবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের রিপোর্ট দিতে চলেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। কেননা জেলার এক পুলিশকর্তার দাবি, “প্রাথমিক তদন্তের পরে ও ধৃতদের জেরা করে যেটুকু জানা গিয়েছে, তাতে গপসারা কঙ্কাল পাচার করে না বলেই মনে হচ্ছে। ওরা কিছু হাড়গোড় সংগ্রহ করেছে। সেগুলি নিয়ে নানা মেলায় ঘুরে ব্যথা-বেদনার ওষুধ দেওয়ার কথা বলে প্রচার চালায়। কোথাও আবার হাড়গোড় আর মানুষের খুলি নিয়ে তান্ত্রিক সেজে বসে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
কঙ্কাল নিয়ে অবৈধ ব্যবসা করায় গপসারা সাজা পায়, না কি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার। |