ঝড়ে তছনছ বহু গ্রাম
বাড়ির চাল উড়ে গাছের মাথায়, ধসল ঘর
পাঁচ দিন পরে মেয়ের বিয়ে। নতুন জামাকাপড় থেকে বরযাত্রী আপ্যায়নের জিনিসপত্র, প্রায় সবই কেনা হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের আয়োজনও প্রায় শেষের পথে। সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল কয়েক মিনিটে। মাথায় হাত কাটোয়ার চন্দ্রকোটা গ্রামের গঞ্জিরা বিবির।
শুধু গঞ্জিরা বিবি নন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ঝড়ে কাটোয়া কালনা মহকুমার দু’শোরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ির চাল উধাও। গাছ উপড়ে পড়েছে ঘরের উপরে। টিনের চাল আটকে রয়েছে গাছের মাথায়। মাটিতে মিশে গিয়েছে কাঁচা বাড়ি। মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী কাটোয়া ব্লকের নানা গ্রামে শুক্রবার সকালে দেখা গিয়েছে এমনই সব দৃশ্য। ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানেরও।
কাটোয়ার চন্দ্রকোটা গ্রামে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর, গঙ্গানন্দপুর, ছোটকোবলা, বড়কোবলা, জালুইডাঙা, জ্বালাহাটি, দক্ষিণবাটি, কালীতলা -সহ বেশ কিছু গ্রামে মিনিট কুড়ির ঝড়ে নষ্ট হয়েছে বহু বাড়ি। কোথাও গাছ ভেঙে পড়ে ফাটল ধরেছে বাড়ির দেওয়ালে, কারও বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে, ধসে পড়েছে মাটির দেওয়াল। বিদ্যানগর গ্রামে গয়ারামদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড -ডে মিল রান্নার ঘরে ছিল প্রায় ৪০ ফুটের একটি টিনের ছাউনি। ঝড়ে তা উড়ে গিয়ে পড়েছে প্রায় দু’শো ফুট দূরে একটি গাছের উপরে। স্কুলের পাশেই বাড়ি মধুমালা বাগের। তিনি বলেন, “ঝড়ের সময়ে জানলা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি, ওই টিনের চালাটা প্রায় ত্রিশ ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ওই দৃশ্য দেখে ভয়ে কাঁপতে শুরু করি।” দু’বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে বিদ্যানগর ষষ্ঠীতলার বধূ পূর্ণিমা দেবনাথ বলছিলেন, “মাথার উপর থেকে টিনের চাল উড়ে গেল। চোখের সামনে ভেঙে পড়ল বড় গাছ। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কোনও রকমে মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।”
একই রকম পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে কাটোয়া ব্লকের শ্রীখণ্ড, দেবকুণ্ডু, চন্দ্রকোটা গ্রাম সুদপুর পঞ্চায়েতের নানা এলাকায়। মঙ্গলকোটের কৈচর পঞ্চায়েত এলাকাতেও বেশ কিছু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের যজ্ঞেশ্বরডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচিল ভেঙে গিয়েছে। শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে ব্লক অফিসে পাঠানো হয়েছে।”
পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরে ছবি দু’টি তুলেছেন কেদারনাথ ভট্টাচার্য।
চন্দ্রকোটা গ্রামের গঞ্জিরা বিবি বলেন, “বহু কষ্ট করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি। সব জিনিসপত্র তছনছ হয়ে গেল। আবার কী ভাবে সব জোগাড় করব জানি না।” এ দিন সকালে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, নতুন জামাকাপড় পড়ে রয়েছে মাটিতে। আশপাশে গড়াচ্ছে সব্জি। শ্রীখণ্ড গ্রামের সুকুর শেখ বলেন, “ঝড়ের সময় বাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ চাল উড়ে যাওয়ায় প্রাণ ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার এই ঝড়ে বেশ কিছু রাস্তায় গাছ পনে যাওয়ায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। অনেক জায়গায় ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটিও। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অনেক গ্রাম বিদ্যুৎহীন ছিল। পূর্বস্থলীতে ঝড়ের সময়ে চাল ভেঙে পড়ে আহত হন চার জন। পূর্বস্থলী ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এলাকার মোট ১৩৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭৯টি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ হিসেবে ত্রিপল, চাল জামাকাপড় বিলি করা হয়েছে।
বাড়ি -ঘরের পাশাপাশি ঝড় -বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। বহু জমিতে বোরো ধানের সারি লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। পূর্বস্থলীতে পেয়ারা, কলা আম চাষেও ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ মল্লিক জানান, ধান, কলা পেয়ারা মিলিয়ে প্রায় তিনশো একর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতর জানায়, জমিতে থাকা ধান কেটে জমিতেই ফেলে রাখা ধানের ক্ষতি হতে পারে। কতটা এলাকায় ক্ষতি হতে পারে, তা হিসেব করে দেখা হচ্ছে বলে কৃষি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.