সিনেমা সমালোচনা...
ট্রেন লেট
ত্তরের দশক। অ্যাংরি ইয়ং ম্যান। অমিতাভ বচ্চন। প্রতিষ্ঠান বিরোধী মারকাটারি সব চরিত্র। একের পর এক হিট ছবি।
২০১২। ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’। অনেকটা যেন সেই রাগী অ্যাকশন হিরো বচ্চনের আদলেই তৈরি। প্রতিষ্ঠান বিরোধী আর এক চরিত্র অনন্ত দাস। তাপস পাল।
ফর্মুলা এক, ফারাক দু’টো। এক, অনন্ত দাস মধ্যবয়সি চশমা-আঁটা সংসারি। আর দুই, পরিচালক এখানে কাল্পনিক নয়, বাস্তব ঘটনার সুত্র নিয়ে সাজাতে চেয়েছেন তাঁর সিনেমা। তবে সব থেকে বড় ফারাক অমিতাভের ছবির মুনশিয়ানার ছিটেফোঁটাও নেই এই ছবিতে।
৮:০৮-এর থিম-- মেরুদণ্ডহীন এক সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ। যে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আমাদের ধাতে নেই। চারদিকে যা হচ্ছে হোক, আমার কিছু না হলেই হল-- এই আপ্তবাক্য জপতে জপতেই জীবন কেটে যায়। মেরুদণ্ডহীনতাকে রোগ হিসেবে মানি না। কিন্তু ‘স্পাইনাল কর্ড খুব খতরনক জিনিস... খট করে মেরুদণ্ডটা হঠাৎ যে দিন সোজা হয়ে যায়’... আর সে দিন আমার-আপনার মতো ন্যাতানো মানুষও হয়ে ওঠে অনন্ত দাস। সমাজের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা আপাত নিরীহ, গা-বাঁচানো স্বার্থপর এক মানুষ।
৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল
তাপস, স্বস্তিকা, রঘুবীর, সোনালি
মেনস্ট্রিম ফর্মুলায় দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ছবি ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’। বারাসতের রাজীব-হত্যা তাঁর ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু সেটাই সব নয়।
এ ছবির আসল আকর্ষণ তাপস পাল। তাঁরই কামব্যাকের ছবি। ‘দাদার কীর্তি’ থেকে ‘গুরুদক্ষিণা’ হয়ে ‘উত্তরা’। তাপসের অভিনয় দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাই প্রত্যাশা ছিল। অনন্ত দাসের চরিত্রে তাঁকে মানিয়েছেও ভারী ভাল। মধ্যবিত্ত, মফস্সল থেকে ৮:০৮-এর বনগাঁ লোকালে ডেইলি প্যাসেঞ্জার। কলকাতায় এক সরকারি অফিসের লোয়ার ডিভিশন কেরানি। বাড়িতে খিটখিটে বউ, বৃদ্ধ মৌন আধ-পাগল বাবা, একরত্তি মেয়ে। টালির চালা, পলেস্তারা খসা ঘর, টিমটিমে হলুদ বাল্ব জ্বলা সংসার। চশমা পরা, মোটা গোঁফে, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঝোলানো শার্ট, রংচটা সস্তা চামড়ার মানিব্যাগ, হাতে ছাতা, ছোট অফিস-ব্যাগে ভীষণ সাধারণ সে। ট্রেনে কোনও মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ দেখেও চোখ সরিয়ে নিতে জানা এক মানুষ। তাপসের এই অনন্ত দাস আমাদের খুব চেনা। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনে রোজ আনাগোনা করা মফস্সলি মানুষের ভিড়ে জাস্ট আর একটা মুখ।
এই অনন্তই একদিন দেখে ফেলে বারাসতের রাজীব-হত্যা। দিদি রিঙ্কুর সঙ্গে দুর্বৃত্তদের অশালীন আচরণ।
রিঙ্কুু এখানে রিনা। রাজীব এখানে সত্যেন। খুনি এক রাজনৈতিক নেতার ছেলে। অনন্ত ভয়ে মুখ খোলে না পুলিশের কাছে।
কিন্তু এক দিন তার ‘খট হয়ে যায়’। মানে নুয়ে পড়া বাঁকা শিরদাঁড়াটা হঠাৎ সোজা হয়ে যায়। অসুস্থ ছেলে কোলে এক বাবা একাই যান ট্রেন অবরোধ তুলতে। তাঁকে দেখে কী যেন একটা হয়ে যায় অনন্তর। অবরোধকারীদের বাঁশপেটা করে সরিয়ে দেয় সে।
ব্যাস। সাতেপাঁচে না থাকা মধ্যবিত্ত অনন্ত নিমেষে হয়ে যায় প্রতিবাদী, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বিদ্রোহী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে একা রুখে দাঁড়ানো পুলিশ ও রাষ্ট্রের বিরাগভাজন। পাশে পেয়ে যায় এক রিক্সাওয়ালা আর নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিককে। পুলিশের সহায়তা না পেয়ে সে একাই শাস্তি দেয় সত্যেন হত্যার মূল অপরাধীকে।
সক্রিয় রাজনীতিতে থেকেও এ রকম প্রতিষ্ঠানবিরোধী, প্রতিবাদী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জনপ্রতিনিধি তাপসকে অভিনন্দন। কিন্তু দর্শকের প্রত্যাশা তিনি মেটাতে পারলেন না। দোষ তাঁর নয়। পরিচালকের অপূর্ণতা আর পদ্মনাভ দাশগুপ্তের দুর্বল চিত্রনাট্যের। যেমন, বামুনগাছির ওই ঘটনা দেখে মেরুদণ্ডহীন অনন্তর প্রতিবাদী অনন্তে পরিবর্তন বড্ড আচমকা। এত বড় পরিবর্তন মূহূর্তে আসে? এলেও কেন? কী ভাবে? তলিয়ে দেখার চেষ্টাই করেনি এই ছবি। তাপস কিন্তু আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন।
তাতে কী! দুর্বল পরিচালনা আর চিত্রনাট্য তাঁর সব চেষ্টা মাটি করে দিল যে!
‘দামু’র পরে আবার বাংলা সিনেমায় প্রত্যাবর্তন রঘুবীর যাদবের, রিক্সাওয়ালার চরিত্রে। কিন্তু তাঁকে সে ভাবে পরিচালক ব্যবহার করলেন কই? ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সুপারহিট কদলীবালা এখানে নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক শ্রেয়সী। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে এই ছবিতেও বেশ লাগে। কিন্তু তাঁকেও সে ভাবে কাজে লাগালেন কই পরিচালক?
এ ছবির চমক গায়ক শমীক সিংহ। রাজীব বা সত্যেন হত্যার মূল অপরাধী রাজুকে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শমীক। তন্ময় বসুর সঙ্গীত পরিচালনাও উজ্জ্বল। সব মিলিয়ে ছোটখাটো কয়েকটা মুহূর্ত আর কয়েক ঝলক অভিনয় ছাড়া এই ছবি থেকে প্রাপ্তি প্রায় শূন্য। ভয় হয় বাংলা ছবির এই মারকাটারি বাজারে এ রকম কিছু ছবি আবার দর্শককে হলবিমুখ না করে!
অগত্যা শেষ অ্যানাউসমেন্ট: ‘৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল’ অনেক লেট। পৌঁছোতে পারল না দর্শকদের মনের স্টেশনে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.