সোমবার মহাকরণের সেন্ট্রাল গেট দিয়ে মন্ত্রীরাও ঢুকতে পারবেন না! সকাল ন’টার পরে শুধু মুখ্যমন্ত্রী ওই পথ দিয়ে নিজের অফিসে যেতে পারবেন।
মার্কিন বিদেশ-সচিব হিলারি ক্লিন্টনের মহাকরণ সফর উপলক্ষে সে দেশের নিরাপত্তা সংস্থা ‘ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিস’-এর সুপারিশ মেনে শুক্রবার এই মর্মে নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। যা লিখিত ভাবে সব মন্ত্রী ও আমলাকে জানিয়ে দিয়েছেন
রাজ্যের পূর্ত-সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। মন্ত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে, পরশু দিন তাঁরা যেন ৬ নম্বর গেট (রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে) দিয়ে মহাকরণে ঢোকেন।
একই সঙ্গে মহাকরণের দোতলা ও তিনতলার সংরক্ষিত এলাকায় যাঁদের অফিস, তাঁদেরও সে দিন বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে ঢুকতে হবে। সচিবদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন নিজের দফতরের কর্মীদের ওই দিন ‘সকাল সকাল’ অফিসে চলে আসতে অনুরোধ করেন। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর: রবিবার রাত থেকেই মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন মহাকরণে ঘাঁটি গাড়বেন। সোমবার সকালে মহাকরণের সার্বিক নিরাপত্তার ভার চলে যাবে তাঁদের হাতে। |
এ দিন দুপুর থেকে মার্কিন কনসাল জেনারেলের প্রতিনিধিরা রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। মহাকরণের ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি তাঁরা জানতে চেয়েছেন। এমনকী, গত ১১ এপ্রিলের ভূমিকম্পে মহাকরণের কোনও ক্ষতি হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজ নিয়েছেন। প্রশাসনিক-সূত্রের খবর, ভবনটির বয়স দু’শো পেরিয়ে গিয়েছে শুনে আশ্বস্তই হয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের খবর, মার্কিন সিকিওরিটি সার্ভিসের লোকজন মহাকরণের সংরক্ষিত এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। আর তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে অস্থায়ী ভাবে চারটি ইউপিএস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক বিদ্যুৎ-কর্তার কথায়, “আচমকা ‘পাওয়ার কাট’ হলে দশ সেকেন্ডের মধ্যে লাইন ফিরিয়ে আনার নতুন ব্যবস্থা মহাকরণে চালু হয়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতর সোমবার বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশ-সচিবের কথা হবে কোথায়?
মোটামুটি স্থির হয়েছে, দোতলার কনফারেন্স রুমেই মমতা-হিলারি বৈঠক হবে। এবং হিলারি সেখানে যাবেন সিঁড়ি বেয়ে, লিফ্টে চড়ে নয়। কনফারেন্স রুমের আসবাবপত্র তাই তড়িঘড়ি বদলে ফেলা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে আলোর তীব্রতা। ওই ঘরের ‘স্মোক অ্যালার্ম’ কতটা কার্যকর, মার্কিন প্রতিনিধিরা এ দিন তা-ও খতিয়ে দেখেন। সোমবার দমকলের দু’টো ইঞ্জিন মজুত থাকবে মহাকরণে। থাকবে ডাক্তার-নার্সের দল। কলকাতা পুলিশ-সূত্রের খবর, মার্কিন বিদেশ-সচিবের কনভয়ে রাজ্যের তরফে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হলেও তাঁর নিজস্ব চিকিৎসকদল থাকবে।
এ দিকে মহাকরণের খবর, বিস্তর টানাপোড়েনের পরে হিলারিকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনায় অবশেষে রাজি হয়েছে মার্কিন সিকিওরিটি সার্ভিস। যদিও শর্ত, তারা প্রথমে ফুল পরীক্ষা করে রাজ্যের আধিকারিকদের হাতে তুলে দেবে। আপাতত ঠিক আছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হাতে আঁকা একটি ছবি হিলারিকে উপহার দেবেন। দিতে পারেন ডোকরা ও শোলা-শিল্পের নমুনাও।
হিলারির চূড়ান্ত সফরসূচি অবশ্য এখনও পুলিশ-প্রশাসন হাতে পায়নি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, কাল রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ মার্কিন বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন তিনি। সেখান থেকে যাবেন আলিপুরের এক পাঁচতারা হোটেলে। পুলিশ-সূত্রের খবর: মার্কিন বিদেশ-সচিব ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য ওই হোটেলের তিনতলায় একশোটি ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের কাছে এ দিন আসা বার্তা অনুযায়ী, রবিবার হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হিলারি বিকেল চারটে নাগাদ যাবেন হো চি মিন সরণির ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেশন-এ। সেখানে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। মিনিট কুড়ি তাঁর ওখানে থাকার কথা। তার পরে হোটেলে ফেরা। সোমবার তাঁর মহাকরণে যাওয়ার কথা বেলা ১১টা নাগাদ।
বৃহস্পতিবারই হিলারির সম্ভাব্য যাত্রাপথ এক দফা ঘুরে দেখেছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স)। আর এ দিন ওই রাস্তায় হয়েছে কনভয় রিহার্সাল। |