‘রেফার’ করানোর জেরে এক প্রসূতিকে ১৪ ঘণ্টা ধরে হয়রানির ঘটনায় ফের এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করার দাবি উঠল রায়গঞ্জে। দ্রুত হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে না কেন সেই প্রশ্নে উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। অথচ রাজনৈতিক স্বার্থে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না। দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমি অধিগ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের নির্দেশে খুব শীঘ্রই কংগ্রেস জেলাজুড়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এতে সামিল সিপিএমও। একই দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নামার কথা ঘোষণা করেছে সকলেই। শুক্রবার দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপারকে প্রায় দুঘন্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফআই। সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুরজিৎ কর্মকার বলেন হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সরঞ্জামের অভাবে পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। এক প্রসূতিকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করায় বিনা চিকিৎসায় ওই প্রসূতিকে প্রায় ১৪ ঘন্টা কাটাতে হয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুপারের অফিস অচল করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা জানিয়ে খুব শীঘ্রই সংগঠনের তরফে জেলাশাসকের কাছে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান সংগঠনের অভিযোগ ও দাবি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বস্তুত, এইমসের ঘাঁচে হাসপাতাল গনার দেরি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। কারণ, ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার রায়গঞ্জে ৮২৩ কোটি টাকা খরচে ১০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচের একটি হাসপাতাল গড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে জমি দিতে হবে বলেও কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন এরপর রায়গঞ্জের পানিশালায় ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করে। ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করে সবুজ সঙ্কেত দেয়। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ তৎকালীন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রকে চিঠি পাঠিয়ে হাসপাতাল তৈরির জন্য রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ করেন। এর পরে ওই বছরেরই ৪ এপ্রিল রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নির্দেশে উত্তর দিনাজপুরের জেলাপ্রশাসনের তরফে প্রস্তাবিত জমির নকশা ও বিবরণ রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থমকে যায়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “সরকার বদল হতেই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বামফ্রন্টের আমলে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমানে রাজ্যের শাসক দলের দুই জোট শরিকের কাজিয়ার জেরে সেই প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের দাবিতে জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দার গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ দাবি করেন, জনপ্রতিনিধিরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমণ্বয় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে। তাঁর দাবি, “এখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়েছি।” |