|
|
|
|
সায় কেন্দ্রের |
ইনফোসিসকে রাখতে
বিকল্প প্রস্তাব মমতার
|
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
ইনফোসিসের লগ্নি রাজ্যছাড়া হওয়া রুখতে এ বার নিজেই আসরে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (এসইজেড) তকমা না-দিয়ে বরং বিকল্প পথে হেঁটে ওই বিনিয়োগ ধরে রাখতে তৎপর হলেন তিনি। এ নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে কিনা, তা বলবে সময়ই। তবে শুক্রবার তাঁর প্রস্তাবে শর্মা নীতিগত ভাবে সায় দেওয়ায়, কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হল ইনফোসিস নিয়ে জটিলতা কাটার সম্ভাবনা।
এ দিন দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর বাসভবনে আসেন শর্মা। সেখানেই তাঁর কাছে বিকল্প প্রস্তাবটি তুলে ধরেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে ইনফোসিসের এই প্রকল্পকে সফ্টওয়্যার পার্ক হিসেবে ঘোষণা করুক কেন্দ্র। তার পর এসইজেডের প্রাপ্য যাবতীয় সুবিধা দেওয়া হোক তাকে। যাতে ইনফোসিসের সঙ্গে নতুন করে আর চুক্তি করতে না হয় রাজ্য সরকারকে। এটি করা সম্ভব হলে ইনফোসিসের তরফ থেকে লগ্নি করতে যেমন কোনও অসুবিধা থাকবে না, তেমনই এসইজেড নিয়ে অবস্থান বদলাতে হবে না মমতার সরকারকেও।
শর্মা জানান, মমতার এই বিকল্প প্রস্তাবে কোনও নীতিগত আপত্তি নেই তাঁর। ইনফোসিসকে এ ভাবে আর্থিক ছাড় দেওয়ার ওই প্রস্তাব মেনে নিতেও তাঁর সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়। বিষয়টি যাতে স্রেফ মৌখিক আলোচনাতেই থেমে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে শর্মার উপস্থিতিতেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন মমতা। সরাসরি কথা বলিয়ে দেন দু’জনের মধ্যে। ঠিক হয়, মুখ্যমন্ত্রীর বিকল্প প্রস্তাব এ বার লিখিত চিঠি হিসেবে কেন্দ্রের কাছে পেশ করবেন পার্থবাবু। তার পর তাতে কেন্দ্র সরকারি ভাবে সম্মতি জানাবে বলে আশা করছে রাজ্য।
নীতিগত ভাবে রাজ্যে কোনও প্রকল্পকে এসইজেডের তকমা দেওয়ার বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কারণ, এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘোষিত অবস্থানই হল, বিশেষ আর্থিক অঞ্চল আসলে পরিণত হয় বিশেষ আর্থিক জমিদারিতে। কেড়ে নেওয়া হয় হাজার হাজার একর জমি। ফলে তার কোপ পড়ে গরিব ও ক্ষুদ্র কৃষকদের উপরে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ কথা বলা হয়েছিল দলের ইস্তেহারেই। কিন্তু ইনফোসিসের যুক্তি, এসইজেডের তকমা না-পেলে কর ছাড়-সহ বিভিন্ন আর্থিক সুযোগসুবিধা মিলবে না। তাই সে ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে রাজ্যে লগ্নি করা কঠিন। তা ছাড়া, এই প্রকল্পের জন্য তারা জমি নিচ্ছে মাত্র ৫০ একর। এবং তা ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে তাদের হাতে।
এই পরিস্থিতিতে ইনফোসিসের লগ্নি রাজ্য থেকে চলে যাক, তা কোনও ভাবেই চান না মুখ্যমন্ত্রী। কারণ তিনি বিলক্ষণ জানেন যে, ওই প্রকল্পের হাত ধরে যে শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে তা-ই নয়। কিছুটা হলেও বদলাবে শিল্পায়ন নিয়ে রাজ্যের ভাবমূর্তি। কিন্তু তা বলে ওই বিনিয়োগ ধরে রাখতে ঘোষিত অবস্থান বদলে ফেলারও বিরোধী তিনি। তাই গোড়া থেকেই বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করছে তাঁর সরকার। যাতে লগ্নি রাজ্যছাড়া না হয়, অথচ এসইজেডের তকমা দেওয়ার দায়ও না বর্তায় তাদের ঘাড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে আজকের এই বৈঠকের পর রাজ্য সরকার মনে করছে, কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি থেকে না-সরলে, রাজ্যে থাকতে চলেছে ইনফোসিসের লগ্নি। অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এই গুরুত্বপূর্ণ লগ্নি ধরে রাখার সেই সম্ভাবনা আজ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। |
|
|
|
|
|