মাটির মানুষ
আশ্রয়দাতার ঋণ শোধে ইতিহাস
চর্চায় বাঁকুড়ার ‘ভূমিপুত্র’ রথীন্দ্র
দেশভাগের ফলে বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ স্কুলের এক কিশোরের উদ্বাস্তু হয়ে এ দেশে ঠাঁই নেওয়া। নানা বাধার সঙ্গে লড়াই করে ধীরে ধীরে থিতু হওয়া। কঠিন সেই জীবনযুদ্ধের মধ্যেও রাঢ় বাংলার একটি অংশের ইতিহাস, তার সংস্কৃতি নিয়ে মেতে উঠলেন একটি মানুষ।
কিন্তু কেন? এত সব থাকতে হঠাৎ বাঁকুড়ার ইতিহাস, তার সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ চর্চায় মেতে ওঠা কেন? হেসে উঠলেন আশিত্তীর্ণ ঢাকার বিক্রমপুরের কুশারীপাড়ার ভূমিপুত্র রথীন্দ্রমোহন চৌধুরী। বললেন, “আরে মশাই দেশ হারালেও জীবন যদি না হারায়, তা হলে তো মানুষ নতুন বসতের ইতিহাস খুঁজবেই। তা ছাড়া আমি যে আজীবন ইতিহাসের ‘ছাত্র’। প্রায় চার দশক বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজে পড়িয়েছি। আমার বাঁকুড়া চর্চার এটাই প্রধান কারণ।”
তা বলে এক ঢাকাইয়া বাঙালের বাঁকুড়া-চর্চা ও তা নিয়ে চার দশক ধরে পরিভ্রমণ? ফের প্রাণখোলা হাসি রথীন্দ্রর, “বা, ভাল বলেছেন। ঢাকাইয়া বাঙালের বাঁকুড়া-চর্চা! আসলে, শিকড় ছিঁড়ে উঠে এসে কিছু একটাকে অবলম্বন করে থাকতে হবে তো। চার দশকের শিক্ষকতার পরে জেলাটির নাড়ি-নক্ষত্র ঘাঁটতে নেমে পড়েছি। প্রেমেও পড়ে গিয়েছি বলতে পারেন। অবসরের পরে এখন আমি পূর্ণ সময়ের আঞ্চলিক ইতিহাসের এক মনোযোগী ছাত্র।”
তবু প্রশ্ন থেকে যায়। এই বয়সে যেখানে আর পাঁচজনের মতো নিরাপদ, শান্ত জীবন যাপন করাটাই স্বাভাবিক রীতি, তখন টো টো করে ঘুরে বেড়ানো আঞ্চলিক ইতিহাস, সংস্কৃতির নানা আকর খুঁজতে, সেটা কেমন করে সম্ভব হল?“এত সব ভাবিনি। তবে দেশভাগের পরে এই জেলায় এসে থিতু হওয়ার পরে মাথায় ইতিহাসের পোকাটা নড়ে ওঠে। টুকটাক কাজের সেই শুরু। ১৯৯৩ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসরের পর তার পরিধি কিছুটা বেড়েছে। আর ডাল-ভাত, বাসস্থান, সংসার নিয়ে তো সকলেই মেতে থাকে। তবে আমার এই চর্চা খুব বড় মাপের নয়, কারণ বুঝেছিলাম সেটা সম্ভব নয়। তাই ছোট আকারেই শুরু করি। একেবারেই কিছু না করার চেয়ে এই সামান্যটুকু থাকল। আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা হিসাবে।”
আশ্রয়দাতার ঋণ এ ভাবেই স্বীকার করলেন গবেষক রথীন্দ্র। জেলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ চর্চার স্বীকৃতিতে ইতিহাসের এই ছাত্রটিকে ‘এমেরিটাস অধ্যাপক’-এর সম্মান দিয়েছেন বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পেয়েছেন অতিথি অধ্যাপকের পদ। ১৯৮০ সালে বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফে ধর্ম মহাসম্মেলনে বক্তা হিসাবে সম্মানিত।
আর গবেষকের কাছে কী পেয়েছেন মানুষ? দীর্ঘ পথ বেয়ে সাড়ে পাঁচশো পাতার এক আকর গ্রন্থ ‘বাঁকুড়াজনের ইতিহাস-সংস্কৃতি’। যাতে ধরা আছে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত সময়কাল। শুধু তাই নয়, আছে ‘নয়া বাঁকুড়ার গোড়াপত্তন ও বিকাশ’, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কাল ধরে ‘বাঁকুড়া সন্ধান’, ‘অতীত বাঁকুড়ার আর্থচিত্র’। চর্চা অবশ্য থেমে নেই। এই মুহূর্তে রথীন্দ্র ব্যস্ত ‘বাঁকুড়ার মুসলমান সমাজের ইতিহাস’ নিয়ে।
পশ্চিমরাঢ় ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের সভাপতি ও বাঁকুড়া পুরসভার হেরিটেজ কমিটির অশীতিপর ‘তরুণ’ এই সদস্যের কাছে এখন বাঁকুড়াই ‘ঢাকা’। যা নিয়ে তিনি ভুলে রয়েছেন দেশ হারানোর ব্যাথা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.