সংস্কৃতি যেখানে যেমন... |
‘বলাকা’র বন্দনাদি |
নৃত্য অনেকের কাছেই তৃপ্তি বা আনন্দের জায়গা। আবার কেরিয়ার মনস্ক বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে তা অতিরিক্ত শংসাপত্র। নৃত্যশিল্পকে ঘিরে মফস্সল অঞ্চলে এখনকার উন্মাদনার চেহারাটা কিন্তু আগে অন্যরকম ছিল। রামপুরহাটের মতো শহরে সেই ১৯৮৫ সালে নাচের স্কুল খুলেছিলেন এক স্কুল শিক্ষিকা। ‘বলাকা’ নামের সেই স্কুল তখন নৃত্যের বিষয়ে এলাকায় আগ্রহ তৈরি করেছিল। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বন্দনা গুহ-র ‘বলাকা’ এখন শুধুই তার অতীত গৌরব নিয়ে উজ্জ্বল। সেই সব দিন কবেই পেরিয়েছে। সময়ের অতিক্রমণে ঔজ্জ্বল্য হারালেও ‘বলাকা’য় তালিম নেওয়া বহু ছাত্রছাত্রীই এখন সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এই ৬৪ বছর বয়সেও থামানো যায়নি ‘বন্দনাদি’কে। এখনও সমান তালে কত্থক, মণিপুরি নৃত্যে দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নেন। ‘বলাকা’র জন্ম হওয়ার পর বন্দনাদেবী ‘শাপমোচন’ ও ‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্য পরিচালনা করে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাঁর পরিচালিত ‘তাসের দেশ’ দেখে প্রয়াত বিশিষ্ট শিল্পী শান্তিদেব ঘোষ প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। শিশু-কিশোরদেরও নিয়ে বেশ কিছু নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেছেন বন্দনাদেবী।
|
আলো-অন্ধকারে |
আর্থিক অনটনে যুবক অবস্থায় যোগ দিয়েছিলেন যাত্রা দলে। প্রায় অনভিজ্ঞ সেই সদ্য যুবক তখন সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ওই যাত্রা দলে আলোর কাজ করতেন। সেদিনের সেই যুবক বিশ্বনাথ বিশ্বাস বর্তমানে সিউড়ির বাসিন্দা। পারিবারিক জন্মভিটে ছিল সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯৩ সালে সিউড়িতে আসার পর বেশ কয়েকটি স্থানীয় নাট্য এবং নৃত্য সংস্থার আলো ও আবহ সঙ্গীত তৈরির কাজে যুক্ত হন। ২০০৮ সালে মিনার্ভা থিয়েটারে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমির উদ্যোগে ‘মঞ্চ ও আলো বিষয়ক’ প্রশিক্ষণ শিবিরেও যোগ দিয়েছেন। সেই শিবিরে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মঞ্চে আলোর জাদুকর কণিষ্ক সেন-এর কাছে। বিশ্বনাথবাবু আলোর কাজ শিখতে সর্বদা উৎসাহী। সেই উৎসাহই আজ তাঁকে এই সম্মানের জায়গায় এনেছে। শুধুমাত্র সিউড়িই নয়, লাভপুরের দু’টি নাট্যসংস্থাতেও বেশ কিছু নাটকে আলোর কাজ করেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০টি নাটকে এবং ১০টি নৃত্যনাট্যে আলোর কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এমন অনেক কাজে নিজেকে মগ্ম করে রাখতে চান বিশ্বনাথবাবু। আলো ও আবহ সঙ্গীতের ভাবনায় মশগুল তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় জীবনানন্দের ‘বোধ’ কবিতার লাইন “আলো-অন্ধকারে যাই মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে!’’
|
লিটল ম্যাগাজিন |
সিউড়ি থেকে দু’টি ষাণ্মাসিক ও দ্বিভাষিক লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। দু’টিই তিন বছরে পদার্পণ করেছে। প্রথমটি লক্ষ্মণচন্দ্র হাঁসদা সম্পাদিত দ্বিভাষিক পত্রিকা ‘জানামাহাসা-জন্মভূমি’। ১/৪ ক্রাউন সাইজের ওই পত্রিকার ‘বাহা সংখ্যা’য় (নববর্ষ সংখ্যা) ১৫ জন আদিবাসী লেখক-লেখিকা প্রবন্ধ ও কবিতা লিখেছেন। শিল্পী তাপস মুখোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদটিও বেশ ভাল। অন্যদিকে, ‘ভূমিজ’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন পার্থসারথী ঘোষ। নানান লেখায় বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ তাদের এ বারের সংখ্যা। তবে এই সংখ্যায় মুদ্রিত হয়েছে প্রয়াত শান্তিনিকেতনের সৌমেন অধিকারীর ‘সাঁওতাল পদাবলী’। এই দুর্মূল্য লেখাচি প্রকাশ করা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু দীর্ঘদিন আগে বই আকারে প্রকাশ পাওয়া সেই পদাবলী আদতে এখানে পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। কিন্তু পত্রিকাতে তার কোনও উল্লেখ দেওয়া নেই।
|
ঝুমুরগানের বই |
সম্প্রতি প্রকাশিত হল মানভুম জেলার বিখ্যাত ঝুমুর গানের রচয়িতা জগৎ কবিরাজের লেখা ১৩২টি ঝুমুর গানের সংকলন। বাঁকুড়ার ছাতনা থেকে জগৎবাবুর ঝুমুর গানের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার হয়েছিল। সেই পাণ্ডুলিপির গান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে ঝুমুর গানের ওই সংকলনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। বাঁকুড়া খ্রিশ্চান কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় জানান, ঝুমুর গান পুরুলিয়া তথা সাবেক মানভূম জেলায় দরবারি সংস্কৃতির মান্যতা পেয়েছিল। এক সময় মানভূমের রাজা ও জমিদারেরা ঝুমুর গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সেই ঝুমুর গানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচয়িতা হলেন মানভূম জেলার জগৎ কবিরাজ। পুঞ্চা থানার লোটো গ্রামে তাঁর বাড়ি ছিল। মানবাজারের পাথরমহড়ার রাজবাড়ির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া তিনি বাঘমুণ্ডি রাজ পরিবারের চিকিৎসকও ছিলেন।
|
ফের ‘পারাবত’ |
ষাটের দশকে বাঁকুড়ায় সাড়া জাগিয়েছিল ‘পারাবত’ পত্রিকা। দীর্ঘদিন পরে সেই ‘পারাবত’ ফের নবপর্যায়ে প্রকাশিত হতে চলেছে। কবি আনন্দ বাগচী শ্রদ্ধার্ঘ্য সংখ্যা হিসেবে নবপর্যায়ের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হবে মে মাসেই। আনন্দবাবু ‘পারাবত’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ওই পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষে অবনী নাগ বলেন, “কবি আনন্দ বাগচী অসুস্থ। আমরা আগামী ১৫ মে মঙ্গলবার কবির জন্মদিনে ওই পত্রিকার উদ্বোধনের উদ্যোগ নিয়েছি।” ওই দিন বিকেল ৫টায় কলকাতার যাদবপুর স্বামী সত্যানন্দ সেবায়তনে প্রকাশিত হবে নবপর্যায় ‘পারাবত’-এর প্রথম সংখ্যাটি। অনুষ্ঠানে কলকাতার পাশাপাশি বাঁকুড়ার কবি-লেখকদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
|
সংবর্ধনা সভা |
|
পুরুলিয়ার জার্নালিস্ট ক্লাবের সংবর্ধনা সভায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। |
রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার কবি, সাহিত্যিক ও প্রাক্তন সাংবাদিকদের সংবর্ধনা দেওয়া হল। আদ্রায় সম্প্রতি পুরুলিয়া জার্নালিস্টস ক্লাব এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ, আদ্রার ডিআরএম অমিত কুমার হালদার, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস, রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রাবন্ধিক বিমলকান্তি ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংবাদিক অনাথবন্ধু মোহান্ত, সাহিত্যিক শীলা সরকার, কবি মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, গায়ক উদয়ন ভট্টার্চাযকে কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মরণোত্তর সম্মান জানানো হয়েছে কবি ও সাহিত্যিক সিরাজুল হককে। সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন এলাকার শিল্পীগোষ্ঠী।
|
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত |
ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাঁকুড়ার সুধাকর সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় বছরভর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সম্প্রতি তাদের ষষ্ঠ নিবেদন হয়ে গেল কেশিয়াকোলে ওই প্রতিষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাঁকুড়ার ধ্রুপদ শিল্পী জয়দেব ঘোষাল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বাসুদেব ঘোষাল জানান, চলতি বছরে তাঁরা ১২টি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। মানুষকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতমুখী করার জন্য এই উদ্যোগ।
|
সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ |
বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লকের ঢেকো রজনীকান্ত হাইস্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান শুরু হবে আগামী ১৮ মে। তিনদিন ধরে চলবে এই অনুষ্ঠান। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক পার্থ চৌধুরি জানান, ওইদিন প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। স্কুল প্রাঙ্গনে গান, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন বহু বিশিষ্টজন।
|
রচনা প্রতিযোগিতা |
পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে সম্প্রতি জ্যোতিরিঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘বিবেকানন্দ ও ভারতের যুব সমাজ’ শীর্ষক জেলা ব্যাপী একটি রচনা প্রতিযোগিতা হয়। রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম তিন সেরার শিরোপা পায় কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ ভগিনী নিবেদিতা বিদ্যাপীঠের পড়ুয়ারা। প্রথম হয় দেবাশিস মণ্ডল, দ্বিতীয় হয় প্রশান্ত কুম্ভকার এবং তৃতীয় স্থান পায় নারায়ণ মাহাতো।
|
বর্ষবরণ |
|
কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। |
বাঁকুড়া পুরসভা রিক্রিয়েশন ক্লাব বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করল। ‘নব আনন্দে জাগো’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি গত রবিবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে হয়। নৃত্যনাট্য ‘কাল মৃগয়া’ ও নাটক ‘গৃহযুদ্ধ’ মঞ্চস্থ হয়। উদ্যোক্তা ক্লাবের সভাপতি তথা বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা জানান, বাঁকুড়া পুরসভার কর্মীদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের বিষ্ণুপুর শাখার উদ্যোগে রবিবার বিষ্ণুপুর কে এম হাই স্কুল মঞ্চে হয়ে গেল নববর্ষ উৎসব। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তির পাশাপাশি ছিল মনোঞ্জ আলোচনাও। উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলোক চক্রবর্তী-সহ বিশিষ্ট জনেরা।
|
সম্প্রতি বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া গুমুট গ্রামে ‘বসন্ত বাহার’ নামে এক সাংগীতিক প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছিল ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী অখণ্ড শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে যোগ দেন শতাধিক প্রবীণ ও নবীন শিল্পী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুর রামশরণ সংগীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়।
|
গান, আবৃত্তি, আলোচনা-সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রতি ইঁদপুরের খট্ট্গ্রাম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার পাঠককে বিদায় সংবর্ধনা জানান হল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শালডিহা কলেজের টিচার ইনচার্জ নির্মল মিশ্র-সহ বিশিষ্ট জন।
|
সম্প্রতি বিষ্ণুপুর থানার প্রকাশঘাট গ্রামে পাঁচ দিনের মিলন মেলা শেষ হল। হরিনাম সংকীর্তনের পাশাপাশি মেলা মঞ্চে ছিল নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও। মেলার আয়োজন করে প্রকাশঘাট ব্যবসায়ী সমিতি। |
|