বিকল্প দুই চাষ
বিকল্প চাষে উৎসাহ বাড়ছে কালনায়
ধান, পাট বা আলু চাষের মতো ঝুঁকি নেই। পাশাপাশি রয়েছে লাভের নিশ্চয়তা। মূলত সেই কারণেই কালনার ৫ টি ব্লকের বহু চাষির কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে পেঁপে, কলা, পেয়ারার বিকল্প চাষ। এই ধরনের বিকল্প চাষে উৎসাহ বাড়ছে, স্বীকার করেছে মহকুমা কৃষি দফতরও। এক কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “বিকল্প চাষের এলাকা যত বাড়বে, তত গতানুগতিক চাষের নিরাপত্তা বাড়বে।”
কালনার মহকুমার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের বেশিরভাগই চাষের উপর নির্ভরশীল। তাঁরা জানান, গতানুগতিক ধান বা আলু চাষে কোনও নিশ্চয়তা নেই। এক বছর যদি লাভ না হয় তবে তার জেরে কয়েকবছর লেগে যায় ঋণ শোধ করতে। অন্য দিকে, বিকল্প চাষে ঝুঁকি অনেক কম। কালবৈশাখী ছাড়া অন্য কোনও আশঙ্কা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর থেকে কালনা ১ ব্লকের বেগপুর, সর্বত্রই এই ধরনের বিকল্প চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। আট বছর আগে সাধারণ চাষের অনিশ্চয়তা কাটাতে ধান ও পাটের জমিতে পেয়ারা চাষ শুরু করেছিলেন শ্রীরামপুর গ্রামের চাষিরা। তাঁরা জানান, চাষের জন্য চারা আনা হয়েছিল বারুইপুর থেকে। ৬ মাস পর থেকেই গাছে ফলন হতে শুরু করে। প্রথম বছর চাষের পর বাজার খুঁজতে চাষিরা গিয়েছিলেন আসানসোল- ঝাড়খণ্ড। কিন্তু, তার পর থেকে আর যাওয়ার দরকার হয়নি। ব্যবসায়ীরাই নিজেরা এসে তাঁদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে যান প্রতি বছর। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা লাভ হয়। চাষিরা জানান, লাভের মুখ দেখার পর থেকেই পেয়ারা চাষের এলাকা বাড়ানো হয়েছে। শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের হিসেব অনুযায়ী এলাকায় প্রায় ৪০০ একর জমিতে পেয়ারা চাষ করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান দিলীপ মল্লিক বলেন, “চলতি বছরে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এলাকার ২৭ জন প্রান্তিক চাষিকে পেয়ারা বাগান করে দিয়েছে পঞ্চায়েত। মাস ছয়েক ধরে সেগুলির দেখাশোনাও করেছে পঞ্চায়েতের কর্মীরা।” দিলীপবাবুর আরও দাবি, শুধু পেয়ারা নয়, এলাকাতে কলার চাষের জন্যও উৎসাহ বাড়ছে। তিনি জানান, এলাকায় প্রায় ২০০ একর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।
শুধু শ্রীরামপুর গ্রাম নয়, পাশাপাশি চাঁদপুর, বিদ্যানগরেও পেয়ারা চাষে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। চাঁদপুর গ্রামের চাষি জনবন্ধু দেবনাথ বলেন, “একবার চারা বসিয়ে ঠিক মতো পরিচর্যা করলে ৫ থেকে ৬ বছর পেয়ারা গাছে ভাল ফলন হয়। গাছ যেহেতু দ্রুত লম্বায় বাড়ে, তাই বন্যা বা অতিবৃষ্টির ফলে তেমন ক্ষতি হয় না।” তাঁর দাবি, চাষে ঝুঁকি কম থাকায় অনেকেই তাঁর মতো পেয়ারা চাষের পথে হাঁটছেন। বিদ্যানগরের যদুুগোপাল দেবনাথ নামে এক পেয়ারা চাষিও বলেন, “ধান বা আলু চাষ করা মানে প্রথম থেকেই নানা উদ্বেগ। কিন্তু এই চাষে লাভের নিশ্চয়তা সত্যিই আছে।” শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত ছাড়াও আশপাশের সমুদ্রগড়, নসরৎপুর পঞ্চায়েতেও এই চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিকল্প চাষ হিসেবে কালনা ১ ও ২ ব্লকে জায়গা করে নিয়েছে পেঁপেও। কালনা ১ ব্লকের বেগপুর বা ২ ব্লকের পূর্ব মাতগাছিয়া এলাকায় বহু চাষিই প্রায় বছর পাঁচেক ধরে পেঁপে চাষ করছেন। রফিকুল শেখ নামে একচাষি বলেন, “কালবৈশাখী ছাড়া এই চাষে আর কোনও ভয় নেই। একমাত্র ঝড়েই বিঘের পর বিঘে চাষ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।” অন্যান্য চাষিরাও জানান, সারা বছরই লাভজনক দর থাকে এই চাষে।

পেয়ারা ও পেঁপে। কালনা ও পূর্বস্থলীতে তোলা নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.