পরিত্যক্ত খোলামুখ কয়লাখনির জলে হবে মাছ চাষ। স্থানীয় বেকার যুবকদের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে এবং রাজ্যে মাছের যোগান বাড়ানোর জন্য এই পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের। পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়িত করতে শুরু হয়েছে সরকারি প্রক্রিয়াও। রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিধায়ক মলয় ঘটক বলেন, “অঞ্চল ভিত্তিক কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প তারই অঙ্গ। দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।”
শনিবার আসানসোলে এই নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে পৌরহিত্য করেন রাজ্যের মৎস্য দফতরের সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবা। ছিলেন মলয়বাবু, বর্ধমানের জেলাশাসক, ব্লক ও মহকুমা স্তরের প্রশাসনিক কর্তারা এবং ইসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে মৎস্য দফতরের সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবা বলেন, “সরকার খোলামুখ কয়লাখনির জলে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করেছে। জুন মাসের গোড়া থেকেই প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন জেলাশাসক।” সচিব আরও জানিয়েছেন, জলভরা খাদানগুলি ব্যবহার করার জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) চেয়ে নেবেন। ইসিএলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এনওসি দিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কারণ এতে এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি হবে। |
রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ, আসানসোল কয়লাখনি এলাকায় এ রকম মোট ৭৮টি জলভর্তি পরিত্যক্ত কয়লা খাদান চিহ্নিত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৯টি খনিতে এই প্রকল্প চালু করা হবে। এর মধ্যে সালানপুরে সাতটি এবং বারাবনিতে দু’টি খনি বেছে নেওয়া হয়েছে। মৎস্য দফতরের সচিব সৈয়দ আহমেদ বাবা জানিয়েছেন, কী ভাবে এই খাদানগুলিতে মাছ চাষ করা যাবে তা বুঝিয়ে দেবেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
খনি অঞ্চলে এই ধরনের প্রকল্প রূপায়ণের চেষ্টা আগেও একাধিক বার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু করা যায়নি। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ছোট ছোট সময় নিয়ে স্থানীয় বেকার যুবকদের দল এক একটি খাদানের জলে মাছ চাষ করবে। প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজনীয় কিছু সাহায্য করবে সরকার। মন্ত্রীর দাবি, এই বিকল্প কমর্সংস্থানের সুযোগ হলে খনি অঞ্চলে অবৈধ কয়লার কারবারে জড়িত যুবকেরা অসাধু উপায় ছেড়ে এই পথে রোজগারের চেষ্টা শুরু করবেন। মলয়বাবু জানিয়েছেন, ইসিএলের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এনওসি চলে এলেই প্রকল্পটি রূপায়ণে হাত পড়বে। প্রকল্প রূপায়ণে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আসানসোলের চেম্বার অব কমার্স।
ইসিএলের জলভর্তি পরিত্যক্ত কয়লা খাদান আগেও নিজেদের কাজে ব্যবহার করেছে রাজ্য সরকার। সালানপুরের আলকুষ্টা ও বারাবনির ইটাপাড়া অঞ্চলের দুটি খাদানে জল প্রকল্প চালাচ্ছে চলছে। এই খাদানগুলির জল পাম্পের সাহায্যে তুলে পরিশ্রুত করে প্রথমে জলাধারে রাখা হচ্ছে। পরে সেই জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে আশেপাশের গ্রামগুলিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প দু’টি করার জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে এনওসি দিয়েছেন। মৎস্য চাষ প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রেও ইসিএলের এনওসি পাওয়া যাবে বলে আশা রাজ্য মৎস্য দফতরের। |