অসুস্থ শিশু-মাকে সারিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠাল ক্লাব
স্বামীর সঙ্গে নয় মাসের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে রামপুরহাট থেকে কুলটিতে রেলের পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শ্রাবণী লেট। রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ শহরে পৌঁছেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ও তাঁর সন্তান পীযূষ। অথচ শহরের কিছুই জানেন না স্বামী সঞ্জয়। কী করবেন, কোথায় যাবেন বুঝতে না পেরে উদভ্রান্তের মতো চার দিকে তখন ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ দিকে, পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে খোলা আকাশের নীচে অসুস্থ সন্তানকে শুইয়ে রেখে কাঁদছেন শ্রাবণী। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা দিতে পারবেন তো! হয়তো পরীক্ষাটা দেওয়াই হত না, যদি না কাছাকাছি ক্লাবের কয়েক জন সদস্য সাহায্য করতেন। স্থানীয় ডাক্তারের কাছে মা ও ছেলেকে নিয়ে গেলেন তাঁরা। খানিক সুস্থ করে শ্রাবণীকে পাঠালেন পরীক্ষাকেন্দ্রে।
সঞ্জয়বাবু জানান, রামপুরহাট মহকুমার কালোয়া গ্রামে তাঁদের বাড়ি। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে টেনেটুনেই চলছিল সংসার। শ্রাবণী মাধ্যমিক পাশ করেছেন। বছর খানেক আগে রেলের গ্রুপ ‘ডি’ পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন। সেই পরীক্ষাই ছিল এ দিন। তিনি বলেন, “ওরা দু’জনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অচেনা জায়গা। কী করব বুঝতে পারছিলাম না!” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ওই তরুণী যখন তাঁর সন্তানকে রাস্তায় শুইয়ে রেখে কাঁদছিলেন ‘নিতান্ত কৌতুহল মেটাতেই’ সেখানে প্রথমে গিয়েছিলেন স্থানীয় ক্লাবের চার সদস্য সুদীপ চৌধুরী, রাজা নন্দী, সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও বিবেক মণ্ডল। তাঁরা বলেন, “জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছেন ওই তরুণী। কিন্তু শনিবার ভোর থেকেই ছেলে ও তাঁর জ্বর।” তৎপর হয়ে এর পরে তাঁরাই মা ও ছেলেকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের বাড়িতে নিয়ে যান। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ওষুধ কিনে দেন। দুধ, ফল, খাবারও আসে। কিছুটা সুস্থ হলে সকাল ১০টা নাগাদ শ্রাবণীকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। ক্লাবের ঘরে বিছানা পেতে শোয়ার ব্যবস্থা হয় পীযূষের।
দুপুর দুটো নাগাদ পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে শ্রাবণী বললেন, “পরীক্ষা ভাল হয়েছে।” তিনি আরও জানান, শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। বিকেলে পৌঁছন আসানসোলে। তখন থেকেই ছেলের জ্বর আসে। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনিও। সারাদিন মুড়ি, তেলেভাজা ছাড়া তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। মধ্যরাত থেকেই দু’জনের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। ওই অবস্থাতেই কোনও রকমে ট্রেন ধরে কুলটিতে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। শ্রাবণীর কথায়, “আমার মনের জোর ছিল। তাই নিজের অসুস্থতার কথা ভাবিনি। কিন্তু ছেলেটা অসুস্থ হতে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। দাদারা না এলে কী যে হত!”
তবে বিশেষ কোনও কৃতিত্ব দাবি করছেন না সুদীপেরা। হাতে খাবারের বাক্স আর ওষুধের প্যাকেট নিয়ে দুপুরে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রাবণীর পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে। সঙ্গে অন্ডাল থেকে রামপুরহাট যাওয়ার ট্রেনের টিকিট। একটি গাড়িতে ওঁদের তুলে দিয়ে শুধু জানালেন, স্টেশন অবধি পৌঁছে দেবে ওই গাড়ি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.