মাটির মানুষ
লাল দইয়ের খ্যাতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন মনোরঞ্জন
বদ্বীপ মানেই শ্রীচৈতন্য। তার পরেই নবদ্বীপের খ্যাতি নানা কুটিরশিল্পে। তবে আরেকটিতেও খ্যাতি আছে প্রাচীন এই জনপদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে লাল দই-এর। নবদ্বীপের এই খাদ্যবস্তুটির বিপণনের মূল জায়গা অবশ্য বর্ধমানের কালনা। সেখান থেকেই লাই দইয়ের অবাধ গতি মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমানের পাশে বীরভূমের কিছু অংশে। নবদ্বীপের লাল দইয়ের কারিগরদের কাছেই জানা গেল এই তথ্য।
কপালিপাড়ার একজন কারিগর বলে দিলেন সোজা পোড়াঘাট যেতে। ওখানে মনোরঞ্জন ঘোষ অন্যতম সেরা কারিগর। লাল দইয়ের সঙ্গে অবশ্য ‘অমৃত্তি’ তথা অমৃতি-র খ্যাতিও আছে। মুগ ডালের লেইয়ের ভাজা মিষ্টি। জিলিপির বড়দা। প্যাঁচের ভিতরেই অসংখ্য প্যাঁচ। নয়নতারা স্ট্যান্ড রোডে পোড়ামা ঘাটের মনোরঞ্জন ঘোষের কাছে পৌঁছে মনে হল লাল দইয়ের সমুদ্র। নানা আকারের মাটির পাত্রে দই পাতা হয়ে গিয়েছে। তা সাজানো রয়েছে মরা আঁচের বিশাল উনুনের চার পাশে। পরতে পরতে চটের পোশাক। ভোর হলেই এই সমস্ত দই ছুটবে লোকাল ট্রেন ধরে, বাঁকে করে নানা স্টেশনে।
“আমাদের আদি দেশ ঢাকা জেলার নাসোন্দি-বাবুরহাট। দাঙ্গার সময় দেশছাড়া। সকলের সঙ্গে চলে আসি আমি, তখন বয়স পাঁচ। পনেরো বছর বয়সে এই কাজ শুরু করেছিনু। এখন বয়স ৬০ ছুঁয়েছে।” জানালেন লাল দইয়ের জাদুকর মনোরঞ্জন ঘোষ। জানা গেল, মনোরঞ্জনের কারখানায় লাল দইয়ের জন্য প্রতিদিন দুধ লাগে দেড় থেকে দু’ কুইন্টাল। বিয়ে, উৎসব, পালা-পরবে দুধের পরিমাণ আরও বাড়ে। অবাক হওয়ারই কথা। আরও বিস্ময়ের, নবদ্বীপে মোট দইয়ের উৎপাদনের জন্য লাগে দৈনিক পাঁচ কুইন্টাল দই।
আপনাদের ঘরের মেঝেতে তো কয়েকটা পাত্রে সাদা দইও দেখছি।
“সামান্য কিছু চাহিদা মেটাতে তৈরি করতেই হয়। না হলে আমরা পুরোটাই লাল দইয়ের কারিগর। আমার দু’ছেলেও এই কাজে আছে।” কথা বলতে বলতে মনোরঞ্জন দুই পুত্র-সহ ঘুরিয়ে দেখালেন দইয়ের কারখানা, উনুন ইত্যাদি। ঘুরতে ঘুরতেই জানা গেল লাই দই তৈরির ঠিকুজি। দই তৈরিতে কাঠ ও কয়লা, দু’ধরনের জ্বালানিই লাগে। জ্বালের প্রথম ‘ফুট’ হতে সময় লাগবে দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা। কাঠের জ্বালে। পরের পর্ব কয়লার আঁচে। সাদা দইয়ের ক্ষেত্রে দুধ ফুটিয়ে গাঢ় করা হয় যে সময়ে, তার চেয়ে বেশি সময় ফোটাতে হয় লাল দই তৈরি করার জন্যে। অর্থাৎ, লাল দইয়ের জন্য দুধের ঘনত্ব বেশি। দুধ তৈরি হয়ে গেলে নানা মাপের মাটির পাত্রে ওই দুধ দেওয়া হয় এবং তা থেকেই হয় দই। বাজারের চাহিদা অনুসারে পাত্রের মাপও নানা রকমের। “আমার তৈরি দই যায় কালনার পনেরোটা দোকানে। এক সময় নবদ্বীপের এই দই যেত গৌহাটি, শিলিগুড়ি, কুচবিহার ও বাংলাদেশেও। এখন তো সব জায়গাতেই কারিগর তৈরি হয়ে গেছে। নবদ্বীপের লাল দইয়ের খ্যাতিমান কারিগরের নাম হল হরি ঘোষ ও রামকৃষ্ণ ঘোষ। আমরা নবদ্বীপে এখন পঁচিশ ঘর এই দই করে থাকি।” কথা শেষ করলেন নবদ্বীপের লাল দইয়ের ইতিহাসের সঙ্গে আদ্যপান্ত জড়িয়ে যাওয়া মনোরঞ্জন ঘোষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.