বার্তা প্রণবের
বিশ্ব অর্থনীতির আঁধার কাটাতে পারে এশিয়াই
উরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার আর্থিক সঙ্কটের অন্ধকার কাটাতে আলো দেখাতে পারে এশিয়াই। হয়ে উঠতে পারে দিক্ হারানো বিশ্ব অর্থনীতির বাতিঘর। শুক্রবার এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) বার্ষিক সভায় যোগ দিতে এসে এমনই বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, টাকার দাম দ্রুত পড়তে থাকা কিংবা আর্থিক বৃদ্ধির হার থমকে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলি মিটিয়ে অদূর ভবিষ্যতেই ছন্দে ফিরবে ভারতীয় অর্থনীতি।
দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাইসিনা হিলসের পরবর্তী বাসিন্দা তিনিই হবেন কিনা, এ নিয়ে জল্পনার মধ্যে এ দিনই ফিলিপিন্সের এই দ্বীপ শহরে পা রেখেছেন প্রণববাবু। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানান, “বিশ্ব অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষমতা ধরে এশিয়া। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এশিয়াই চালকের আসনে থাকবে।”
এক দিকে, ইউরোপীয় দেশগুলিতে ক্রমশ ঘোরালো হওয়া আর্থিক সঙ্কট। অন্য দিকে, বিশ্ব বাজারে তেলের চড়া দাম। এই দু’য়ের জাঁতাকলে নাভিশ্বাস বিশ্ব অর্থনীতির। এই পরিস্থিতিতে উন্নত দুনিয়াকে ‘উদ্ধারের’ প্রশ্নে এশিয়ার দেশগুলিকে আরও নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসার আবেদন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর দাবি, সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকা, ইউরোপ-সহ পশ্চিমী দুনিয়া অর্থনীতি যখন প্রায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে, তখন বাতিঘরের ভূমিকায় থাকতে পেরেছে এশিয়া। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
কিন্তু তা করতে যে সবার আগে দেশের অর্থনীতির ভিত পোক্ত থাকা জরুরি, তা বিলক্ষণ জানেন প্রণববাবু। সেই কারণেই এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন চিন, জাপানের মতো কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই এডিবি-র সহায়তায় ভারতে তৈরি হতে চলেছে একটি নতুন ফান্ড। যার মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলার ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া। অর্থাৎ, কোনও কারণে বন্ড ছাড়ার পর সংস্থা ক্ষতির সামনে পড়লে, তার পাশে দাঁড়াবে কেন্দ্র। ফলে বন্ড কেনার ক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারবেন ক্রেতারাও। ফান্ড তৈরির সব খুঁটিনাটি এখনও ঠিক না-হলেও, এডিবি-র শীর্ষ কর্তারা বিষয়টিতে নীতিগত ভাবে রাজি হয়েছেন বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
পশ্চিমী দুনিয়ায় চাহিদায় ঘাটতির কারণে ভারতের রফতানি যে মার খাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জানিয়েছেন, ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের ছায়া পড়ছে ভারতের উপরেও। কিন্তু একই সঙ্গে এ দিনের বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস, “বিশ্ব অর্থনীতির এমন টালমাটাল দশা এবং যাবতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে ৭ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে ভারত। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লাগাতার লড়াই করেও অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হয়েছে সকলের জন্য উন্নয়নের (ইনক্লুসিভ গ্রোথ) বিষয়টিতে।” ভারতের জাতীয় আয়ের বড় অংশই ঘরোয়া বাজারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন তিনি। তাঁর দাবি, আগামী আর্থিক বছরেই ৮-১০ শতাংশ বৃদ্ধির সড়কে পৌঁছে যাবে দেশীয় অর্থনীতি।
তবে আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতির দুনিয়ায় একা ঘুরে দাঁড়ানো যে কোনও দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়, তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আর সেই কারণেই তিনি মনে করেন, ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট মিটলে আখেরে লাভবান হবে উন্নয়নশীল দুনিয়াও। আগামীকালই এডিবি-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন প্রণববাবু। আগামী বছর এই ব্যাঙ্কের বার্ষিক বৈঠকও হবে নয়াদিল্লিতে। তার আগে সকলে সম্মিলিত ভাবে কী করে বিশ্ব অর্থনীতির লেখচিত্রকে ঊর্ধ্বগামী ও সুস্থির করা যায়, তা ভেবে দেখতে আজ প্রতিটি দেশকেই অনুরোধ করেছে ভারত। এ নিয়ে চিনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রণববাবু। পরে জানিয়েছেন, “চিনের ঘরে বিপুল পুঁজি মজুত রয়েছে।” ইঙ্গিত দিয়েছেন, ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থিক সঙ্কটে জেরবার উন্নত দুনিয়াকে পুঁজি জুগিয়ে সহায়তা দানের ক্ষেত্রেও আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বেজিংয়ের। তবে এ বিষয়ে আগের মতোই চিনের তরফ থেকে এ দিনও তেমন সাড়া মেলেনি।
বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বতি করতে অন্যান্য এশীয় দেশগুলিকে সকলের জন্য উন্নয়ন বা শিক্ষার মতো সামাজিক বিষয়গুলিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জোর দিতে বলেছেন দক্ষ কর্মীর জোগান বাড়ানো এবং উন্নততর পরিকাঠামো নির্মাণের উপর। তাঁর মতে, অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য শুধু পশ্চিমী দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ। এখন সময় বরং ঘরোয়া অর্থনীতির ভিত আর কাঠামো পোক্ত করায় মন দেওয়ার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.