ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরে প্রায় ২৫ বছর অতিক্রান্ত। এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে আসানসোল স্টেডিয়াম। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে গ্যালারি, সুইমিং পুল থেকে ইন্ডোর স্টেডিয়াম, এই স্টেডিয়ামের সবই বেহাল। গত দু’দশক ধরে স্টেডিয়াম কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন রাজ্যের বর্তমান আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এখন তিনি এই কমিটির সভাপতি। কমিটির সম্পাদক অমল সরকার জানান, কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে স্টেডিয়ামের পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে।
১৯৮৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। সেই সময়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, স্টেডিয়াম গড়তে মোট চার কোটি টাকা বাজেটের অর্ধেক রাজ্য সরকার দেবে। তবে এক সঙ্গে নয়, বাৎসরিক দশ লক্ষ টাকা করে কিস্তিতে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু রাজ্য সরকার এ পর্যন্ত কোনও টাকাই দেয়নি। ইসিএলের দেওয়া পঞ্চাশ লক্ষ টাকা এবং পুরসভা ও তৎকালীন জেলাশাসকের দেওয়া পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদানে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে পুরসভা পৌর নিগমে পরিণত হয়। শহরের প্রথম মেয়র বামাপদ মুখোপাধ্যায় স্টেডিয়ামের অর্ধেক মাঠ ‘ডিয়ার পার্ক’ হিসেবে ঘোষণা করে সেই অংশ তার দিয়ে ঘিরে দেন। তবে সেখানে কোনও হরিণের দেখা মেলেনি। চরে বেড়াতে শুরু করে গরু-ছাগল। ইস্কোর টাকায় সেখানে গাছ লাগানো হলেও কিছু ক্রীড়াপ্রেমী তা তুলে ফেলে দেন। পরে ওই অংশে ইন্ডোর স্টেডিয়াম ও সুইমিং পুল গড়া হয়। |
গোটা স্টেডিয়াম তার দিয়ে ঘেরা। একই মাঠে চলে ক্রিকেট ও ফুটবল। মাঠের দু’দিকে গ্যালারি নেই। যে দু’দিকে রয়েছে, তা-ও অসম্পূর্ণ। তার দিয়ে ঘেরা প্রবেশপথের এক দিকের দেওয়াল হেলে পড়েছে। কমিটির এক কর্তা অভিযোগ করেন, দুপুর থেকে স্টেডিয়াম চলে যায় বহিরাগতদের দখলে। বারবার প্রশাসনকে বলেও কোনও লাভ হয়নি। ২০০০ সাল পর্যন্ত ঠিকাদারদের নির্মাণ করে দেওয়া দু’টি ছোট ঘরে বসতেন কমিটির সদস্যেরা। ২০০১ সালে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৩-২০০৪ আর্থিক বছরে ইসিএলের ১ কোটি টাকা, আসানসোলের তৎকালীন সাংসদ বিকাশ চৌধুরী নিজের তহবিল থেকে ৪০ লক্ষ টাকা এবং এডিডিএ ১৭ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়। ওই টাকায় গ্যালারি-সহ মূল ভবন, তিনটি ছোট গ্যালারি, ইন্ডোর স্টেডিয়াম ও একটি সুইমিং-পুল নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও মূল স্টেডিয়ামে পুরনো বেড়া ভেঙে নতুন করে তার দিয়ে মাঠ ঘেরা হয়।
কিন্তু এতেও সমস্যা মেটেনি। মূল স্টেডিয়াম নির্মাণের সময়ে ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে বৃষ্টির হলে আবর্জনা-সহ জল মাঠের উপর দিয়েই বয়ে যায়। মূল ভবনে জিম রয়েছে। কিন্তু বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়দের থাকার জন্য কোনও ঘর নেই। স্টেডিয়াম সুরক্ষিত করার জন্য কংক্রিটের দেওয়াল প্রয়োজন। তা ছাড়া স্টেডিয়ামের যা পরিকাঠামো, টিকিট কেটে প্রতিযোগিতা বা প্রদর্শনী ম্যাচ আয়োজন করাও সম্ভব নয়। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শব্দ-গ্রহণ ব্যবস্থাও কাজ করে না। মাইকের কথা বোঝা যায় না পরিষ্কার। |
সব থেকে বেহাল অবস্থা সুইমিং পুলের। স্টেডিয়াম কমিটির সদস্য মনীষা কবীরাজ জানান, প্রায় ৩০ মিটারের এই সুইমিং পুল নির্মাণ করেছিল এডিডিএ। ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যান। কাজ শেষ হয়ে গেলেও এডিডিএ কখনও স্টেডিয়াম কমিটিকে দায়িত্ব দেয়নি। সুইমিং পুল বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরিও হয়নি। যে কোনও প্রতিযোগিতার জন্য পুলের আয়তন কমপক্ষে ৫০ মিটার হওয়া উচিত। গভীরতাও এত কম যে শিশুরা ছাড়া আর কেউ সাঁতার কাটতে পারবে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং সুইমিং পুল চত্বরে দিনের বেলা গরু, মোষ চরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় তা পরিণত হয় অসামাজিক কাজকর্মের আখড়ায়। গত দু’দশক ধরে স্টেডিয়াম কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এখন তিনি এই কমিটির সভাপতি। কমিটির সম্পাদক অমলবাবু জানান, আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করার জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। মলয়বাবু বলেন, “হাল ফেরাতে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে কারণে একটি ফিনান্স কমিটিও গড়া হয়েছে।”
|