আজ এনসিটিসি বৈঠক
কেন্দ্রকে ‘সীমারেখা’ মনে করালেন মমতা
জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে আগামিকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলছেন মনমোহন সিংহ এবং পি চিদম্বরম। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তি কাটিয়ে এই সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র চালু করার মতো জায়গায় নেই মনমোহন সরকার।
কেন্দ্রের প্রধান শরিক দলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি)-কে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দিচ্ছে কেন্দ্র। বৈঠকের আগের দিন, আজও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এ দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে মমতা বলেছেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য, সকলেরই নিজস্ব সীমানা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সীমারেখা পেরোতে পারে না।” মমতার আরও অভিযোগ, শুধু মাত্র সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেই এনসিটিসি তৈরির চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এ বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি।
আগামিকালের বৈঠকে শুধু যে মমতাই এনসিটিসি নিয়ে সরব হবেন, তা নয়। তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, জয়ললিতার মতো আঞ্চলিক দলের মুখ্যমন্ত্রীরাও। এঁদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের কার্যত একটি ‘ট্রেড ইউনিয়ন’-ই তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাদ যাবেন না নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরাও। ইউপিএ-সরকারের প্রধান শরিক দলের নেত্রীই যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তখন কোনও ভাবেই সুর নরম করতে রাজি নয় বিজেপি-নেতৃত্বও। বরং এই সুযোগে চিদম্বরমকে যতটা সম্ভব নাকাল করাই বিজেপির উদ্দেশ্য। বিজেপির নেতারা আবার বলছেন, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদেরও এনসিটিসি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তাঁরা দলীয় নির্দেশে মুখ খুলতে পারছেন না।
আগামিকাল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই দলীয় অবস্থান তুলে ধরবেন। তা কী? দলীয় মুখপত্র সন্দেশে-ও ইতিমধ্যেই লেখা হয়েছে, এনসিটিসি তৈরি করতে চাওয়া হয়েছে জাতীয় স্বার্থেই। সন্ত্রাসবাদ দমনে সব রাজ্য মিলিয়ে সুসংহত প্রয়াসের অঙ্গ এটি। শুধু তা-ই নয়, এনসিটিসি-বিরোধিতায় সামিল মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতার’ অভিযোগও আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মাওবাদী হামলা হলে কয়েকটি রাজ্য কেন্দ্রের সাহায্য চায়, কিন্তু কেন্দ্র কিছু করতে গেলেই আবার রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে। সম্প্রতি লোকসভায় জবাবি বক্তৃতায় অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলোকে এ ভাবে কটাক্ষ করেছিলেন চিদম্বরমও।
তবে আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী এবং চিদম্বরম এনসিটিসি মেনে নেওয়ার জন্য সেই রাজ্যগুলির উপরে কতটা চাপ দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন থাকছেই। মনমোহন-সরকার তথা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে সরকারের শরিক, সমর্থক এবং বিরোধী দলের নেতাদের চটানো উচিত হবে না। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ তিনি সরকারেরই প্রধান শরিক দলের নেত্রী। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের বিরোধিতাকে তা-ও ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। মমতার ক্ষেত্রে সেখানেও মুশকিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তির মূল বিষয় ছিল, যে কাউকে গ্রেফতার করা বা তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা এনসিটিসি-কে দেওয়া। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সেখানে রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে এই ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। চাপের মুখে এ বিষয়ে ‘সামান্য’ সুর নরম করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। আগে তাঁর যুক্তি ছিল, এনসিটিসি কাউকে গ্রেফতার করলে বা তল্লাশি চালালে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় সেই ব্যক্তি বা আটক সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো আপৎকালীন পরিস্থিতিতেই একা অভিযান চালাবে কেন্দ্র।
কিন্তু কোনটা ‘আপৎকালীন পরিস্থিতি’, কোনটা নয়, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এনসিটিসি-র স্থায়ী পরিষদে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের সন্ত্রাস দমন বাহিনীর প্রধানদের রাখা হয়েছিল। এখন তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ডিজি-দেরও রাখা হবে। এনসিটিসি অভিযান চালানোর আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ প্রধানকেও ‘যত দূর সম্ভব’ আগেভাগে জানানো হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আপাত ভাবে নিজের অবস্থান লঘু করলেও সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীরা এখনও পর্যন্ত সুর নরম করার কোনও ইঙ্গিত দেননি। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রকে নিজের সীমারেখার মধ্যেই থাকতে হবে। অন্যান্য অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরাও মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এনসিটিসি নিয়ে মমতার এই বিরোধিতা একেবারেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকারের স্বার্থে। এর সঙ্গে রাজনীতি বা কেন্দ্রের উপরে চাপ তৈরির কোনও সম্পর্ক নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.