হালতুর সুপ্রিয়া হালদারের সঙ্গে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের হামিদা খাতুনের মিল অনেক। দুই নাবালিকার হাত থেকেই বই-খাতা কেড়ে পরিবারের লোকজন জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছিলেন। দু’জনেরই শেষ পর্যন্ত হোমে ঠাঁই হয়। সুপ্রিয়া আর শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চায় না। হামিদাও চায় না স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে। সুপ্রিয়া হোমে থেকেই পড়াশুনো চালাবে। হামিদাও চাইলে সেটা করতে পারে।
শ্বশুরবাড়ির ‘নির্যাতন’ আর বাপের বাড়ির ‘গঞ্জনা’ সহ্য না-হওয়ায় ১৪ বছরের হামিদা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়া মেয়েটাকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন শনিবার তাকে একটি হোমে পাঠাল।
বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “হামিদাকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নির্যাতন করত বলে সে জানিয়েছে।
|
হামিদা খাতুন। ছবি অভিজিৎ সিংহ |
শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে সপ্তাহ খানেক আগে বাপের বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার পরে সেখানেও গঞ্জনা জুটেছে বলে তার অভিযোগ। শুক্রবার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পরে বাঁকুড়া স্টেশনে ঘটনাচক্রে আমাদের জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক তাকে উদ্ধার করেন।”
রঘুনাথপুরের কাদামাদরা গ্রামে হামিদার বাপের বাড়ি। গত বছরের মার্চে স্থানীয় মেটালসহর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এই পড়ুয়াকে নিতুড়িয়ার লছমনপুরের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি লোকমান আনসারির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। তার কথায়, “আমি পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা সে কথা শুনতে চাননি। জোর করে আমার বিয়ে দেওয়া হয়।” তার অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে নানা কারণে তাকে নির্যাতন করা হত। স্বামী বাপের বাড়িতে রেখে যায়। এর পরে বাপের বাড়িতেও ঠিক মতো খেতে-পরতে দেওয়া হত না। উল্টে গঞ্জনা জুটত। তাই শুক্রবার সকালে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। ট্রেনে চেপে চলে আসে বাঁকুড়া স্টেশনে। সেখানে তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় দেখতে পান বাঁকুড়ার জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক নীলিমা দাস চৌধুরী। নীলিমাদেবী বলেন, “মনমরা অবস্থায় মেয়েটিকে দেখেই মনে হয়েছিল ও কোনও সমস্যায় রয়েছে। সব কথা শুনে ওকে রাতে পুরুলিয়ায় আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। শনিবার তাকে বাঁকুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে সব কথা জানাই।”
প্রশাসন থেকে হামিদার দেখাশোনার দায়িত্ব আপাতত ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি-কে দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, “হামিদাকে একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার কাউন্সেলিং করানো হবে। পড়াশোনা করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করা হবে।” খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ায় রওনা দেন হামিদার বাবা হারুন আনসারি ও স্বামী লোকমান। লোকমানের দাবি, “নির্যাতন করার অভিযোগ ঠিক নয়। চিকিৎসা করানোর জন্য হামিদাকে ওর বাপের বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। ওষুধ খাওয়া নিয়ে গোলমাল করে হামিদা বাড়ি থেকে পালিয়েছিল।” হামিদার বাবা এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “হামিদা পালানোর পরে খুব উদ্বেগে কেটেছে। ওকে আগে দেখতে চাই।” হোমে যাওয়ার আগে হামিদা অবশ্য বলেছে, “আমি আর কারও কাছে ফিরতে চাই না।” |